যশোরে আরডিসি নাজিমের অঢেল সম্পদ, উৎস নিয়ে প্রশ্ন

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নির্মাণাধীণ পাঁচতলা বাড়ি, ইনসেটে নাজিম উদ্দীন /ছবি: বার্তা২৪.কম

নির্মাণাধীণ পাঁচতলা বাড়ি, ইনসেটে নাজিম উদ্দীন /ছবি: বার্তা২৪.কম

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে নির্যাতনকারী কুড়িগ্রামের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দীন তার স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে কোটি টাকার জমি কিনেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে যশোরের মণিরামপুর পৌরশহরে কেনা ওই ৮ শতক জমির ওপর পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি আলিশান বাড়ি তৈরি করছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৬ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে কাশিপুর গ্রামে গিয়ে বাড়িটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কথা হয় বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে।

৮ শতক জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে ভবনটি

স্থানীয় লোকজন জানান, নাজিম উদ্দীন মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের মৃত নিছার আলীর ছেলে। পিতার বৈবাহিক সূত্র ধরে উপজেলার কাশিপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই থাকতেন নিছার আলী। দরিদ্র পরিবারের সন্তান নাজিম উদ্দীন মেধাবী হওয়ায় লেখাপড়ায় স্থানীয়রা সহযোগিতা করেছেন। তার বাবা দিনমজুর বাবা জামায়াতের সমর্থক ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রথমে নিছার আলী টালি ভাটার শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু নানার পরিবার আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ায় নাজিম উদ্দীনের উপরের উঠার সিঁড়ি পেতে অসুবিধা হয়নি। নাজিম উদ্দীন মণিরামপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে মনিরামপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে লেখাপড়া করেছেন।

মনিরামপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালীন আহবায়ক সন্দীপ ঘোষ জানান, নাজিম উদ্দীন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলো। নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার, বাগেরহাট ও মাগুরার মহাম্মদপুরে সহকারি কমিশনার (ভূমি) থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগসহ এক বৃদ্ধকে টেনে হিঁচড়ে মারতে মারতে নেয়ার ভিডিও ইতোমধ্যে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অ্যাসিল্যান্ড থাকাকালীন তিনি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বিপুল অংকের অর্থ আয় করেন।

বাড়ি তৈরির জন্য রেখে দেওয়া নির্মাণ সামগ্রী

অনুসন্ধানে জানা যায়, মনিরামপুর পৌর এলাকার ৯৩ নম্বর গাংড়া মৌজার ৫৯৬ দাগের (আরএস চূড়ান্ত) ২৫ শতক জমির মধ্যে ১৪.৬৯ শতাংশ জমি ৪৬ লাখ টাকায় কিনেন। যা গাংড়া গ্রামের আকবর আলীর কাছ থেকে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই তার শ্বশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (অব.) আব্দুর রাজ্জাকের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। কিন্তু জমির সেলামি তোলা হয় ৩০ লাখ টাকা।

জমির দত্তা ( সাবেক মালিক) আকবর আলী জানান, স্থানীয় মোসলেম উদ্দীনের মধ্যস্থায় ৪৬ লাখ টাকায় তিনি ওই জমি বিক্রি করেন। যা আব্দুর রাজ্জাকের জামাই ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দীন কিনেছেন। কিন্তু দলিল করা হয় নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাকের নামে। মনিরামপুর ৯৪ নম্বর মৌজায় ৮৩ খতিয়ানের ১৩২ দাগের ( আরএস চূড়ান্ত) ৩২.২৫ শতকের মধ্যে ৮ শতক জমি ১৩ লাখ কেনা হয়। যা উপজেলার কাজির গ্রাম মো. মোকলেছুর রহমানের কাছ থেকে ৬ শতক এবং তার স্ত্রী মোছা. নাজমুন নাহার রুপার কাছ থেকে ২ শতক সর্বমোট ৮ শতক জমি নাজিম উদ্দীনের স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রি করা হয়। সেখানে রেজিস্ট্রিকৃত জমি নাজিম উদ্দীনের স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে হলেও সেখানে স্বামীর নাম না দিয়ে বাবা (নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর) আব্দুর রাজ্জাকের নাম দেয়া হয়েছে। এই জমির উপর নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁচতলা ভবন। ইতোমধ্যে যার চারতলা সম্পন্ন হয়েছে।

ভবন নির্মাণে কর্মরত শ্রমিক লিটন হোসেন জানান, গত এক বছর ধরে পাঁচতলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। শহিদুল ইসলাম শহিদ নামের এক ব্যক্তি এটি কন্ট্রাক নিয়েছেন।

ভবনটি নাজিম উদ্দীন নির্মাণ করছেন বলেও জানান লিটন।

ভবনটির প্রধান রাজমিস্ত্রি আতিয়ার রহমান জানান, পাঁচতলা ভবনের চারতলার কাজ শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

এদিকে নাজিম উদ্দীন দাবি করেছেন, পেনশনের টাকা দিয়ে তার শ্বশুর গাংড়া মৌজায় ৮ শতক জমি কিনেছেন। আর ভবনটি নির্মাণ করছেন তার প্রবাসী শ্যালিকা। আসলে তার কিছুই নেই।

তবে তার কথার সঙ্গে মনিরামপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে পাওয়া তথ্যের কোনো মিল নেই।

ওই অফিস সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১ মার্চ অবসরে যান নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাক। অবসরের ৪ দিন পর পেনশনের ৮ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ টাকা উত্তোলন করেন তিনি।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, আব্দুর রাজ্জাক পেনশন তুলেছিলেন ৮ বছর আগে। তাও মাত্র ৮ লাখ টাকা। আর তিনি ৪৬ লাখ টাকায় জমি কিনলেন কিছুদিন আগে।

সম্পদের উৎস সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন তারা।