২ মাসেই প্রশংসিত ওসি আশিকুর
যোগদানের ২ মাসের মধ্যেই ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশিকুর রহমান। গত ১১ জানুয়ারি গোয়ালন্দ ঘাটে যোগদান করেই ২ ফেব্রুয়ারি শত বছরের প্রথা ভেঙে দৌলতদিয়ায় প্রশংসিত হন তিনি।
মূলত ওই এলাকার যৌনপল্লীর কর্মী হামিদার ধর্মীয় রীতি অনুসারে প্রথম জানাজা সম্পন্ন করার বিষয়ে সাহায্য করা ও মরদেহের খাট বহন করার পরই আলোচনায় আসেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় মোট ৩ জন যৌনকর্মীর জানাজা সম্পন্ন হয়। আশিকুর রহমান পান মানবতার ফেরিওয়ালা উপাধি।
শুধু যৌনকর্মীদের মরদেহ দাফনই নয়, যোগদানের পর থেকেই গোয়ালন্দের সাধারণ জনগণের প্রাপ্য সেবা কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারেও বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি।
পুলিশ এবং জনগণের মাঝে দূরত্ব ঘোচাতে ব্যাপক পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছেন। থানায় ওসির রুমে ঢুকতে যে অনুমতি নিতে হয় সেই প্রথার বিরুদ্ধেই প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন আশিকুর রহমান। তার রুমের দরজায় বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘একজন গণকর্মচারীর অফিস, যেকোনো প্রয়োজনে এই অফিসে ঢুকতে অনুমতির প্রয়োজন নেই। সরাসরি রুমে ঢুকুন।’
আরও লেখা রয়েছে- ‘ওসিকে স্যার বলার দরকার নাই। অনুরোধে: ওসি গোয়ালন্দ ঘাট থানা, রাজবাড়ী’। থানায় ঢোকার পর এমন সাইনবোর্ড দেখে সেবা নিতে আসা সবাই হতবাক হয়ে যান। ওসির এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তারা বলছেন- এ ধরনের কর্মকাণ্ড পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হবে।
এছাড়াও তিনি ‘জনগণের দরবার’ নামে একটি সেবা খুলেছেন। যার মাধ্যমে ওসি নিজেই জনগণের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে তার সমাধান করে দেন। সর্বশেষ রোববার (৮ মার্চ) পুলিশি সেবা জনগণের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে অফিসার ফোর্সসহ ‘চল যাই গ্রামের পথে’ শিরোনামে আরেকটি ব্যতিক্রম সেবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
যার মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে একদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা জনগণের দরবার খোলা রাখবেন তিনি। এই সেবার মাধ্যমে জনগণকে কষ্ট করে থানায় আসতে হবে না। ওই দিন ইউনিয়নের প্রতিটি মহল্লায় থানার অফিসারসহ সঙ্গীয় ফোর্স টহল দেবে এবং ওয়ারেন্ট তামিল, মাদক উদ্ধার, সচেতনতার বিষয়ে উঠান বৈঠকসহ পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রম চালাবেন তারা।
গোয়ালন্দ ঘাট থানায় সেবা নিতে আসা কবির আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি গত কয়েক বছর আগে একবার পারিবারিক সমস্যা নিয়ে থানায় এসেছিলাম। তখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম মানুষ যেন কখনো থানায় না আসে। কিন্তু এবার থানায় এসে যা দেখলাম তাতে আমি রীতিমতো হতবাক। ওসি আশিকুর রহমানের এই ধরনের সেবা যদি বাংলাদেশ পুলিশ সারা দেশে চালু করতে পারে, তাহলেই পুলিশ জনগণের বন্ধু হতে পারবে।’
গোয়ালন্দ ঘাট থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশিকুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি মূলত গণপ্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী। জনগণকে সেবা দেয়াই আমার কাজ। আমি যা কিছু করছি তা আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব থেকেই করছি। আমি চাই আমার থানায় এসে যেন কোনো মানুষ কষ্ট না পায়। জনগণের সেবা দেয়াই আমার মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্কের সেতু বন্ধন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান ও রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ওসি আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমার প্রতি স্যারদের সুদৃষ্টির কারণেই আমি নানা প্রতিকূলতার মাঝেও জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারছি।’