‘বাপ-দাদার পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই’

  • জুয়েল রানা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঘানি শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঘানি শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঘানি শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। সাধারণত কলুর ঘানিতে চোখে মালোই অথবা মোটা কাপড়ের পর্দা দেয়া গরু ঘুরেই চলে, ঘানি ঘুরে সরিষা ভাঙে আর ফোঁটায় ফোঁটায় তেল জমা হয় পাত্রে। এভাবে তৈরি হতো খাঁটি তেল। এক লিটার তেল তৈরিতে লাগতো দীর্ঘ সময়।

তবে কালের আবর্তে তথা অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের যুগে যান্ত্রিক ঘানির প্রসারে ফলে সনাতন পদ্ধতির ওই ঘানিশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। আবহমান কালের গরুর ঘানি টানার দৃশ্য এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। ঘানির খাঁটি সরিষার তেলের স্থান মেশিনে প্রস্তুত তেল দখল করে নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। যারা আছেন তারা বাপ-দাদার এ পেশাকে কোনো রকম আকঁড়ে ধরে রেখেছেন।

ঘানি ঘুরে সরিষা ভাঙে আর ফোঁটায় ফোঁটায় তেল জমা হয় পাত্রে

তাদেরই একজন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের পাটেশ্বরী বাজার এলাকার ক্লিনিক পাড়া গ্রামের কামরুল ইসলাম (৪২)।

বিজ্ঞাপন

কথা হলো কামরুলের সঙ্গে। আলাপাকালে তিনি বলেন, আমরা কলু সম্প্রদায়। তেল উৎপাদন আমাদের পারিবারিক পেশা। কিন্তু পরিবারের আর কেউ এ পেশার সঙ্গে জড়িত নয়। সবাই অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। বাপ-দাদার পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। তাই আমি খুব কষ্ট করে এ পেশাটি ধরে রেখেছি।

কামরুল বলেন, ইঞ্জিনচালিত ঘানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা টিকতে পারছি না। মূহুর্তেই উৎপাদিত হচ্ছে বিপুল পারিমাণ ভোজ্য তেল। এক লিটার তেল তৈরি করতে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগছে সেখানে আধুনিক মেশিনে লাগছে কয়েক মিনিট।

এখনও ঘানি তেলের চাহিদা রয়েছে

তিনি বলেন, আমার একটি ঘানি রয়েছে। ঘানিতে একবারে সর্বোচ্চ ৭ কেজি সরিষা ভাঙ্গা সম্ভব হয়। আমি প্রতিদিন দুই বেলা কাজ করে ১৪ কেজি সরিষা ভাঙ্গি। সময় লাগে প্রায় ৭ ঘণ্টা। ১৪ কেজি সরিষা ভেঙ্গে বের হয় মাত্র ৫ লিটার তেল। প্রতি কেজি বিক্রি হয় ২৪০ টাকা দরে। বর্তমান বাজারমূল্যে কোনরকম খেয়েপড়ে পেশাটি ধরে রেখেছি।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ঋণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঘানি শিল্পের উন্নয়নের জন্য ঋণের কথা উল্লেখ করলেও সহজে ঋণ পাওয়া যায় না। সহজ শর্তে ঋণ দিলে এ শিল্পটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

ঘানিতে একবারে সর্বোচ্চ ৭ কেজি সরিষা ভাঙ্গা সম্ভব হয়

কুড়িগ্রাম সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক শ্যামল ভৌমিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, কলু বলতে আমরা তেল উৎপাদক ও বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত পরিবারগুলোকেই জানি। প্রথমদিকে হতদরিদ্র হিন্দু পারিবারগুলো তেল উৎপাদন ও বিক্রিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করলেও। পরে কিছু সংখ্যক মুসলিম পরিবারও এ পেশায় আসেন। তবে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কলুর ঘানিশিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেয়া উচিত।