দিবস এলেই কদর বাড়ে লাঠি খেলার
মুজিব বর্ষের প্রথম দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় লাঠি খেলা দেখতে উৎসুক সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বাদ্যের তালে তালে নানা রং-য়ে ঢং-য়ে নেচে গেয়ে দর্শকদের আনন্দ দিচ্ছেন খেলোয়াড়রা। তবে তাদের নেই কোনো সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা। শুধু উৎসব এলেই কদর বাড়ে এই বিলুপ্তপ্রায় খেলার। এরই মধ্যে প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে দা-য়ের একটি খেলা। তাই খেলোয়াড়দের দাবি সরকারিভাবে এই খেলাকে সার্বিক সহযোগিতা করার।
সরজমিনে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) আশুগঞ্জ লাঠি খেলা দেখতে গিয়ে জানা যায়, ঠিক কবে থেকে লাঠি খেলা বাঙালি ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে তা জানা নেই। তবে ব্রিটিশ আমলেরও আগ থেকে বিভিন্ন এলাকায় এই খেলা প্রচলিত আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলেও লাঠি খেলা দেখানোর একটি গ্রুপ রয়েছে। জেলা থেকে একমাত্র তারাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে লাঠি খেলা দেখিয়ে আসছে। বাপ-দাদার কাছ থেকে পাওয়া এই ঐতিহ্যবাহী খেলাকে শুধুমাত্র মানুষের আনন্দ দেয়ার জন্য খেলোয়াড়রা এই খেলা খেলেন। মোবাইল ও ভার্চুয়াল জগতের নানান খেলার ভিড়ে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাটি আজ বিলুপ্তপ্রায়।
সারাবছর এই খেলা নিয়ে খোঁজ থাকে না কারোর। খেলোয়াড়রা নিজের পকেটের টাকা দিয়ে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য খেলে যাচ্ছেন। দর্শকদের বিনোদন দিতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এই খেলাকে পরিচিত করার জন্যই এই আয়োজন সবসময়ই করা দরকার বলে মনে করছেন খেলোয়াড়রা। বর্তমানে সরাইল লাঠি খেলার গ্রুপে প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। কিন্তু প্রত্যেকেই অন্য পেশার সাথে যুক্ত।
লাঠি খেলোয়াড় সরাইলের বিশুতারা এলাকার ফয়সাল র্বাতা২৪.কমকে জানান, লাঠি খেলা সবসময় থাকে না। তাই অন্য পেশায় নিজেকে যুক্ত করেছি। তারপরেও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় কেউ দাওয়াত করলে কাজ ফেলেই চলে আসি। তবে খেলতে এসে যে টাকা পাই এতে করে আমাদের সংসার চালানো দায়।
একই এলাকার ইয়াকুব আলি বার্তা২৪.কমকে জানান, বাপ-দাদারা এই খেলা আমাদের শিখিয়ে গেছেন। তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও খেলে যাচ্ছি। তবে নতুন প্রজন্ম এই খেলাটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এই খেলাটি ধরে রাখতে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কোন সহযোগিতা আমরা পাই না।
সরাইল লাঠি খেলা গ্রুপের পরিচালক আনু মিয়া বার্তা২৪.কমকে জানান, নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটিকে টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই অনেকে খেলার পাশাপাশি ব্যবসা কিংবা চাকরি করতে হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন সরাইলের লাঠি খেলার পরিচালক আনু মিয়া।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বার্তা২৪.কম-কে জানান, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খেলাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের দাওয়াত করা হয়। তাদের জীবন জীবিকা রক্ষার জন্য যে কোন ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তাদের সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবেও যোগাযোগ করব। এছাড়াও খেলা দেখাতে গিয়ে তাদের যে সমস্যাগুলো হয় তা শুনে সমাধানের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবো।