দৌলতদিয়ায় পুলিশের কাঁধে ‘মানবতার জয়গান’

  • সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দৌলতদিয়ায় পুলিশের কাঁধে ‘মানববতার জয়গান’

দৌলতদিয়ায় পুলিশের কাঁধে ‘মানববতার জয়গান’

সামাজিক কুসংস্কার ও প্রথার কারণে যুগের পর যুগ মারা গেলে দাফন বা সৎকার না করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া ও মাটির নিচে পুঁতে রাখা হত দৌলতদিয়া যৌনপল্লির যৌনকর্মীদের মরদেহ। সেই অনাদরে ভাসিয়ে দেওয়া মরদেহ এখন পুলিশের কাঁধে। যাদের সাথে সমাজের মানুষ কথা বলে না ঘৃণায়, সেই মানুষগুলো মরার পর কাঁধে নিয়ে রীতিমত চমকে দিয়েছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমান।

সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই; ‘মানব ধর্মই পরম ধর্ম’।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২টায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লির বাসিন্দা যৌনকর্মী পারভীনের জানাজা শেষে সবার সাথে তার বহনকৃত মরদেহের খাটিয়া ওসি নিজেই কাঁধে নিয়ে রওনা হন কবরস্থানে।

এ সময় যৌনকর্মী পারভীনের মরদেহের খাটিয়া ওসির কাঁধে নেওয়ার দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে যান যৌনপল্লির সহস্রাধিক যৌনকর্মী।

বিজ্ঞাপন

সবার মুখে মুখে তখন মানবতার জয়গান। প্রশংসায় ভাসতে থাকেন ওসি আশিকুর রহমান। জানাজায় উপস্থিত সকল মুসল্লি হতবাক হয়ে যান ওসির মানবিকতায়।

যৌনকর্মী পারভীনের জানাজা

একাধিক যৌনকর্মী বার্তা২৪.কমকে বলেন, কখনো ভাবতেও পারিনি মৃত্যুর পর আমরা মানুষ হিসেবে চিরবিদায় নিতে পারব। আমাদের জন্য ওসি স্যার যা করলেন তা ভোলার নয়। আল্লাহ উনার মঙ্গল করুক।

দৌলতদিয়া ইউপি সদস্য জলিল ফকির বার্তা২৪.কমকে বলেন, গোয়ালন্দের ওসি মহোদয় আজ যৌনকর্মীর মরদেহের খাট কাঁধে নিয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থা্পন করেছেন তা নজিরবিহীন। সত্যি তিনি প্রশংসার দাবিদার।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি কি এমন করেছি তা জানিনা। তবে মানুষ হিসেবে শুধু আমার না, এ কাজটি সবারই করা উচিত। আজ যা করা হলো আমি না থাকলেও যেন এ কাজটি অব্যাহত থাকে। আমি চাই একজন মানুষের শেষ বিদায়টা যেন সম্মানের হয়।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে যৌনকর্মীরা মারা গেলে তাদের নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হত অথবা মাটির নিচে পুঁতে রাখা হতো। যেমন ইসলাম ধর্মের রীতিতে জানাজা পড়ে দাফন হত না তেমনি সৎকারও হত না।

বিষষটি গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমানের নজরে আসলে তিনি ২ ফেব্রুয়ারি হামিদা বেগমের প্রথম জানাজা সম্পন্ন করান। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জানাজা হয় যৌনকর্মী রিনা বেগমের ও সর্বশেষ আজ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) যৌনকর্মী পারভীনের জানাজা পড়ানোর সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

একজন পুলিশ কর্মকর্তার সমাজ পরিবর্তনের মহতী এই উদ্যোগ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সব জায়গায় প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।