একটি মাত্র থার্মোমিটারই ভরসা বিলোনিয়া স্থলবন্দরে
সম্প্রতি করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে। দেশের বিমান, সমুদ্র, ও স্থলবন্দরগুলোতে করোনা শনাক্তে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক থার্মাল স্ক্যানার। কিন্তু ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দরে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হলেও একটি মাত্র থার্মোমিটার সম্বল করে চলছে তার কার্যক্রম। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকদেরও নেই সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা। তাদের ভরসা কেবল মাস্ক আর গ্লাভস।
এভাবেই বিভিন্ন সমস্যা এবং সংকট মোকাবেলা করে চলছে পরশুরাম বিলোনিয়া স্থলবন্দরে করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্তে গঠিত মেডিকেল ক্যাম্পের কার্যক্রম। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) দুপুরে সরজমিনে গিয়ে এমনটাই দেখা গেছে।
ক্যাম্পে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য পরিদর্শক ডা. গিয়াস উদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য এখানে মাত্র একটি থার্মোমিটার দিয়ে কোনোমতে আমরা কাজ করে আসছি। এখানে আমাদের শারীরিক নিরাপত্তার জন্য নিজেরাও সবসময় শঙ্কায় রয়েছি। শুধুমাত্র মাস্ক আর গ্লাভস ছাড়া আমাদের কিছুই দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, গাউনসহ শারীরিক নিরাপত্তার জন্য আরও অন্যান্য সরঞ্জাম থাকলে কাজ করতে আমাদের ভয় থাকত না।
ক্যাম্পে দায়িত্বরত অপর চিকিসৎসক ডা. সেলিম বলেন, গত দেড়মাস ধরে প্রতিদিন ২জন করে চিকিৎসক এখানে শিফট অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। এখানে আমরা ভারত-বাংলাদেশে আগমন ও বহির্গমনরত ব্যক্তিদের থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে ভারতেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। যার ফলে এখানে কাজ করতে এসে আমরা ভীতিকর অবস্থার মধ্যে রয়েছি।
মেডিকেল ক্যাম্প সূত্র জানায়, গত ২৯ জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত ক্যাম্পে ৪৩৭ জনের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া যায়নি।
সূত্র আরও জানায়, কোন ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলে অথবা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহ হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করার জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য এএসআই আশিকুর রহমান বলেন, মেডিকেল ক্যাম্প থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আমাদের কাছে লিখিত রিপোর্ট নিয়ে আসলেই শুধুমাত্র আমরা ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করছি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ব্যতীত কোন যাত্রীকে আমরা ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করছিনা।
মেডিকেল ক্যাম্পের সমস্যার বিষয়ে উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল খালেক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মেডিকেল ক্যাম্পের যাবতীয় সরঞ্জাম এবং হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের সরঞ্জামের জন্য আমি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করেছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আশাকরি সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াতরত মালবাহী গাড়ির ড্রাইভাররা কোনরকম স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই আসা-যাওয়া করছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলছেন, এভাবে কোনো প্রকার চেকআপ ছাড়াই তাদের আগমন-বহির্গমনে আমরা ঝুঁকিতে রয়েছি।
এ প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, স্থলবন্দরে মেডিকেল দলটির জন্য গ্লাভস, গাউন ও মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। যদি তারা গাউন না পেয়ে থাকেন তাদের আজকেই পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, স্থলবন্দরে এখন পর্যন্ত কারো শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। তবে সন্দেহজনক মনে হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে প্রেরণ করা হবে। প্রয়োজনে সেখান থেকে তাদের ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হবে।