করোনা আক্রান্তের ঝুঁকিতে বেনাপোল বন্দরের স্বাস্থ্য কর্মীরা

  • আজিজুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

দেশে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জীবন বাজি রেখে বেনাপোল বন্দরে পাসপোর্ট যাত্রী ও ভারতীয় ট্রাক চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীরাই রয়েছেন সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঝুঁকিতে। একই ঝুঁকি রয়েছে পাসপোর্ট যাত্রী ও আমদানি পণ্য তদারকিতে নিয়োজিত পুলিশ ও বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা।

কর্মস্থলে আসা,যাওয়ার খরচ তো দূরের কথা জীবন রক্ষাতে যে সরঞ্জাম দরকার তাও পাচ্ছেন না স্বাস্থ্য কর্মীরা। এতে যেমন চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত ঘটছে তেমনি তারাও আতঙ্কেও ভুগছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিষয়টি একাধিকবার উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন কিন্তু কাজ হচ্ছেনা।

বিজ্ঞাপন

জানা যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল স্থলপথে ব্যবসা, চিকিৎসা ও ভ্রমণের কাজে প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার দেশ,বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকেন। তেমনি এপথে প্রায় ৪ শতাধিক ট্রাক পণ্য আমদানি ও দুই শতাধিক ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি হয়ে থাকে।

আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় বন্দরে তিন শতাধিক বিভিন্ন নিরাপত্তাকর্মী কাজ করছে। বর্তমানে করোনাভাইরাস ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় তা প্রতিরোধে দুই দেশের সরকার বেশ কিছু সর্তকতা নেয়। এতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বেনাপোল ইমিগ্রেশন,রেল ষ্টেশন ও আমদানি,রফতানি পণ্য প্রবেশ দ্বারে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় চেকপোস্ট বসানো হয়।

বিজ্ঞাপন

এসব স্থানে স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে যৌথভাবে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরাও। এছাড়া পাসপোর্ট যাত্রীদের তদারকীতে রয়েছেন আনসার,আর্মস ব্যাটালিয়ন পুলিশসহ বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা সংস্থা। প্রতিনিয়ত যাত্রীদের সাথে তাদের কথাবার্তা ও পাসপোর্ট দেখভাল করতে হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও পোশাক সরবরাহ না থাকায় তারা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী মহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতিনিয়ত ঝুঁকি ও ভয়ের মধ্যে যাত্রী ও ট্রাক চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ চালাতে হচ্ছে। কাজের সময় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও পোশাক দেওয়া হচ্ছেনা। এছাড়া প্রতিদিন যশোর শহরের বাইরে থেকে তাদের বেনাপোল কর্মস্থলে নিজ ব্যবস্থায় আসতে হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা বা কোন খরচ তাদের দেওয়া হয় না। এতে তারা দূর্ভোগ ও ভয়ের মধ্যে আছেন।

যাত্রীদের পাসপোর্ট তদারকিতে নিয়োজিত কয়েকজন আনসার সদস্য বলেন, তাদেরকে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জম দেয়নি। নিজ ব্যবস্থায় তারা মুখে কেবল মাস্ক ব্যবহার করে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী ও ট্রাক চালকদের সাথে কাজ করছেন। এতে তারা ও তাদের পরিবার আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

আসদানি, রফতানি পণ্য বহনকারী বাংলাদেশি ট্রাক চালক মোসলেম বলেন, এ আতঙ্কের মধ্যে পণ্য আনা নেওয়া করতে ভয় হলেও পেটের দায়ে সতর্ক থেকে তাদের দুই দেশের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে।

বেনাপোল

ভারত ফেরত বাংলাদেশি যাত্রী আরিফ হোসেন বলেন, ইমিগ্রেশনে আনসার, পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মীদের দেখলাম অসতর্কভাবে তারা চলছেন। হাতে, মুখে ও শরীরে কোন নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই। এতে তারাও আক্রান্ত হতে পারেন, এমন কি তাদের মাধ্যমে আমরাও আক্রান্ত হতে পারি।

উপজেলা ভাইচ চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, নিরাপত্তা সামগ্রীর অভাবে বন্দর ও ইমিগ্রেশনে ঝুঁকির মধ্যে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য কর্মীরা কাজ করছেন। যারা দেশকে ও মানুষকে নিরাপদ রাখতে রাখতে কাজ করছে তাদেরকে আগে সুরক্ষা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তারা সুরক্ষিত না থাকলে যাত্রীরাও আক্রান্ত হতে পারে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার আজিম উদ্দীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহের বিষয়ে তিনি বারবার উধ্বর্তন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছেনা। তিনিও কাজ করতে যেয়ে আক্রান্তের ভয়ে ভুগছেন। এছাড়া যাত্রী অনুপাতে জনবল সংকটেও কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মহাসিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনা আতঙ্কের মধ্যেও যাত্রীরা তাদের প্রয়োজনে এখনও পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করছেন। তবে গত ১৩ মার্চ বিকাল ৫টা পর হতে বাংলাদেশ থেকে সাধারণ যাত্রীদের ভারত প্রবেশ বন্ধ করেছে ভারত সরকার। রোববার (২২ মার্চ) থেকে ভারতীয়দেরও আসা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশি যারা ভারতে গিয়েছিলেন তারা এখনও ফিরছেন। এছাড়া যেসব ভারতীয়রা বাংলাদেশে ঢুকেছিলেন তারাও স্বাভাবিক নিয়মে ফিরছেন।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক(ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, বাণিজ্যের উপর বাংলাদেশ সরকারের কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বেনাপোল বন্দরে এখন পর্যন্ত পণ্য খালাস কার্যক্রম সচল রয়েছে। ব্যবসায়ীরা যাতে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রুত খালাস নিতে পারেন তার জন্যও পর্যাপ্ত জনবল বন্দরে আছে।