‘বাবার পরে মা-ও চলে গেলো’

  • জাহিদ হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ওবায়েদ আলী হৃদয় পরীক্ষা দিয়ে এসে মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে/ছবি: বার্তা২৪.কম

ওবায়েদ আলী হৃদয় পরীক্ষা দিয়ে এসে মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে/ছবি: বার্তা২৪.কম

যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এনজিও কর্মী তানিয়া ইসলামের স্বপ্ন ছিলো দুই ছেলের সুন্দর ভবিষ্যৎ। কিন্তু ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দুই সন্তানকে ফেলে না ফেরার দেশে চলে যায় বাবা ওয়াজেদ আলী।

বাবাকে হারিয়ে মা তানিয়া ইসলাম তাদের দুই ভাইকে নিয়ে নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধের নতুন সংগ্রামে। চাকুরি নেয় বেসরকারি এনজিও ব্র্যাকে। সংসারে অভাব ঘোচানোর সাথে মা তানিয়ার স্বপ্ন দুই ছেলের সুন্দর ভবিষ্যতের দায়িত্ব নেয় নিজেই। প্রতিদিনের মতো রোববার সকালেও সকালে একটি যাত্রীবাহী সিএনজিতে অফিসের উদ্দেশ্য বের হয় তানিয়া ইসলাম। পথিমধ্যে শহরের চুড়ামণকাঠির সানতলায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া গতির একটি ধাক্কায় না ফেরার দেশে চলে যায় তানিয়া ইসলাম। ‘বাবার পরে মা’ও চলে গেলো। আমি এখন কার কাছে থাকবো? কি নিয়ে বাঁচবো?’ এই বলে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন এসএসসি পরীক্ষার্থী ওবায়েদ আলী হৃদয়। যশোরে শনিবার সকালে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন হৃদয়ের মা তানিয়া খাতুন (৪৩)। এই দুর্ঘটনায় তানিয়া ছাড়াও হাসান নামে এক ব্যবসায়ী নিহত এবং আরও তিনজন আহত হন।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১ মার্চ) দুপুরে এসএসসি’র ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষে যশোর হাসপাতাল চত্বরে এসে মায়ের জন্য বুকফাটা আহাজারিতে ভেঙ্গে পড়েন হৃদয়। হৃদয় এবার যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। হৃদয়ের বড় ভাই জোবায়েদ আলী জীবন ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মায়ের মৃত্যুতে মেধাবী দুই ভাইয়ের জীবনই এক অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে গেলো।

তানিয়া খাতুন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রামের বাসিন্দা মৃত ওয়াজেদ আলীর স্ত্রী ছিলেন। তিনি যশোরের ব্র্যাকের চুড়ামনকাটি শাখার ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করতেন। এই পরিবারটির হৃদয়বিদারক ইতিবৃত্তি জানালেন ব্র্যাক যশোরের জেলা প্রতিনিধি অমরেশ চন্দ্র দাস। তিনি জানালেন, তানিয়ার স্বামী ওয়াজেদ আলী ব্র্যাকে চাকরি করতেন। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান। পরে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবারটির অবস্থা বিবেচনায় মানবিক কারণে তানিয়া খাতুনকে ২০১১ সালে ব্র্যাকে চাকরি দেয়া হয়। চাকরি করে তিনিই তার দুই সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করছিলেন।

বিজ্ঞাপন

বড় ছেলে জোবায়েদ আলী জীবন ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আর ছোট ছেলে ওবায়েদ আলী হৃদয় এবার যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। শনিবার পরীক্ষা দিয়ে দুপুরে হাসপাতালে এসে সে মায়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারে। এ সময় হাসপাতালে এসে হৃদয় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ‘বাবার পরে মা’ও চলে গেলো। আমি এখন কার কাছে থাকবো? কি নিয়ে বাঁচবো?’ এই বলে হৃদয়ের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

আরও পড়ুন- যশোরে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ২