যে বাজারের অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতাই নারী
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের প্রায় অর্ধশতাধিক দোকান নিয়ে ৩০ বছর ধরে চলছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বানিয়ারচর বৌ বাজার। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় মাছ-তরিতরকারি বেচাকেনা আর সন্ধ্যা হলেই বসে চায়ের আড্ডা। আর এ বাজারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট এখানের সিংহভাগ ক্রেতা-বিক্রেতাই নারী।
জানা যায়, ১৯৯০ সালে গৃহপালিত গাভির দুধ বিক্রির জন্য উপজেলার বানিয়ারচরে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট মহাসড়কের পাশে জমায়েত হতো নারীরা । অল্প সময়ে সেখানে ক্রেতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গড়ে ওঠে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতার সিংহভাগই নারী। এজন্যই এখানে গড়ে ওঠে একটি নারীবান্ধব পরিবেশ। পুরুষের আয়ের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য এখানে বেচাকেনায় বউদের অংশগ্রহণের কারণে ৪ একর নিয়ে গঠিত বাজারটির নামকরণ করা হয় বৌ বাজার। দীর্ঘ ৩০ বছর পার হলেও এখনো জমজমাট বৌ বাজার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখানে অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে , যার বেশির ভাগ দোকানের বিক্রেতাই নারী। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শতাধিক বিক্রেতা এই বাজারে জামা-কাপড়, দুধ, মাছ-মাংস, শাক-সবজি, পানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছে। এছাড়া সন্ধ্যায় নারীদের চা ও রুটির দোকানে বসে জমজমাট আড্ডা। আর এ আড্ডায় দেখা যায় কৃষাণ- কৃষাণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের চাকরিজীবিদের। তবে, বৌ বাজারটি টিকিয়ে রাখতে হলে নারী বিক্রেতাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
মঞ্জু রানী বিশ্বাস নামে এক বিক্রেতা জানান, আমি ১০ বছর ধরে এখানে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আসছি। এখানে বেচাকেনায় আমাদের কোনো সমস্যা হয় না, তবে এ বাজারে সকলের সুবিধার জন্য একটি আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা জরুরি।
স্মৃতি বাইন নামে আরেক বিক্রেতা জানান, এখানে আমরা কোন ঝামেলা ছাড়াই নিত্যপণ্য বেচাকেনা করতে পারি। অনেক বছর ধরে নারীরাই এ বাজার পরিচালনা করে আসছে। তবে আধুনিকযুগে বাজারটি উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারের রক্ষণাবেক্ষণ দাবি করছি।
নিখিল বাইন নামে এক ক্রেতা জানান, এবাজারে নারীরা বিভিন্ন বিলে চাষের সবজি, পালিত গরুর দুধ, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য বিক্রি করে। এছাড়াও অনেক নারী দোকানে চা ও রুটি বিক্রি করে। এখানে ন্যায্যমূল্যেই এসব পণ্য বিক্রি হয়। এখানে বেচাকেনায় কোন ঝামেলা নেই।
জলিলপাড় ইউপি চেয়ারম্যান অখিল বৈরাগী জানান, পেশাগত কারণে পুরুষরা সারাদিন ব্যস্ত থাকায় পরিবারের নারী সদস্যরাই অনেক বছর ধরেই এই বৌ বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বেচাকেনা করে আসছেন। বাজারে টিউবওয়েল, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।