মাঠে সূর্যমুখী ফুলের হাসি
বহুমুখী পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ উৎকৃষ্ট তৈলজাতীয় ফসল। বিদেশি এ ফুলের নাম সূর্যমুখী। বিশ্বে এ ফুলের স্থান চতুর্থ। বিশ্ববাজারে সয়াবিনের পর সূর্যমুখী স্থান দখল করে নিয়েছে। রাশিয়া, আর্জেন্টিনা, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে সূর্যমুখীর আবাদ হয় বেশি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানেও এ ফুল চাষ বেড়ে চলছে।
সূর্যমুখী চাষে সফলতাও পেয়েছে বিভিন্ন এলাকার চাষিরা। ইউটিউবে সূর্যমুখী ফুল চাষে চাষিদের সফলতার ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হন যশোরের মণিরামপুরের ফারুক হোসেন। শুরু করেন সূর্যমুখী ফুলের চাষ। তৈলজাতীয় ফুল চাষে নিজের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার পাশাপাশি উপজেলার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান তৈরিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন কৃষি ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখার স্বপ্ন দেখছেন এই ফারুক হোসেন।
মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, মণিরামপুর-খেদাপাড়া সড়কের খড়িঞ্চি পাওয়ার হাউজের বিপরীতে মাঠে বসন্তের মৃদু বাতাসে দুলছে ফারুকের সূর্যমুখীর ক্ষেত। দূর থেকে প্রতিটি গাছে ফুটে থাকা ফুল মুগ্ধ করছে পথচারীদের।
উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামের কৃষক পরিবারের মাস্টার্স পড়ুয়া ছাত্র ফারুক হোসেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি চাষ কাজ শুরু করেছেন তিনি। কৃষি অফিসের উদ্যোগে পিতা জুলফিক্কার আলীর একবিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন ফারুক। ফুলের প্রতি ভালবাসা আর নিরাপদ ভোজ্য তেল উৎপাদনের লক্ষে এই চাষে ঝুঁকেছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে, প্রায় ২০-২৫ বছর আগে মণিরামপুরে সূর্যমুখীর চাষ হতো। টিয়াপাখির উৎপাত ও বাজারে সয়াবিন তেলের আধিক্যের কারণে এ এলাকা থেকে সূর্যমুখীর চাষ একেবারেই হারিয়ে যায়। তেল জাতীয় ফসলের প্রযুক্তিগত বিস্তারের লক্ষে বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মণিরামপুরে পরীক্ষামূলক এস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখীর তিনটি প্রদর্শনী প্লট তৈরি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। প্লটগুলোতে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ধানের থেকে অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এই চাষে আগ্রহী হবেন বলে আশাবাদী কৃষি অফিস। প্রতি বিঘায় ১১ থেকে ১২ মণ সূর্যমুখীর বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্লটগুলোতে। যার মণপ্রতি বাজার দর দুই ৫ শ’ টাকা। আর চাষের ১ শ’ ২০ দিনের মধ্যেই এই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।
ফারুক হোসেন বার্তা ২৪.কমকে বলেন, যশোর সরকারি এমএম কলেজে ইসলামের ইতিহাসে মাস্টার্স ছাত্র আমি। পিতার ১৪-১৫ বিঘা জমি থাকলেও কখনো চাষকাজ করেনি। ফুলের ছোট বেলা থেকেই আমার প্রিয়। বিভিন্ন ইউটিউবে সূর্যমুখী চাষে বিভিন্ন এলাকার চাষীদের সফলতার ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ফুল চাষে আগ্রহী হই। তারপর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দর্পন বিশ্বাসের উৎসাহে একবিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ শুরু করি। কৃষি অফিস আমাকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ ও সার বীজ দিয়ে সহায়তা করেছেন। গত ২২ ডিসেম্বর জমিতে বীজ বপণ করেছি। প্রায় সব গাছেই ফুল ফুটেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকেরা ফসল দেখতে আমার জমিতে আসছেন। এসব দেখে আমার খুব ভাল লাগছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারব বলে আশা করি। তার সফলতা দেখে উপজেলার অনেকেই তার জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা তার।
ফারুক হোসেন আরো বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতা ছাড়াও এক বিঘা জমির ফসল ঘরে তুলতে আমার ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হবে। লাভ কেমন হবে বুঝতে পারছি না। যদি লাভ দেখি আগামীতে আরো দুই বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ বাড়াবো।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দর্পন বিশ্বাস বার্তা ২৪.কমকে বলেন, এই এলাকার মাটি এবং আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আমরা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পক্ষ থেকে সর্বদা বাগানটি পরিদর্শন করে চাষিকে উপযুক্ত পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি ফারুক হোসেনের মাধ্যমে উপজেলার কৃষিতে সূর্যমুখী দিয়ে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে।
মণিরামপুর কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ধানের থেকে লাভজনক ও স্বাস্থ্যসম্মত কোলেষ্টরলমুক্ত তৈল জাতীয় ফসল সূর্যমুখী। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় মাঠ পর্যয়ে কৃষকদের এই ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। উপজেলা ফারুক হোসেনের প্রদর্শনী প্লট দেখে ইতোমধ্যে অনেক চাষী সূর্যমূখী চাষ করতে আমাদের পরামর্শ নিচ্ছেন। আশা করছি আগামীতে মণিরামপুরে এই চাষ বৃদ্ধি পাবে।