সাভারে শক্ত অবস্থানে তিতাস, এক বছরে ২৯২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

  • মাহিদুল মাহিদ,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড/ছবি: বার্তা২৪.কম

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড/ছবি: বার্তা২৪.কম

সাভার ও আশুলিয়ায় গত কয়েকদিন আগেও অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যবসা ছিলো জমজমাট। এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালী কয়েকটি চক্র কতিপয় কিছু অসাধু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছিলো তাদের তাদের অপকর্ম।

মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তারা শুধু অবৈধ সংযোগ দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি, গ্যাসের মালিক সেজে মাসে মাসে বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে বার্নার প্রতি হাতিয়ে নিয়েছে হাজার হাজার টাকা।

বিজ্ঞাপন

তবে সম্প্রতি সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ঘন ঘন সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযানে মুখ থুবরে পরেছে অসাধু ব্যবসায়ীর অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবসা।

এদিকে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড গত ১ বছরে ৬২টি অভিযান পরিচালনা করে জানান দিয়েছে তাদের শক্ত অবস্থানের কথা। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো গত ১ বছরে অজ্ঞাতসহ ২ হাজার ৯২০ জন গ্যাস চোরাকারবারির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে মাত্র ২ জনকে। এর মধ্যে সাভার মডেল থানায় ৩টি মামলায় অজ্ঞাতসহ আসামি ১৫ জন আর গ্রেফতার হয়েছে ২ জন। আর আশুলিয়া থানায় বাকি ৭টি মামলায় অজ্ঞাতসহ আসামি সংখ্যা ২৯০৫ জন। এর মধ্যে রাতের অন্ধকারে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সময় এলাকাবাসী দুইজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের হস্তক্ষেপে ১ মাস করে সাজা হয় তাদের।

বিজ্ঞাপন
অবৈধ সংযোগের পাইপ জমা করে রাখা হয়েছে/ছবি: বার্তা২৪.কম

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড তাদের দায়িত্ব পালন করলেও প্রশ্নবিদ্ধ হয় দায়িত্বরত প্রশাসনের কার্যক্রম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর আশুলিয়ার মানিকগঞ্জ পাড়ায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটে দগ্ধ হয়ে নিহত হন ৬ জন। আর ২০১৯ সালের ২ জুলাই একইভাবে আশুলিয়ার উত্তর কাঠগড়া দুকাঠি এলাকায় বিস্ফোরণ হয়ে শিশুসহ নিহত হয় দুইজন। শুধু নিম্ন মানের পাইপ ও ফিটিংস ব্যবহার করে অবৈধভাবে এসব সংযোগ নেওয়ায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।

বার্তা২৪.কমের অনুসন্ধান বলছে, গত ১ বছরে সাভার ও আশুলিয়ার ২২১টি পয়েন্টে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৯৮ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাসের লাইন উচ্ছেদ করেছে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। এসময় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮০ টি ছোট, বড় ও বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের পাইপ জব্দ করা হয়। আর বার্নার জব্দ করা হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৬৫টি। এসব অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন চোরকারবারিকে ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানাসহ দুইজনকে ১ মাস করে সাজা প্রদান করেন আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের উপ-কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজোয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ।

নিয়মিত চলছে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান/ছবি: বার্তা২৪.কম

চিহ্নিত সব গ্যাস চোরাকারবারির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পরও তারা দিব্যি এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে গত ১ বছরে প্রায় ৭৫ শতাংশ চোরাকারবারি নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে এই ব্যবসা থেকে। কেননা সংযোগ প্রদানের খবর পেলেই বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। আর বাকি ২৫ শতাংশ ব্যবসায়ী চোরাই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মামলা আর সংযোগ বিচ্ছিন্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে। তারা অতীতের মামলার রেকর্ড সম্পর্কে অবগত হয়েই এই ব্যবসা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আশার কথা হলো ইতিমধ্যে ঘন ঘন সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান পরিচালনা করে প্রতি মাসে প্রায় ১২ কোটি টাকা ক্ষতি রোধ করতে সক্ষম হয়েছে সাভার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি লায়ন মো. ইমাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, গ্যাস বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ। দিনে দিনে গ্যাসের মজুদ কমে যাচ্ছে। তাতে যদি চোরাই গ্যাস ব্যবসায়ীরা অনবরত অবৈধ সংযোগের ব্যবসা করে তাহলে খুব দ্রুত আমাদের দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যাবে। সব ক্ষেত্রের মত যদি এই খাতের ওপর গুরুত্ব দেয় প্রশাসন তাহলে প্রতি মাসে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার গ্যাস চুরি রোধ করা সম্ভব।

অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে গ্রেফতারও করা হচ্ছে/ছবি: বার্তা২৪.কম

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম বলেন, আমরা শুধু অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করতে পারি এবং চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারি। দেশের সম্পদ এই প্রাকৃতিক গ্যাসের চুরি রোধে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি আমরা। নিয়মিত অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্নভাবে গ্যাস সংযোগ গ্রহণকারী ও সংযোগদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদের কাছে মামলাগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, সব মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে।