ঢাকা ছাড়ছে মানুষ
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারেণে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তাই প্রতিরোধেই একমাত্র ভরসা। শুধুমাত্র কিছু সতকর্তা অবলম্বন করলেই এই ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যায়। তাই সতর্কতা সৃষ্টির মাধ্যমে ও গণজমায়েত রোধে জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।
এরই অংশ হিসাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, বিভিন্ন সভা সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, রেস্টুরেন্টসহ গণজমায়েত হয় এমন সকল স্থান ও কর্মকাণ্ড বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বিয়েসহ বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠান ঘরোয়াভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে একটি জেলা ব্যতীত আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই ভাইরাসে তেমন প্রভাব এখনো পড়েনি। আর এই সুযোগে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকেই।
শুক্রবার (২০ মার্চ) সকালে সাভার, নবীনগর, বাইপাইল বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়। করোনাভাইরাসের কারণে পরিবহন বন্ধ ঘোষণা হতে পারে এমন আশঙ্কায় অনেকে গ্রামে যাচ্ছেন। তবে রাজধানী ঢাকাতে বসবাস করা মানুষ এভাবে গ্রামে গেলে সেখানেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
আশুলিয়ার বাইপাইলের বাসের টিকেট কাউন্টারে গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা পোশাক শ্রমিক সুমন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশ থেকে কারখানার কাঁচামাল না আসায় কারখানা ১৫ দিনের জন্য ছুটি দিয়েছে তাই আমার গ্রামের বাড়ি বগুড়া যাচ্ছি। তাছাড়া করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় থাকার দরকার কি।
আশুলিয়ার নবীনগর কাউন্টারে বাসের টিকেট কিনছেন ফারজানা। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি গৃহিণী। বাসায় থাকি। আমার স্বামী বাইরে কাজ করেন। সারাদিন চাকরির কারণে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় তার। তিনি জোরপূর্বক আমাকে বাড়িতে পাঠাচ্ছেন। করোনার ভয়ে তিনি আমাকে আর ঢাকায় থাকতে দিচ্ছেন না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর যাচ্ছি।
বাইপাইলে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আকাশ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে টিকেট বিক্রির চাপ তুলনামূলক একটু বেশি। অনেক কারখানা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। অনেকে বাসায় থেকে লেখাপড়া করতো তারাও গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে। এছাড়া করোনার প্রভাবে পরিবহনের একটু সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য অনেক যাত্রী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মিলন মিয়া বলেন, আমাদের সব সময় মোটামুটি যাত্রীর চাপ থাকে। কিন্তু এখন তুলনামূলক অনেক বেশি। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো অনুষ্ঠান মনে হয়। তাই যাত্রীর চাপ বেশি। পরে জানতে পারলাম করোনাভাইরাসের ভয়ে সবাই গ্রামে ছুটছেন। করোনাভাইরাসের কারণে দেশ ট্রাভেলস বন্ধ আছে। আমার মনে হয় সব গাড়িই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই এখনই যা টিকেট বিক্রির তা করে নিচ্ছি। আর এখন যাত্রীর চাপ অনেক বেশি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, দুই একটি ছোট কারখানা কাজের অভাবে নিভু নিভু করছিলো। সে সব কারখানা ছুটি দিয়েছে। এছাড়া যে সব কারখানা বিদেশি কাঁচামাল নির্ভর সে সব কারখানা কাঁচামালের অভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া যে সকল কারখানা খোলা আছে সে সকল কারখানায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সকল কারখানায় সতর্কতা শুধু মাস্ক পরিধানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সকল খোলা পোশাক কারখানায় প্রয়োজনীয় সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মোঃ ইমাম বলেন, আমাদের দেশে যে ক'জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে তারা কেউ প্রবাসী কেউ প্রবাসীর পরিবারের সদস্য। এই প্রাবাসীদের মাধ্যমে ভাইরাসটি বাংলাদেশে এসেছে বলে আমার মনে হয়। ঢাকায় করোনা আক্রান্ত রোগী আছে তাই গ্রামকে সুরক্ষায় রাখতে ঢাকা থেকে গ্রামে না যাওয়াই ভালো। আমি মনে করে সতর্কতা অবলম্বন করলে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব।