দুঃসহ স্মৃতির সাক্ষী হয়ে রইলো আংটি

  • ড্রিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, হবিগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পুত্রবধূকে আংটি পরানো হলো না আব্বাছ উদ্দিনের/ছবি: বার্তা২৪.কম

পুত্রবধূকে আংটি পরানো হলো না আব্বাছ উদ্দিনের/ছবি: বার্তা২৪.কম

পুত্রবধূকে আংটি পরাতে স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনদের নিয়ে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থেকে শুক্রবার (৬ মার্চ) ভোরে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা দেন ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আব্বাছ উদ্দিন।

কিন্তু কে জানতো পুত্রবধূকে আংটি পরানোর বদলে সবাইকে নিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাবেন তিনি। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান দুই ছেলে ও স্ত্রীসহ স্বজনদের সবাই। ভাগ্যগুণে বেঁচে যান শুধু ভাড়াটিয়া বাসার মালিক ও চালক।

বিজ্ঞাপন

স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনরা মারা গেলেও পুত্রবধূর জন্য নেয়া আংটিটি রয়ে গেলো দুঃসহ এক স্মৃতি হয়ে। হয়তো এ আংটিটি পরিবারের সদস্যরা রেখে দেবেন স্মৃতি হিসেবে। যদিও এটি সারাজীবন স্বজনদের কুড়ে কুড়ে খাবে।

দুর্ঘটনার পর আংটিটি উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে রাখে পুলিশ। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মরদেহের সঙ্গে হস্তান্তর করা হয়।

বিজ্ঞাপন

নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়- ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আব্বাছ উদ্দিনের বড় ছেলে ইমন হোসেন কাতার প্রবাসী। বিদেশে থাকাকালীন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামে এক মেয়ের সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তার ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পেতে সম্প্রতি তিনি দেশ আসেন। পরে পারিবারিকভাবে উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে বিয়ে ঠিক হয়। শুক্রবার আংটি পড়ানোর জন্য নারায়নগঞ্জ থেকে ছেলে পক্ষের ১২ জন মাইক্রোবাসযোগে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে নবীগঞ্জের কান্দিগাঁও এলাকায় পৌঁছলে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি গাছে সজোরে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ৮ জন। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় এবং আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো এক নারী ও এক শিশু মারা যান।

নিহতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার দেলপাড়া এলাকার আব্বাছ উদ্দিন (৫০), তার বড় ছেলে ইমন হোসেন (২৫), ছোট ছেলে মাহবুব হোসেন রাব্বি (২১), একই উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের ইদ্রিছ আলীর ছেলে মহসিন মিয়া (৫৭), পশ্চিম দোলপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রাজিব হাসান (২৫), একই এলাকার গনি তালুকদারের ছেলে খলিল মিয়া (৩০), কুসুমবাগ গ্রামের বেলায়েত হোসেনের স্ত্রী সুমনা বেগম (৩৫), তার কন্যা খাদিজা আক্তার (৪), বরিশাল জেলার কামারপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের স্ত্রী আছমা আক্তার (৩৫) ও বরগুনা জেলার কোকায়ারঘাট এলাকার তোঁতা খার ছেলে ইমরান হোসেন (২০)।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পালসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ।

শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এরশাদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ গ্রহণ করতে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন করে নিহতদের স্বজনরা। ম্যাজিস্ট্রেটে উম্মে ইসরাত আবেদন মঞ্জুর করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করার আদেশ দেন। পরে রাত সাড়ে ১০টায় শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন।’

তিনি বলেন, ‘নিহত আব্বাছ উদ্দিনের পকেট থেকে পাত্রীর জন্য নিয়ে যাওয়ার স্বর্ণের আংটি উদ্ধার করা হয়। পরে এটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, ‘নিহতদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।’