ছিনতাইকালে চিনে ফেলায় হত্যা করা হয় হেলাল উদ্দিনকে
টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় মুখোশধারী ছিনতাইকারীদের চিনে ফেলায় ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিনকে (৩৫) শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। হেলাল উদ্দিন নিখোঁজ ও তার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য জানান।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের রাধাভল্লবপুর গ্রামের একটি টয়লেটের ট্যাংকি থেকে হেলাল উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে প্রেরণ করা হয়।
উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের মো. হাসিম উদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন। সে উচাখিলা বাজারে চুন ও তামাকপাতা বিক্রি করেন। গত ১৮ জানুয়ারি রাতে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয় হেলাল। এ ঘটনায় তার স্ত্রী মাজেদা খাতুন ২৯ জানুয়ারি ঈশ্বরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি ও ৪ ফেব্রুয়ারি একটি মামলা করেছেন।
নিখোঁজ ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের মো. হাসিম উদ্দিনের ছেলে। সে উপজেলার উচাখিলা বাজারে চুন ও তামাক পাতা বিক্রি করে। গত ১৮ জানুয়ারি রাতে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন হেলাল।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে ১৭ দিনেও উদ্ধার হননি ব্যবসায়ী
এদিকে, ২১ জানুয়ারি রাতে হেলালের বড় ভাই মো. দুলাল মিয়ার কাছে ফোন আসে।
ফোনের অপর প্রাপ্ত থেকে বলা হয়- ‘তোর ভাই কি হারানো গেছে? তোর ভাইকে আমরা নিয়ে গেছি। ফেরত পেতে হলে ২ লাখ টাকা লাগবে।’
তখন দুলাল মিয়া এতো টাকা দিতে পারবে না বলে অনুনয় বিনয় করলে ১ লাখ টাকায় রফা হয়। এ সময় টাকাগুলো উপজেলার উচাখিলা-লক্ষ্মীগঞ্জ সড়কে নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু উল্লেখিত স্থানে যাওয়ার আগে দ্বিতীয়বার কল করা হলে নম্বরটি বন্ধ পান দুলাল।
পরে, বিষয়টি পুলিশ ও র্যাব ময়মনসিংহ-১৪ কার্যালয়ে জানানো হয়। পুলিশ ফোনের নম্বরটি দিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় উচাখিলা ইউনিয়নের মঘা গ্রামের নুর ইসলাম ও তার ছেলে আজিজুলকে আটক করে।
কিন্তু ঘটনার অন্তত ১৫ দিন আগে ফোনটি হারিয়ে যাওয়ায় এবং তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের তথ্য না পাওয়ায় পুলিশ স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় দু’জনকে ছেড়ে দেন।
এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাবের একটি দল ৪ ফেব্রুয়ারি উচাখিলার ঈশ্বরপুর গ্রামের আক্কাছ ওরফে আকাশ (১৮) ও মঘা গ্রামের ইজিবাইক চালক কাঞ্চন মিয়াকে (১৮) গ্রেফতার করে পুলিশে সোপর্দ করে। বিষয়টি নিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি হেলালের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে নিখোঁজের ২০ দিন পর ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার
এদিকে, গ্রেফতারকৃত আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে ৬ ফেব্রুয়ারি রাধাভল্লবপুর গ্রামের রিপন আচার্য্য (২৮), মঘা গ্রামের মো. ফারখ মিয়া (১৯) ও উচাখিলা বক্ষিলবাড়ি এলাকার খায়রুল ইসলামকে (১৪) আটক করা হয়। তাদেরকে আদালতে পাঠানো হলে খায়রুলকে কিশোর সংশোধনাগারে এবং রিপন ও ফারুখকে ২ দিনের রিমান্ডে আনা হয়।
পুলিশ জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে রিপন ও ফারুখ ঘটনার মূল হোতা হিসেবে রাধাভল্লবপুর গ্রামের প্রাণেশ আচার্যের ছেলে উত্তম আচার্য্যর নাম জানায়। পরে পুলিশ সিলেট থেকে উত্তমকে গ্রেফতার করে ঈশ্বরগঞ্জ নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে উত্তম পুলিশকে জানায় হেলাল উদ্দিনের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়ার সময় তাদের চিনে ফেলায় হাত-পা বেঁধে মাফলার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর একটি অবহৃত টয়লেটের ট্যাংকিতে মরদেহ ফেলে রাখা হয়। এরপর হেলালের কাছ থেকে পাওয়া ২০ হাজার টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয় ছিনতাইকারীরা।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, ব্যবসায়িক কাজ শেষে বাজার থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন হেলাল উদ্দিন (৩৫)। এ সময় একদল মুখোশধারী ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় হেলাল উদ্দিন দুর্বৃত্তদের চিনে ফেলায় তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আসামিরা। এরপর মরদেহ টয়লেটের ট্যাংকিতে ঢুকিয়ে রাখে। এ ঘটনায় বিভিন্ন ধাপে ৯জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।