যাত্রী সংকটে যশোর-কলকাতা রুটের বন্ধন এক্সপ্রেস
সড়ক পথের চেয়ে ট্রেনযোগে কলকাতা যাত্রার ভাড়া কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় যাত্রী মিলছে না বন্ধন এক্সপ্রেসে। এতে খুলনা-যশোর-কলকাতা রুটের এই ট্রেন সার্ভিসটিতে লোকসান গুনছে বাংলদেশ রেলওয়ে। দীর্ঘ দিনের দাবির মুখে ট্রেনটির যশোর স্টপেজ চালু হলেও যাত্রী সংখ্যা ক্রমশ কমছে। চলতি মার্চের প্রথম সপ্তাহে ৮শ' আসনে মাত্র দুইজন যাত্রী নিয়ে যশোর ছেড়েছে ট্রেনটি।
যাত্রীদের অভিযোগ, বেশি ভাড়ার পাশাপাশি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স ভোগান্তিও ট্রেনটির যাত্রী কমার অন্যতম কারণ। এছাড়া ট্রেনে কলকাতায় পৌঁছাতেও তুলনামূলক সময় বেশি ব্যয় হয়। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, ট্রেনটি (বন্ধন এক্সপ্রেস) কখনও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কলকাতায় পৌঁছায় না। তাই ট্রেনটির নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রা কলকাতা-খুলনায় যাতায়াতকারী মানুষকে সেভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি।
নিয়মিত যারা কলকাতায় যান তাদের দাবি, যশোর থেকে সড়ক পথে কলকাতা যেতে একজন পাসপোর্ট যাত্রীর সর্বসাকুল্যে খরচ হয় বাংলাদেশি ছয়শ’ টাকা। এদিকে বন্ধন এক্সপ্রেসে কলকাতা যেতে খরচ গুণতে হয় যাত্রী প্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। খুলনা-কলকাতা রুটে ১২০ কিলোমিটার ট্রেন যাত্রায় এসি চেয়ারে ভাড়া ভ্রমণকরসহ ১ হাজার ৫০০ টাকা। এসি সিটের ভাড়া ভ্রমণকরসহ দুই হাজার টাকা। কলকাতায় যাতায়াতকারী মানুষজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, সড়কপথে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রবেশের পর একজন পাসপোর্ট যাত্রীর কলকাতা যেতে ভ্রমণকরসহ খরচ হয় মাত্র ৬০০ টাকা।
যশোর রেলওয়ে জংশন সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে খুলনা-কলকাতা রুটে এক্সপ্রেস চালু হলেও যশোরে কোনো স্টপেজ ছিল না। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যশোরে এই স্টপেজ চালু হয়। ২০১৯ সালের ৭ মার্চ সংরক্ষিত দুইশ' আসন নিয়ে সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার যশোর স্টপেজে যাত্রাবিরতি শুরু করে। তবে যশোর স্টপেজ চালুর পর থেকে ট্রেনটির কোনো যাত্রায় ৩০টির বেশি আসন পূর্ণ হয়নি।
এটির কারণ হিসেবে যাত্রীরা বলছেন, যাতায়াতের দিন ট্রেনটির প্রায়শই উভয় স্টেশন থেকেই ছাড়তে দেরি হয়। ট্রেনটি কলকাতা থেকে ছেড়ে আসে বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায়। আর খুলনা থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয় দুপুর ২টায়। ট্রেন খুলনা থেকে ছেড়ে যাবার পর কলকাতা স্টেশনে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ পৌঁছনোর কথা থাকলেও পৌঁছাতে রাত ৮টা বা ৯টা বেজে যায়। এতে চিকিৎসা বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হওয়া যাত্রীরা সেখানে গিয়ে পড়ে যান আবাসন সংকটে।
যশোর রেলওয়ে জংশন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে যশোর স্টপেজ থেকে যাত্রীর সংখ্যা ছিলো ১৬০ জন। এপ্রিলে ১০৭ জন, মে মাসে ৭৩, জুনে ৪৪ জন, জুলাইয়ে ৯৪ জন, আগস্টে ৯৮ জন, সেপ্টেম্বরে ৭২ জন, অক্টোবরে ৭০ জন, নভেম্বরে ৯৮ জন ও ডিসেম্বর ৬৩ জন।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯৫ জন এবং চলতি মার্চ মাসে প্রথম সপ্তাহে মাত্র ২ জন যাত্রী নিয়ে যশোর স্টপেজ ছেড়েছে ট্রেনটি। সে হিসেবে এক বছরে যশোর স্টপেজে যাত্রীর সংখ্যা ছিলো এক হাজার ১২ জন। এতে যশোর স্ট্রেশন থেকে এক বছরে আয় হয়েছে ১৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭০৫ টাকা। যশোর থেকে প্রতি মাসে ৮শ’ সিট বরাদ্দ থাকলেও স্টপেজ থেকে যাত্রী সংখ্যা কমেছে কয়েকগুণ।
যাত্রীদের দাবি, বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স শেষ হতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এখানে ১৩টি কাউন্টার থাকলেও সবগুলো সচল না থাকায় ক্লিয়ারেন্সে সময় বেশি লাগছে। ফলে কলকাতা পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এজন্য ট্রেনে ওঠার আগেই ইমিগ্রেশনে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলছেন তারা। তাহলে যাত্রী বাড়বে বলে মনে করছেন চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণের জন্য কলকাতায় নিয়মিত যাতায়াত করা যাত্রীরা।
যশোর শহরের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন জানান, ট্রেনের ভাড়ার পরিমাণ অনেক বেশি। এক্ষেত্রে সড়ক পথে ভাড়া অনেক কম। ভ্রমণ করসহ ছয়শ টাকা খরচ করে কলকাতা যাওয়া যায়।
তুহিন হোসেন নামে আরেক যাত্রী জানান, ভারতীয় কাস্টমসে যাত্রী হয়রানি বন্ধসহ বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রীদের ভারতে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাত অবস্থান বাধ্যতামূলক করেছে। এছাড়া সপ্তাহে একদিন ‘বন্ধন’ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু থাকায় দরকারি প্রয়োজনে ট্রেনে করে কেউ যাতায়াত করতে চান না। সপ্তাহে ২-৩ দিন ট্রেন চলাচল ও ভাড়ার পরিমাণ কমালে যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেন তিনি।
সামসুর নাহার পলি নামে এক যাত্রী বলেন, গত মাসে বন্ধন এক্সপ্রেসে করে যশোর স্টেশন থেকে কলকাতায় গিয়েছিলাম। দুপুর ২টায় পর ট্রেন যশোর স্টেশন ছাড়ে। অপরদিকে রাত ৮টায় কলকাতায় পৌঁছায়। এর জন্য আবাসন সংকটসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়।
এ বিষয়ে যশোর রেলস্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রচার প্রচারণা না থাকার কারণে শুধু যশোর না বেনাপোল থেকেও ‘বন্ধন’ এক্সপ্রেস যাত্রী কমেছে। তাছাড়া সড়ক পথের চেয়ে ট্রেনে ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে যাত্রী পাচ্ছে না বলে মনে করেন এই স্টেশন কর্মকর্তা।