সৌদি আরবে যাওয়া হলো না সাগরের

  • আল মামুন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নিহত সাগরের স্বজনের আহাজারি

নিহত সাগরের স্বজনের আহাজারি

সাগর মিয়া তিন বছর আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসএসসি পাস করেছেন। তারপরই ভর্তি হন নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের প্রথম বর্ষে। কিন্তু পরিবারের অভাব-অনটন দেখে দুই বছর আগে সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছিলেন এলাকারই এক দালালকে। সেই টাকা আর ফেরত পাননি তিনি।

দরিদ্র ঘরের সন্তান হওয়ায় আবারো সৌদিতে পাড়ি জমানোর আশায় বাবাকে বলেছিলেন টাকা দিতে। চায়ের দোকানদার বাবা আবুল মিয়া সন্তানের কথায় নিজ এলাকার এক টুকরো জমি বিক্রি করে টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৬ মার্চ) দুপুরেই জমি বিক্রি করার কথা ছিল। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে সাগর তার বন্ধুদের নিয়ে যাচ্ছিলেন সিলেটে মাজার জিয়ারত করতে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর সত্যি হলো না। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সাগরের সৌদি আরব যাওয়ার স্বপ্ন।

শুক্রবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরের ভাটি-কালিসিমা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মাইক্রোবাসটির (ঢাকা মেট্রো- চ ১১৩৮৬৭) সঙ্গে সুনামগঞ্জ থেকে আসা ঢাকাগামী লিমন পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাসের (ঢাকা মেট্রো- ব ১৫০৪৮৭) মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

বিজ্ঞাপন

সংঘর্ষের পর মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে করে ভেতরে থাকা সাগর মিয়া (২২), শাকিল (২৫), সোহান (২০), ইমন (১৯), রিফাত (১৬) ও হারুন (৪০) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।

সাগর নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকার টি হোসেন রোডের ১৫ নম্বর বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মাঝে সাগর সবার বড়। তিনি নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

সাগরের বাবা আবুল মিয়া বার্তা২৪.কমকে জানান, রাতে সাগর আমার কাছে বায়না ধরে সিলেটে মাজার জিয়ারতে যাওয়ার জন্য। আমি তাকে এক হাজার টাকা দিয়েছিলাম সেখানে খরচ করার জন্য। রাত অনুমান সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ বন্দর এলাকা থেকে সাগরসহ ১০ জন সিলেটের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। রাত ১২টার দিকেও সাগরের সাথে আমার কথা হয়। কিন্তু ভোরে খবর পাই আমার ছেলেসহ মাইক্রোবাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। আমি ছুটে এসে জানতে পারি সাগর মারা গেছে।

তিনি আরো বলেন, চার সন্তানের মধ্যে সাগর সবার বড়। ২০১৭ সালে আমার ছেলে এসএসসি পাস করে। তারপর থেকে অভাব অনটনের মধ্যে দিয়েও আমি আমার ছেলেকে নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজের প্রথমবর্ষে ভর্তি করি। অভাবের কারণে ছেলের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই সে পরিবারের হাল ধরতে সৌদি আরবে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। ছেলেকে সৌদি পাঠানোর টাকা জোগাড় করতে আজ (শুক্রবার) দুপুরে আমার একটা জমি বিক্রি করতে যাওয়ার কথা ছিল। আমার ছেলের স্বপ্নপূরণ হলো না।

সাগরের চাচাতো ভাই মইনুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, পরিবারের কথা সবসময় ভাবতেন সাগর। তাই লেখাপড়ায় ভালো হওয়ার পরও সে তার বাবার সাথে চায়ের দোকানে বসত। সৌদি যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিল। মাজারে যাওয়ার আগেও আমাদের সাথে কথা হয়েছিল সাগরের। সে অনেক ভালো ছেলে ছিল।