পেরেকে ঝাঁঝরা-ক্ষতবিক্ষত কুমিল্লা নগরীর গাছগুলো

  • আবদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পেরেকে ঝাঁঝরা-ক্ষতবিক্ষত কুমিল্লা নগরীর গাছগুলো

পেরেকে ঝাঁঝরা-ক্ষতবিক্ষত কুমিল্লা নগরীর গাছগুলো

মানুষের মতো প্রতিটি গাছেরও প্রাণ আছে আর প্রতিটি গাছকে বলা হয়ে থাকে, একেকটি অক্সিজেন উৎপাদনের কারখানা। আর গাছের দেওয়া অক্সিজেনই বাঁচিয়ে রাখছে মানুষসহ সকল প্রাণীকে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে মানুষকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা সেই অক্সিজেনের কারখানা খ্যাত গাছগুলোই এখন মানুষের ঠুকানো পেরেকে ঝাঁঝরা-ক্ষতবিক্ষত। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন সড়কে সরজমিনে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।

নগরীর বেশিরভাগ গাছ-ই পেরেকে-পেরেকে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। একেককটি গাছে ৩/৪টি থেকে শুরু করে ৩০/৪০টি পর্যন্ত পেরেক মেরেছেন কেউ কেউ। অনেকে পেরেক দিয়ে পোস্টার, সাইনবোর্ড, ফেস্টুন বা ব্যানার অবাধে লাগিয়েছেন। গাছে পেরেক ঠুকানো সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না কেউ-ই। পেরেক লাগানোর ফলে নষ্ট হচ্ছে গাছের জীবনী শক্তি। অনেক সময় পেরেকের ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশ করে পচে গিয়ে মরে যাচ্ছে অনেক গাছও । তারপরও বন্ধ নেই এই অমানবিকতা।

বিজ্ঞাপন

সরজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার সড়কের পাশের গাছগুলোতে  অবাধে পেরেক ঠুকে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সাইনবোর্ড। ফলে ব্যাহত হচ্ছে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়া। গাছের প্রতি এমন নির্মমতার ফলে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। তাই অক্সিজেনের পাওয়ার হাউস খ্যাত গাছ রক্ষা জরুরি, বলছেন সাধারণ মানুষ।

পেরেক লাগানোর ফলে নষ্ট হচ্ছে গাছের জীবনী শক্তি

তাদের ভাষ্য, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সর্বোপরি নিজেদের রক্ষা করতে এখনই গাছের প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। কারণ গাছ সতেজ তো মানুষ সতেজ, গাছ সতেজ তো পরিবেশ সতেজ।

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লা নগরীর হাউজিং এস্টেট গোল মার্কেট এলাকার বাসিন্দা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মো.শাহজাহান বলেন, গাছেরও জীবন আছে, ওরা কথা বলতে পারেনা বিধায় এতো যন্ত্রনার পরও ওরা কোন শব্দ করে না। গাছ আমাদের বাঁচার জন্য অক্সিজেন দেয়, আমাদের জীবন চক্র আর ধরিত্রীর ভারসাম্য রক্ষা করে। অথচ আমরাই সেই গাছের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করি। আমাদের উচিত মানবিক হওয়া, গাছের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ করা।

নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকার সমাজ সেবক মো.জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মানুষের যেমন প্রাণ আছে, গাছেরও তেমন প্রাণ আছে। একজন মানুষকে পেরেক দিয়ে আঘাত করলে মানুষ যেমন কষ্ট পাবে, গাছও তেমন কষ্ট পায়।  আমাদের সকলের উচিত গাছের উপর এই অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করা।

একেককটি গাছে ৩/৪টি থেকে শুরু করে ৩০/৪০টি পর্যন্ত পেরেক মেরেছেন কেউ কেউ

নগরীর বেশ কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা বলেন, এমনিতেই শহর এলাকায় গাছের অনেক সংকট রয়েছে। তার উপর বিভিন্ন রাজনৈতিক লোকজন ও ব্যবসায়ীরাসহ বিভিন্ন মানুষ তাদের নিজস্ব স্বার্থে গাছের উপর পেরেক মেরে নির্যাতন করছে। যার ফলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক গাছপালা মরে যাচ্ছে। গাছের উপর এই নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সবুজ পরিবেশ আন্দোলন, কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি কাজী শারমিন আউয়াল পারভেজ বাপ্পি বলেন, আমাদের শহরে আয়তনের তুলনায় মানুষ অনেক বেশি। আর মানুষ বেশি হওয়ার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। আর পরিবেশ হুমকির মুখে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বৃক্ষ কমে যাওয়া।

তিনি বলেন, গাছের মধ্যে এভাবে পেরেক মারার ফলে গাছের আয়ু কমে যাচ্ছে, অনেক গাছ মরে যাচ্ছে। যার ফলে আমদের অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। এসব কারণে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হুমকির মুখে পড়েছে। তাই সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন সবুজ পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসেন। মূল কথা হলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে সবুজ গাছকে বাঁচাতে হবে, আর গাছ বাঁচলেই মানুষ বাঁচবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন বলেন, কুমিল্লা সিটি এলাকার অনেক গাছের মধ্যে পেরেক দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের স্বার্থে সাইনবোর্ড, ব্যানারসহ বিভিন্ন প্রচারমূলক জিনিস লাগিয়েছে। আমরা শিগগিরই গাছ থেকে এসব পেরেক অপসারণ করব।