সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেনীর বেসরকারি হাসপাতালগুলো

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এভাবেই করা হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা/ছবিঃ বার্তা২৪.কম

এভাবেই করা হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা/ছবিঃ বার্তা২৪.কম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে এবং সচেতনতার লক্ষ্যে সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা থাকলেও ফেনীর একাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এমন কিছুর দেখা মেলেনি। জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রত্যেক হাসপাতালে আলাদা ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তা পরিলক্ষিত হয়নি।

শনিবার (২১ মার্চ) শহরের ১২টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে দেখা গেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী ৮টিতেই আলাদাভাবে কোন হাত ধোয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। প্রবেশদ্বারের আশেপাশে হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা নেই।

বিজ্ঞাপন

শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে ফেনী ক্লিনিকে দর্শনার্থী এবং রোগীদের সংক্রমণ রোধে হাত ধোয়ার বিশেষ কোনো ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান জানান, আমরা এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ হতে করোনা সচেতনতা সম্পর্কিত কিছু পোস্টার ব্যতীত আর কোনো নির্দেশনা পাইনি।

ফেনী জেলা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশন’র সভাপতি মো. হারুন উর রশিদ জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেকটি হাসপাতালকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রত্যেককে প্রত্যেকের নিরাপত্তার স্বার্থে সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে প্রত্যেক হাসপাতালে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে। এতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। জনসচেতনতায় রাস্তায় লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

জেড ইউ মডেল হাসপাতালে গিয়ে হাত ধুতে চাইলে অভ্যর্থনাকারী হাসপাতালের বাথরুম দেখিয়ে দেন। তিনি বলেন, সেখানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বাথরুমে গিয়ে দেখা যায়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অপরিষ্কার বেসিনে হাত ধোয়ার জন্য একটি মিনি সাবান রয়েছে।

সংক্রমণরোধে স্যানিটাইজার ও হাত ধোয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মুঠোফোনে নিউ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আবদুল মান্নান বলেন, রোগী ও দর্শনার্থীদের জন্য আমরা আলাদা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু প্রতিবেদক হাসপাতাল থেকেই ফোন করেছেন জেনে তিনি বলেন, দুঃখিত! আমরা ব্যবস্থা নেবো।

অন্যদিকে ফেনীর ডাক্তার পাড়াস্থ মা ও শিশু হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানের সামনের টিউবওয়েলে একটি সাবান রেখে দায়সারাভাবে দায়িত্ব সেরেছেন তারা। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাসরিন আক্তারের সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজী হননি।

রোগী, দর্শনার্থী এবং হাসপাতালে কর্মরতদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় শাহীন ক্লিনিক, ডক্টরস পয়েন্ট, আল বারাকা হাসপাতাল, স্কয়ার ল্যাবে নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা। কর্মরতদের হাতে দেখা যায়নি গ্লাভস। একাধিক হাসপাতালে কর্মরতদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

তবে ব্যতিক্রমী চিত্র পাওয়া গেছে ফেনী হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ফেনী কার্ডিয়াক সেন্টার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল এবং আল কেমী হাসপাতালে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এসব প্রতিষ্ঠানে নেয়া হয়েছে যথাযথ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কর্মরতদের মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস দেখা গেছে।

ফেনী কার্ডিয়াক সেন্টার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ মিলন জানান, হাসপাতালে আগত রোগী, দর্শনার্থীদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের কর্মকর্তারা নিজেদের নিরাপত্তায় মাস্ক, গাউন এবং হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করছেন। হিসাব বিভাগে টাকা গণনার ক্ষেত্রে গ্লাভস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আল কেমী হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা হাসপাতালের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে প্রতিটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানেই এ নির্দেশনা মেনে চলা উচিত।

মেডিনোভা হাসপাতালে বাইরে কিংবা প্রবেশদ্বারে হাত ধোয়ার কোন ব্যবস্থ নেই। তবে জরুরী বিভাগের ভেতরে বেসিন স্থাপন করেছে তারা।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন ভূঞা করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও নাগরিকের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রত্যেকেই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। সংক্রমণ বিস্তার রোধে যা করণীয় তাতে আমরা অভ্যস্ত নই। আমরা যেখানে সেখানে থুথু ফেলি, নিয়ম অনুযায়ী হাত পরিষ্কার রাখি না। এতে করে জনবহুল স্থানে একজন সংক্রমিত ব্যাক্তির দ্বারা অনেকে আক্রান্ত হতে পারেন। ফেনী একটি জনবহুল এবং প্রবাসী অধ্যুষিত জনপদ। তাই এখানে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি।

তিনি বলেন, এ ভাইরাসটি মূলত আমাদের নাক, চোখ ও মুখ দিয়ে দ্রুত সংক্রমণ ঘটায়। এজন্য যেকোনো জনবহুল স্থানে করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা থাকা জরুরি। গত ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সিভিল সার্জনকে প্রেরণ করা হয়। উক্ত চিঠির আলোকে ফেনীর সকল বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে আগত দর্শনার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগীদের বাধ্যতামূলকভাবে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য আগত জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের আলাদা লাইন করতে হবে।

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যানুযায়ী, ফেনীতে ২১ মার্চ পর্যন্ত ২শ ১৬ প্রবাসীসহ ১ হাজার ৪শ ৫৩ জনকে সঙ্গরোধে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৫২ জনের সঙ্গরোধ পূর্ণ হয়েছে। তাদের কারো মধ্যে করোনাভাইরাসের কোন উপসর্গ পাওয়া যায়নি। তাদের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ হতে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।