হবিগঞ্জ বিআরটিএ’তে কমছে না দালাল চক্রের উৎপাত

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, হবিগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হবিগঞ্জ বিআরটিএ অফিস/ ছবি: বার্তা২৪.কম

হবিগঞ্জ বিআরটিএ অফিস/ ছবি: বার্তা২৪.কম

অনিয়ম-দুর্নীতির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে হবিগঞ্জ বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) অফিস। জেলা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না দালাল চক্রকে। এদের খপ্পরে পড়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা।

অভিযোগ রয়েছে, খোদ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশ্রয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠছে দালাল চক্রটি। ওই অফিসে দালালদের কর্তৃত্ব এতটাই যে তাদের ছাড়া কোন কাগজপত্রই ইন-আউট হয় না।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, দালালদের লাগাম টানতে সম্প্রতি বিআরটিএ অফিসে সিসিটিভি স্থাপন করা হয়। সেসময় দালালদের উৎপাত কিছুটা কমলেও সম্প্রতি আবারও বেড়ে যায় তাদের বিচরণ। ভুক্তভোগীরা বলছেন- রহস্যজনক কারণে অফিসের সিসিটিভি অকেজো হয়ে পড়েছে। যার কারণে দালালরা আবারও বেপরোয়া ভূমিকায় চলে আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটরসাইকেলসহ হালকা যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রথমে সরকার নির্ধারিত ৫শ’ ৩৮ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। পরে ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আরও দুই হাজার ৩শ’ টাকা জমা দিতে হয়। সব মিলিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে একজন ব্যক্তির খরচ হয় দুই হাজার ৮শ’ ৩৮ টাকা। কিন্তু হবিগঞ্জ বিআরটিএ অফিস থেকে হালকা যানবাহনের এ লাইসেন্সটি পেতে গ্রাহককে গুনতে হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও প্রতিটি সিএনজি’র লাইসেন্স, রোড পারমিট ও গাড়ির নাম্বার প্লেটের জন্য সরকারি নির্দেশনা মতে জমা দিতে হয় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার টাকা। আর এখানে গ্রাহককে গুনতে হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সরকার নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত টাকাগুলো যায় দালাল ও অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের পকেটে।

হবিগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের এ সমস্যা একদিন বা দুই দিনের নয়। বছরের পর বছর ধরে দালালদের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সেবা গ্রহীতারা। সম্প্রতি বিষয়টি নজরে আসে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের। তিনি বেশ কিছু অভিযান চালান জেলা বিআরটিএ অফিসে। প্রতিটি অভিযানেই ১ থেকে ২ জনকে আটক করে জেল জরিমানা দিয়েছেন। দালাল নির্মূলে সম্প্রতি তিনি সম্পূর্ণ অফিসকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসেন। এতে কপালে ভাঁজ পড়ে দালালদের।

কিছুদিনের জন্য বিআরটিএ অফিসে বন্ধ হয়ে যায় তাদের আনাগোনা। কিন্তু গেলো কয়েকদিন ধরে তাদের উৎপাত আবারও বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি নজরে আসলে বুধবার সেখানে অভিযান চালান জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। এ সময় সন্দেহজনকভাবে একজনকে আটক করেন তিনি। পরে অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে সেটি অকেজো হওয়ার বিষয়টিও সামনে আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের এক কর্মী জানান, সিসিটিভি অকেজো হওয়ার কারণেই আবারও দালালদের বিচরণ বেড়ে গেছে। ফলে পূর্বের ন্যায় বেড়ে গেছে বিআরটিএ অফিসে গ্রাহক হয়রানি।

তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন হবিগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক মো. নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, দালাল নির্মূল করতে বিআরটিএ অফিস যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সিসিটিভি অকেজো হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিআরটিএ অফিসের সিসিটিভি সচল রয়েছে। বুধবার সেটাতে একটু ত্রুটি দেখা দিয়েছিল।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, শুধু বিআরটিএ অফিসই নয়, যে কোনো অফিস থেকে দালাল নির্মূল করতে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে দালালদের জেল-জরিমানা দেয়া হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।