শহীদ মুনীর চৌধুরী: শাসকের গদি তাড়া করে ফেরা এক ‘মুর্দা ফকির’

  • অসীম নন্দন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা টোয়েন্টিফোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

টাইপরাইটারে তখনো বাংলা টাইপ করার ব্যবস্থা চালু হয়নি। সময়টা ১৯৬৫ সাল। কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বাংলা টাইপিং-এর জন্য সর্বপ্রথম উন্নতমানের কীবোর্ড উদ্ভাবন করলেন একজন অসামান্য প্রতিভাবান মানুষ। মানুষটার নাম মুনীর চৌধুরী। তাঁর নাম অনুসারেই কী-বোর্ডের নাম রাখা হয়েছিল ‘মুনীর অপটিমা’।

১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর, কোনো এক হেমন্তের নবান্নের দিনে খানবাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী এবং উম্মে কবির আফিয়া বেগমের কোলে জন্ম নেন মুনীর চৌধুরী। পুরো নাম আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। ১৪ জন ভাই-বোনের মাঝে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর বাবা ছিলেন ইংরেজ আমলের জেলা ম্যাজিট্রেট। খানবাহাদুর সাহেবের প্রচুর বই সংগ্রহ করার শখ ছিল। যার ফলে ছেলেবেলাতে পরিবার থেকেই মুনীর চৌধুরী পেয়েছেন একটা চমৎকার সাংস্কৃতিক শিক্ষা। তাঁর বাবা তাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ২৭ খন্ডের এনসাইক্লোপিডিয়া উপহার দিয়েছিলেন। আর মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তিনি এই এনসাইক্লোপিডিয়ার বিশাল রাজ্যে বুঁদ হয়ে গিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

পরিবার থেকে ভালো সাংস্কৃতিক শিক্ষা পেয়েছিলেন বলেই হয়তো তিনি এমন অসামান্য ব্যক্তি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। অথচ যখন কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হলেন, তখন তাঁর বাবা তাকে মাসোহারা দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। তিনি বললেন, তোমার মতের সাথে আমার মতের যেহেতু বিস্তর অমিল; তাই তোমাকে পড়ালেখার খরচ দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মুনীর চৌধুরী তাঁর বাবার কথা মেনে নিলেন। এবং ছাত্রাবস্থাতেই সাহিত্যের মাধ্যমে সামান্য আয়-রোজগার করতে শুরু করলেন।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লিলি চৌধুরীর সাথে মুনীর চৌধুরী

ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করে ভর্তি হলেন কলকাতার আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাড়ির কড়া নিয়ম থেকে একটু আলগা পেতেই তিনি নিজের মতন উড়তে শুরু করলেন। পাঠ্যপুস্তকের পড়া তাঁকে বেশি টানতো না। তিনি লাইব্রেরিতে বসে বসে কাটিয়েছেন দিনের পর দিন। সাহিত্যের পড়াশোনা করতে গিয়ে আইএসসি পরীক্ষায় পেলেন দ্বিতীয় বিভাগ। তারপর এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে ভর্তি হলেন। তাঁর বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে ডাক্তার হবে। কিন্তু মুনীর চৌধুরীর ঝোঁক ছিল সাহিত্যে। কলেজে পড়ার সময়ই তাঁর পরিচয় ঘটে বিশ্বসাহিত্যের সাথে। তিনি নিজেই বলেছিলেন: “আলীগড় আমায় মোহিত করতে পারেনি। তবে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের যা আমাকে আকর্ষিত করেছিল, তা হচ্ছে এর বিশাল পাঠাগার। বিশ্বের সকল লেখকের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ যোগ হয় এই পাঠাগারে।”

বিজ্ঞাপন

আলীগড়ে পড়াকালীন সময়ে মুনীর চৌধুরী জাঁকজমকপূর্ণ শৌখিন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। পরনে দামী শেরওয়ানি আর পকেটে দামী সিগারেটের টান নিয়ে বিভিন্ন আড্ডায় যেতেন। এরপর যখন আলীগড় থেকে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তখন তাঁর পরিচয় ঘটে রবি গুহ, মদন বসাক, সরদার ফজলুল করিম, দেবপ্রসাদের মতন মেধাবী মানুষদের সাথে। তাঁদের সংস্পর্শে এসে তিনি বামরাজনীতিতে দীক্ষিত হন। এবং জাঁকজমকপূর্ণ শৌখিনতাকে ত্যাগ করে শুরু করেন অনাড়ম্বর জীবন।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন মুনীর চৌধুরীর সরাসরি ছাত্র। ছাত্র হলেও তাঁদের দুজনের মাঝে ছিল আন্তরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এছাড়া একসময় তাঁরা দুইজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকর্মীও হয়েছিলেন। আনিসুজ্জামান সাহেব তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুনীর চৌধুরী সম্পর্কে বলেছেন, “ছেচল্লিশ বছর বয়সে দেশদ্রোহী ঘাতকের হাতে নিহত একজন অসাধারণ প্রতিভাধর মানুষের নাম মুনীর চৌধুরী। অনেক বছর আগে আমি এই বাক্যটি লিখেছিলাম, অসাধারণ প্রতিভাধর বলতে কী বোঝাতে চেয়েছি, তারও একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম—আদর্শ শিক্ষক ও কুশলী বক্তা, সফল নাট্যপ্রতিভা ও ক্ষুরধার সাহিত্য-সমালোচক, জীবনের নিষ্ঠাবান রূপকার ও সমাজচেতনায় দীপ্ত পুরুষ। আমার কাছে তিনি আরও কিছু ছিলেন—শিক্ষক, বন্ধু, পথপ্রদর্শক, প্রেরণাস্থল।”

