আজব গ্রাম ‘শৈলান’
আজব গ্রাম শৈলান। যেখানে প্রতি বছরই গ্রামের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শিশুদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার শপথ করানো হয়। একজনের বিপদে হাত বাড়িয়ে দেয় পুরো গ্রামবাসী। এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করা সকলকে এই দিনে একত্রিত করা হয় প্রতি বছর। রাজধানীর প্রবেশদ্বার ধামরাই উপজেলার একটি আদর্শ গ্রাম এটি।
ঢাকার ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নে অবস্থিত এই শৈলান গ্রাম। এখানে বসবাস করেন ২৭০টি পরিবারের প্রায় ২ হাজার মানুষ। গ্রামের আয়তন প্রায় দেড় বর্গ কিলোমিটার। গ্রামটিতে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি হাইস্কুল, একটি মাদরাসা, মসজিদ, তিন একর জায়গা নিয়ে একটি কবরস্থান, একটি পাঠাগার এবং রয়েছে একটি ক্লাব। ক্লাবঘর ও পাঠাগারে এসে অবসর সময় কাটিয়ে দেয় এখানকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ।
গ্রামটির নামানুসারে গত ৫ বছর ধরে প্রতি বছরের মার্চের প্রথম শনিবার পালিত হয় ‘শৈলান দিবস’। দিবসটি ঘিরে এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করা সকল মানুষ সমাবেত হয় শৈলান সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। এ যেন গ্রামবাসীর মিলন মেলা। দিবসটিতে দিনব্যাপী চলে খেলাধুলা, সকল গ্রামবাসী একসাথে খায় দুপুরের খাবার। দিবসটির শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত ও শপথ করানো হয়। শপথে অংশ নেয় শিশু কিশোর থেকে শুরু করে গ্রামের সকল বয়সী মানুষ। শপথে বলা হয় আমি শৈলানের সন্তান, আমি শৈলান গ্রামকে ভালোবাসি। শৈলান গ্রামের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবো, আমিন। পরে গ্রামের সকলকে নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগীতা ও পুরস্কার প্রদান করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল জুয়েল তার ৪ বছর বয়সী মেয়ে জারাকে নিয়ে এসেছেন শৈলান মাঠে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, গ্রামের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে দিবসটি উদযাপন করতে এসেছি। তারা যেন আমাদের পূর্ব পুরুষের এই ধারা সম্পর্কে জানতে পারে। এই দিবসটিতে শিশুরা শৈশব থেকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার শিক্ষা পায়।
গ্রামের বাসিন্দা আফসার আলী বলেন, আমি আমার মেয়েকে বগুড়ায় বিয়ে দিয়েছি। অনেক দূরে হওয়ায় তেমন যেতে পারি না। তারাও এখানে কম আসে। এই দিবস উপলক্ষ্যে তারা এখানে প্রতিবছরই আসে। আমার অনেক ভালো লাগে। অনেকদিন পরে হলেও এই দিবস উপলক্ষ্যে আমার মেয়ের মুখ দেখতে পারি। এরকম একটি ব্যবস্থা থাকায় আমি গ্রামবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
গাজীপুর থেকে আসা গ্রামের জামাই ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এই গ্রামে আমার শ্বশুরবাড়ি। আমি ব্যবসায়ী মানুষ, সারা বছরই ব্যস্ততায় কাটাতে হয়। শ্বশুরবাড়ি তেমন একটা আসা হয় না। তবে ‘শৈলান দিবসে’ এখানে আসতেই হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। শুধু আমি না এই গ্রামের সকল মেয়ে ও জামাইদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। উদ্দেশ্য হলো সবাইকে একত্রিত করে সম্পর্ক দৃঢ় করা। আমি এখানকার পরিবেশ দেখে অভিভূত। এই গ্রামে আত্মীয়তা করে আমি গর্বিত।
শৈলান দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি মাহবুব হোসেন শহীদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের গ্রামের ছেলে-মেয়েরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে। অনেকে দেশের বাইরেও আছেন। দীর্ঘদিন পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হতে পারে না। তাই সকলকে একত্রিত করার একটি মেলা বন্ধন করা হয় এই দিবসে। আমাদের পুরো গ্রামটিই একটি সমাজ। গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষের সঙ্গেই সম্পর্ক সৃষ্টি করাই হলো দিবসটির উদ্দেশ্য।