অবাধ শিকারে কমছে বেজির সংখ্যা
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের অন্যান্য জেলার মত চাঁপাইনবাবগঞ্জেও কমছে বেজির সংখ্যা। আবাসস্থলের অভাব, দূষণ, অবাধ শিকার এবং সচেতনতার অভাবসহ নানা কারণে কমছে উপকারী এই বন্যপ্রাণীটির সংখ্যা।
বেজি শিকারি প্রাণী। এরা দিবাচর। রাতে মাটির গর্তে বাস করে। এদের বেশি চোখে পড়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলায় এদের বিচরণ বেশি।
বরেন্দ্র অঞ্চলে বেজি কমে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে আদিবাসীদের শিকার। তারা গোটা বছর ধরে দল বেঁধে বরেন্দ্র এলাকায় বেজি শিকার করে থাকে। আদিবাসীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা তীর ধনুকসহ নানা স্থানীয় অস্ত্র দিয়ে বেজি শিকার করছেন।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নাচোল উপজেলার মির্জাপুরে চোখে পড়ে একদল আদিবাসীর বেজি শিকারের দৃশ্য। সাতজনের একটি দল বেজি শিকার করেছেন মোট চারটি। তারা মূলত গম ও পেয়ারা খেত থেকে এসব বেজি শিকার করেছেন।
শিকারি সুজন জানান, বেজির মাংস খেতে অনেক সুস্বাদু। সে জন্যই তারা দল বেধে বেজি শিকার করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে আগত মেহমানদের তারা আপ্যায়িত করে থাকেন বেজির মাংসে।
মির্জাপুর গ্রামের অমেলা বেগম জানান, বেজি অনেক উপকারে আসে। তার পরেও আদিবাসীদের ধরে নেয়ার কারণে আগের মত আর চোখে পড়ে না। সারা বছর তারা বেজি শিকার করে থাকেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী উপপরিচালক মঞ্জুরুল হুদা জানান, বেজি ফসলের খেতের ছোট-বড় ইঁদুর, বিষাক্ত সাপ, মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, পাখি এমনকি পাখির ডিম খায়। মাঝে মধ্যে এরা হাঁস-মুরগি, কবুতরের ছানা এবং অন্যান্য ছোট প্রাণীও খায়। তাই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বেজিকে শত্রু মনে করে। তবে দুয়েকটা হাঁস মুরগির ছানা খেয়ে বেজি কৃষকের যে ক্ষতি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে ফসলের খেতের ইঁদুর ও পোকামাকড় খেয়ে। এছাড়াও বেজি যে অঞ্চলে থাকে, সে অঞ্চলে সাপ থাকে না। বিষধর সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড় এবং বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ খেয়ে বেজি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অসামান্য অবদান রাখে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য নেচারের সমন্বয়ক রবিউল হাসান ডলার বলেন, বেজিসহ অন্য উপকারী জীব রক্ষার জন্য আমরা বরেন্দ্র এলাকার আদিবাসী স্কুলসহ পাড়া-মহল্লায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছি। তার পরও আদিবাসীরা বেজিসহ বেশ কিছু প্রাণী ধরে খেয়ে ফেলছে। বেজি রক্ষার্থে জনসচেতনতায় প্রয়োজন।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোর্ত্তুজা জানান, বেজি সাধারণত কোনো কিছুর ক্ষতি করে না। যারা বেজি শিকার করে তাদের বোঝানো উচিত। এ ছাড়া সকল প্রাণী রক্ষায় জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেজির অবদান অনস্বীকার্য। প্রকৃতিতে এদের টিকে থাকা অত্যন্ত জরুরি এবং মানুষের প্রয়োজনেই বেজিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণ করা দরকার।