দুই মাস ধরে বন্ধ বালিয়াকান্দি টেকনিক্যাল কলেজের নির্মাণ কাজ
রাজবাড়ীতে ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বালিয়াকান্দি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণ কাজ প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢালী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।
নির্মাণ কাজের মেয়াদ প্রায় দেড় বছর আগে হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তার নেই কোন নিশ্চয়তা। এনিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বার্তা২৪.কমকে বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে তো পারেইনি। এখন আবার কাজ বন্ধ রয়েছে। এর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাই দায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কাজ শেষ না হওয়ায় এলাকার অনেক শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থানীয় আরও দুই বাসিন্দা নাম প্রকাশ করার না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারল না। যেভাবে কাজের গতি তাতে কবে শেষ করতে পারবে তাও বলা মুশকিল।
অভিযোগের আঙুল যাদের দিকে সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের দাবি নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ একেবারে বন্ধ নেই। বালু ভরাট করতে প্রথমদিকে অনেক সময় লাগার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের আওতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ে ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ (টিএসসি) প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার।
এই প্রকল্পের আওতায় পাঁচতলা ভিত বিশিষ্ট পাঁচতলা একাডেমিক কাম চারতলা প্রশাসনিক ভবন ও ওয়ার্কশপসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৪ মে। যার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে ঢাকার নিকুঞ্জু এলাকার ঢালী কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে। প্রতিটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যা ৫৪৯ দিনে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জিল্লুল হাকিম আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কোন নির্মাণ শ্রমিককেই দেখা যায়নি। দীর্ঘ কয়েক মাস কাজ বন্ধ থাকায় যত্রতত্র পড়ে রয়েছে রড। রডগুলোত মরিচা ধরে গেছে।
তবে প্রতিষ্ঠানটির মালামাল পাহাড়া দেওয়ার জন্য একজন নাইটগার্ড ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উপ-সহকারি প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদকে দেখতে পাওয়া যায়।
ফিরোজ আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আপাতত কয়েক দিন কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই কাজ আবার চালু হবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা উপ-সহকারি শিক্ষা প্রকৌশলী সাগর হালদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সাময়িক কিছু সমস্যার কারণে কাজটি ধীর গতিতে চলছে এবং কিছুদিন বন্ধও ছিল। কাজটি দ্রুত শুরু ও শেষ করার জন্য আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বেশ কয়েকবার চিঠিও দিয়েছে। এখন কাজ চলছে, তবে খুবই ধীর গতিতে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষার উপর বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। কেন বালিয়াকান্দিরটি বন্ধ রয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হবে এবং যাতে দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।