নবীগঞ্জে সঙ্গরোধ দেখতে ভিড় নয়, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব ছিল
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে বিদেশ ফেরত এক দম্পত্তির পারিবারিক দ্বন্দ্বকে করোনাভাইরাসের দিকে প্রবাহিত করে ভুল তথ্যের মাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়ায় জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বিভ্রান্তিতে পড়েছেন ওই প্রবাসীর পরিবার ও প্রশাসন।
সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ পৌর শহরের গুয়াউড়ি গ্রামের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ধনঞ্জয় দেব ও তার স্ত্রী সম্প্রতি দেশে ফিরেন। কিন্তু ওই দম্পতির মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। দেশে ফেরার পর ঢাকা আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দরের পৌঁছা মাত্রই ধনঞ্জয় দেব তার স্ত্রীর পাসপোর্টসহ সকল কাগজপত্র রেখে স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার ধনঞ্জয় দেবের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদের বাড়িতে আসেন। এ সময় ধনঞ্জয় বাড়িতে ছিলেন না। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় আশপাশের লোকজন জড়ো হন। কয়েকজন অতি উৎসাহিত ব্যক্তি জড়ো হওয়া মানুষের ছবি তুলে করোনাভাইরাসের বিষয় জড়িয়ে সামাজিক যোগগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করেন। পরে উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এ সময় নবীগঞ্জ পৌর মেয়ার ছাবির আহমেদ চৌধুরী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা বিষয়টির সাময়িক সমাধান করে দেন এবং পরে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হওয়া ছবিটি দিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুইটি পত্রিকা ও কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যম ভুল সংবাদ পরিবেশন করেন। স্বামীর-স্ত্রীর এই দ্বন্দ্বকে তারা করোনাভাইরাসের দিকে প্রবাহিত করে ‘কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীকে দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়’ উল্লেখ করে সংবাদ প্রচার করেন। সংবাদটি নিমেষেই ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় ওই প্রবাসীর পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসনকে।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিশ্বজিৎ কুমার পাল।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকাসহ কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যমে মিথ্যে সংবাদ প্রচার করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভ্রান্তিতে পড়েছি। তারা স্বামী স্ত্রীর দ্বন্দ্বকে করোনাভাইরাসের সঙ্গরোধ (কোয়ারেন্টাইন) দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশন করেছে। যা জনগণ ও আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
পৌঁর মেয়ার ছাবির আহমেদ বলেন, ‘তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। যে বিষয়টি আমরা সমাধান করে দিই। কিন্তু এ বিষয়টিকে নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে।’
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর পরিবারের লোকজন আমাকে জানিয়েছে যে সে এখনও বাড়িতে আসেনি। এখনও আত্মীয়ের বাড়িতে সে অবস্থান করছে। তবে যদি বাড়িতে আসে তাহলে যেন তাকে সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টাইন) রাখা হয় সেজন্য বলা হয়েছে।’