‘অনেক কাকুতি-মিনতি করি, সন্তানের কসম দেই’
‘প্রথমে আমাকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়, এরপর আমার হাত ও চোখ বেঁধে ফেলে। এনকাউন্টারে দেয়া হবে বলে আমাকে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। গাড়িতেই মারধর করছিল। অনেক আকুতি মিনতি করি, আমার সন্তানের কসম দেই, প্রাণ ভিক্ষা চাই। তবু তারা থামছিল না’।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে কথাগুলো বলছিলেন সদ্য জামিন পাওয়া সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। রোববার (১৫ মার্চ) সকালে ২৫ হাজার টাকা জামানত রেখে আরিফুলের জামিন দেয়া হয়। পরে তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে। সেখানে বার্তা২৪.কমকে তার ওপর চালানো নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন আরিফুল।
তিনি বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে ঘরের দরজা ভেঙে আমার ওপর প্রথমে আঘাত করেন আরডিসি। উনি আমার ওপর শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন। মাইক্রোবাসে উঠিয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত ও চোখ বেঁধে ফেলা হয়।
এদিকে কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনের প্রত্যাহারের খবর প্রকাশ হওয়ায় জেলার সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শ্যামল ভৌমিক বলেছেন, জেলা প্রশাসক চত্বরে যে পুকুরটি নিয়ে এতো কথা সেটি বিভিন্নভাবে কাবিখা-কাবিটা এ সমস্ত কিছু টাকা নিয়ে এসে পুকুরটি খনন করেন এবং এখানে অনেক অর্থ ব্যয় করেন।
পরে এটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের বাংলা ট্রিবিউনসহ আমার জানামতে জি টিভিতেও একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছিল। এরই প্রতিবাদে জিটিভির সাংবাদিক জাহিদুল ইসলমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি এবং তার সাংবাদিকতা খেয়ে ফেলবেন বলেও হুমকি দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে রিগ্যানকেও এভাবে ডেকে নিয়ে যে প্রাইভেট কলেজে চাকরি করেন সেখান থেকে চাকরিচ্যুত করারও হুমকি দেয়। সর্বশেষ ডিসির নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। এই জন্যই আরিফুলকে গত পরশু দিন ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। রিগ্যান আজকে আমাদেরকে এসব নির্যাতনের কথা বলেছেন। আমরা এই সমস্ত যারা সাংবাদিক নির্যাতন ও অত্যাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলো তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ মার্চ) রাত ১২টার পর জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট আনসার সদস্যদের নিয়ে সাংবাদিক আরিফুলের বাড়িতে উপস্থিত হন। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক দরজা ভেঙে তার ঘরে প্রবেশ করে স্ত্রী সন্তানের সামনেই মারধর করে ধরে নিয়ে আসেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগে তাকে ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
আরও পড়ুন- সাংবাদিক আরিফুলের জামিন
ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাংবাদিক আরিফের সাজার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট