ভাড়াটে খুনির সহায়তায় বাবাকে গলা কেটে হত্যা
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে সম্পত্তির জন্য ভাড়াটে খুনির সহায়তায় উমর আলীকে গলা কেটে হত্যা করেন তার ছেলে কাউসার আহমেদ।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা।
নিহত উমর আলী আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ভাড়াটে খুনি মনির আহমেদ (৩০) এ জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় তার শ্বাশুড়ি সুফিয়া খাতুনকেও (৫৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মনির আহমেদের জবানবন্দির ভিত্তিতে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, কয়েক বছর আগে উমর আলী দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পর প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে নারী ও শিশু আইনে মামলা দায়ের করেন প্রথম স্ত্রী পিপি বেগম। বিষয়টি নিয়ে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয় উমর আলীর। পাশাপাশি সম্পত্তি নিয়েও তাদের মধ্যে চলে দ্বন্দ্ব। একপর্যায়ে পুরো সম্পত্তি পেতে বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন প্রথম পক্ষের সন্তান কাউছার আহমেদ। সে অনুযায়ী সিলেট জেলার জকিগঞ্জ পৌর এলাকার দক্ষিণ দয়াগ্রামের এমাদ উদ্দিনের ছেলে ভাড়াটে খুনি মনির আহমেদের (৩০) সাথে পাঁচ হাজার টাকায় চুক্তি করেন কাউছার। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মামলা আপোষের প্রলোভন দেখিয়ে উমর আলীকে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কালাইউড়া এলাকায় মনিরের শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যান তিনি। সেখান থেকে তাকে পাশের একটি টিলায় নিয়ে যান কাউছার ও মনির। সেখানে মনিরকে নিয়ে ওমর আলীকে গলা কেটে হত্যা করেন কাউছার। পরে লাশ যেন শনাক্ত করা না যায়, সেজন্য মাথা কেটে নদীতে ফেলে দেন তারা।
তিনি আরো জানান, শুধু তাই নয়, ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে গত ৬ জানুয়ারি আজমিরীগঞ্জ থানায় বাবার সন্ধান চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন কাউছার। একপর্যায়ে গত ২১ জানুয়ারি হত্যার স্থল থেকে উমর আলীর কঙ্কাল উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ। এদিকে, গত ২৩ জানুয়ারি সন্দেহপ্রবণ হয়ে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত উমর আলীর ভাই মো. নায়েব আলী। মামলায় উমর আলীর ছেলে কাউছার আহমেদ (১৮), আল আমীন (২৫) ও তাদের মা পিপি বেগমসহ (৫৫) পাঁচজনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে কাউছার ও মনির ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। পরে মনির ও তার শাশুড়ি সুফিয়া খাতুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বুধবার মনিরকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, কাউছারসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিরা পলাতক। তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) শেখ মোহাম্মদ সেলিম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজমিরীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবু হানিফসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা।