বেতনের জমানো টাকা দিয়ে ত্রাণ বিতরণ

  • সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতিবন্ধী অসহায় এক বৃদ্ধাকে ত্রাণ দিচ্ছেন জয় গোপাল, ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রতিবন্ধী অসহায় এক বৃদ্ধাকে ত্রাণ দিচ্ছেন জয় গোপাল, ছবি: বার্তা২৪.কম

আর্থিক সংকট নয় ইচ্ছাশক্তি থাকলেই মানুষকে সেবা করা যায়, তারই প্রমাণ করলেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির বহরপুর ইউনিয়নের বাঘুটিয়া গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারে সন্তান জয় গোপাল গোস্বামী।

নিজের সন্তান, বাবা আর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির উঠানে গ্রামের দুস্থ ও অসহায় মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছেন। গ্রামের দিনমজুর আর খেটে খাওয়া মানুষদের মুখে একটু আহার তুলে দিতে বেতনের জমানো টাকা দিয়েই ত্রাণ বিতরণ করছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের জন্য সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ করতে সরকার ১০ দিনের জন্য সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহনও। যার কারণে খেটে খাওয়া মানুষগুলো পড়েছে চরম বিপাকে। অসহায় মানুষের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য ঢাকায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীর দায়িত্বে থাকা জয় গোপাল গ্রামে ছুটে আসেন। যারা প্রকৃত দিনমজুর ও গরীব তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটি তালিকা তৈরি করেন। এরপর শুরু করেন ত্রাণ বিতরণ।

শুক্রবার (২৭ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে প্রায় দেড় শতাধিক অসহায় মানুষদের মাঝে ৫ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, একটি করে স্যাভলন সাবান, এক জোড়া হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক বিতরণ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে ত্রাণ সামগ্রী নেওয়ার জন্য বেশ কিছু সংখ্যক দরিদ্র মানুষ অপেক্ষা করছে। আর তার ছোট ছেলে, স্ত্রী ও তার বাবা প্যাকেট করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। যেগুলো প্যাকেট হয়ে যাচ্ছে সেগুলো সঙ্গে বিতরণ করে দেওয়া হচ্ছে। কোনো হৈ হুল্লোড় নেই, নেই কোনো জনসমাগম। যে যখন আসছে তার হাতে তখনই তিনি এগুলো তুলে দিচ্ছেন।

তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী ছেলে ও বাব

ত্রাণ নিতে আসা বাঘুটিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী রিনা দাস বলেন, ‘কি রোগের জন্য নাকি সরকার সব বন্ধ করে দিছে। বাইরে যাওয়া নিষেধ। ঘনঘন নাকি সাবান দিয়ে হাত ধুতি হবি। আজ কয়েকদিন হলো মানুষের বাড়িতে গিয়ে কোনো কাজ করতে পারছি না। কাজ না করলে খাব কী, পেটে ভাতই দিতে পারছি না, আবার সাবান দিয়ে হাত ধোব কীভাবে? আমাগের গ্রামের ছেলে পাঁচ কেজি চাল দিছে। এতে কয়েকদিন ভাত খেতে পারবানে।’

বারুগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুন্সী আমির বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘দেশের এই দুর্দিনে গরীব মানুষের পাশে যাদের দাঁড়ানোর কথা তাদেরকে এলাকায় চোখে পড়ছে না। জয় গোপাল যে কাজটি করছে তা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসার দাবিদার। সবাইকেই জয় গোপালের মতো এগিয়ে আসতে হবে।’

জয় গোপাল গোস্বামী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। খুব অল্প টাকা বেতন পাই। বেতনের টাকায় কিছু জমিয়ে ছিলাম। করোনার কারণে সরকার যেদিন ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে, সেদিনই বাড়ি চলে আসি। বাড়ি এসে দেখি গ্রামের অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। যারা দিন আনে দিন খায় তারা বেশ হতাশ হয়ে পড়েন। তাই আমি ভাবলাম আমাার কাছে যে টাকা আছে সেটা দিয়েই অন্তত কিছু একটা করি।’

বিবেকের তাড়নায় আমি আমার বেতনের অর্জিত জমানো টাকা দিয়ে গ্রামের মানুষের জন্য এইটুকু করতে পেরেছি এটাই আমার শান্তি।