পরিবারের সায়ে মোটরসাইকেলে আসক্ত ছিল আসিফ
মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই মোটরসাইকেল চালাতো আসিফ। ১২ বছর বয়সে বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। ভর্তির শুরু থেকেই স্কুলে বাবার মোটর সাইকেল নিয়ে আসতো আসিফ।
বিষয়টি শ্রেণি শিক্ষক পরে প্রধান শিক্ষকের নজরে আসলে তার পরিবারকে জানানো হয়। একেতো আইন ভঙ্গ তারপর স্কুলের পরিবেশের কথা চিন্তা করে মোটরসাইকেল চালাতে বাধা দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মোকসেদুর রহমান।
কিন্তু স্কুল শিক্ষকদের শত বাধা ভেঙ্গে স্কুলের পাশে একটি বাড়িতে মোটর সাইকেল রেখে স্কুলে আসতো আসিফ। এতে নাকি তার পরিবারের সায় ছিল। যে কারণে আসিফের মোটর সাইকেল চালানো থেকে ফেরানো যায়নি।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের বনগ্রাম-সমেশপুর সড়কে স্কুলের সামনেই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয় আসিফ। এ সময় তার মোটর সাইকেলে থাকা ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র বাবু নিহত হয়। ওই ঘটনায় আহত অপর এক ছাত্র ইয়ামিন সামান্য আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান।
বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র কৈজুরি ইউনিয়নের সমেশপুর গ্রামের ফারুখ শেখের ছেলে বাবু মোল্লা (১২) ও একই গ্রামের মৃত আব্দুর সরদারের ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আসিফ হোসেন (১৩)। আসিফ এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড়। এ ঘটনায় আহত মোটরসাইকেলের আরেক আরোহী সমেশপুরের আজিজুল মোল্লার ছেলে ইয়ামিন মোল্লা (১২)।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে স্কুল মাঠে জানাজা শেষে তাদের সমেশপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর সদর আসনের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ ফরিদপুরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। এসময় সাংসদ ওই স্কুল ছাত্র পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এবং স্কুল পড়ুয়া ছেলেদের বাবা-মা যেন মোটরসাইকেল কিনে না দেয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্র নিহতের ঘটনায় স্কুলের প্রধান মো. মোকসেদুর রহমান জানান, যখন শিশু আসিফ স্কুলে মোটর সাইকেল নিয়ে আসতো আমি ওর মাকে ডেকে নিষেধ করেছি। কিন্তু কাজ না হওয়ায় নিরুৎসাহিত করতে একপর্যায়ে স্কুল ক্যাম্পাসে যেন মোটর সাইকেল রাখতে না পারে তাতেও বাধা দিয়েছি।
তিনি বলেন, একেতো শিশু তারপর তিনজন নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিল তারা। কোন ভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না। দুঃখ হচ্ছে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও কথা শুনলো না। কথা শুনলে হয়তো আমাদের এমন পরিস্থিতি দেখতে হতো না।
এই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে নিশ্চিত করে থানার উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম জানান, ১৮ বছরের আগে চালকের লাইসেন্স পাওয়া যায় না। সেখানে ১৩ বছরের শিশু তিনজনকে নিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘাতক ট্রাকের চালক পলাতক রয়েছে।
ফরিদপুরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তুহিন লস্কর এই দুর্ঘটনার বিষয়ে বলেন, আইন ভাঙার প্রতিযোগিতা আমাদের অধিকাংশ সময় বিপদে ফেলে। যদি সড়কে আইন মানা হতো তবে এভাবে এত প্রাণ অকালে চলে যেতো না। আইনের মানার প্রবণতা যত বাড়বে তত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার হাত থেকে আমরা রেহাই পাবো।