প্রথম বর্ষের ছাত্রাবস্থাতেই সলিমুল্লাহ হলের শ্রেষ্ঠ বক্তা হিসেবে জয় করেছিলেন প্রভোস্টস কাপ। অসামান্য বক্তা ছিলেন তিনি। যখন শিক্ষকতা করতেন, তখন তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্যও ক্লাসরুমে ভীড় জমতো। এছাড়া নাটকের রিহার্সাল এবং রাজনৈতিক সভায় সব জায়গাতেই সমানভাবে বক্তৃতা করতেন তিনি।

মুনীর অপটিমা কি-বোর্ডের লে-আউট

একসময় সক্রিয় রাজনীতি করা ছেড়ে দিলেন। ভাবলেন সংসার করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময় তাঁর পরিচয় এবং প্রেম ঘটে লিলি মির্জার সাথে। পরবর্তীতে তাঁদের দুজনের বিয়ে হয়। বাংলাদেশের অন্যতম মেধাবী সন্তান মিশুক মুনীরের জন্ম হয় তাঁদের ঘরেই। যদিও মুনীর চৌধুরী রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রাজনীতি তাকে কোনোদিন ছাড়েনি। সক্রিয় রাজনীতি ছাড়লেও বিভিন্নরকম এক্টিভিজমের সাথে তিনি জড়িত থাকতেন। সাংস্কৃতিকভাবে হলেও সম্পর্ক রেখেছেন রাজনীতির সাথে। সবশেষে রাজনীতির বিষাক্ত দংশনেই দেশদ্রোহী ঘাতকের হাতে গিয়েছে তাঁর প্রাণ।

তাঁর লেখা নাটকগুলোতে সবসময়ই আমরা পাই প্রবল হিউমার। কমেডির ধাঁচে দুনিয়ায় বাস্তবতাকে তিনি রূপায়িত করতেন নাটকে। তিনি যে তীক্ষ্ণ সমাজসচেতন এবং রাজনীতিসচেতন ছিলেন; তার প্রচ্ছন্ন ছায়া পাওয়া যায় নাটকগুলোতে। বেশ কিছু গল্প লিখেছিলেন অল্প বয়সে। তবে গল্পের চেয়ে নাটকের প্রতিই তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি।নাটক ছিল তাঁর প্রথম প্রেম। এছাড়া তিনি প্রখর সাহিত্যসমালোচকও ছিলেন। নাটক এবং সমালোচনা সাহিত্যকে তিনি অন্য এক মাত্রা দিয়েছিলেন। তাঁর লেখাগুলোতে আমরা পাই ইতিহাস-সচেতনতা এবং সমকালীন সমাজের নানান বিকারগ্রস্ত ছবি।

বাংলা-সাহিত্যে সার্থক প্রতিবাদী একাঙ্কিকা নাটক লিখেছিলেন তিনিই। ১৯৫৩ সালের জানুয়ারি মাসে ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্য তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের করা মানববন্ধনে তিনি ভাষা-শহীদদের পক্ষে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এজন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হলো। জেলে থাকাকালীন সময়ে রণেশ দাশগুপ্ত মুনীর চৌধুরীকে একটা নাটক লিখতে অনুরোধ করলেন। নাটকটি ভাষাশহীদদের স্মরণে জেলেই মঞ্চস্থ করা হবে। এবং নাটককে হতে হবে জেলে মঞ্চস্থ করার উপযোগী। কারণ জেলে তো তেমন আলোকসজ্জা করা সম্ভব নয়। এবং জেলে নারীচরিত্র থাকাও সম্ভব নয়। এই সকল কথা মাথায় রেখেই মুনীর চৌধুরী লিখলেন বাংলাসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘কবর’ নাটকটি। সকল দিক চিন্তা করে এইজন্যই তিনি ‘কবর’ নাটকের স্থান নির্বাচন করলেন গোরস্থানকে। জেলখানায় বন্দী থেকেও পাকিস্তানিদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার অপর নাম ‘কবর’। এর মধ্য দিয়ে তাঁর অসম্ভব সাহসিকতার পরিচয় পাই আমরা।

নাটকের চরিত্র শক্তিশালী হলেই কেবল শৈল্পিক-দিক থেকে নাটকের বুনন মজবুত হয়। ‘কবর’ নাটকের প্রধান চরিত্র তিনটি। একজন মাতাল অসৎ ক্ষমতার অপপ্রয়োগকারী রাজনৈতিক নেতা। একজন দূর্নীতিগ্রস্ত চাটুকার পুলিশ কর্মকর্তা। এবং একজন পাগল মুর্দা ফকির। নাটকের প্রেক্ষাপট ভাষা-আন্দোলন। ভাষা-আন্দোলনে শহীদ ছাত্রদের গণকবর দেবার জন্য গোরস্থানে নেয়া হয়েছে। অসৎ নেতা'র ভাষ্যমতে ভাষা-শহীদেরা হচ্ছে দুষ্ট ছেলের দল। আর দুষ্ট ছেলেদের নাকি গুলি করেই মারা উচিত। মদ খেয়ে মাতাল হবার মধ্য দিয়ে নেতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে হাফিজ পুরোটা সময় কেবল নেতার চাটুকারিতায় পঞ্চমুখ। নেতার নেকনজর পেতে সবসময় ব্যস্ত। আর নেতার কাছ থেকে ঘুষ খাওয়ার জন্য হাফিজ সবসময় উন্মুখ হয়ে থাকে। হাফিজ হচ্ছে সবচেয়ে ধূর্ত এবং কৌশলী চরিত্র; যে কিনা সকল দিক সামলিয়ে নিজের আখের গোছাতে চায়। ‘কবর’ নাটকের সবচেয়ে আকর্ষনীয় চরিত্র হলো মুর্দা ফকির। ৪৩'র দুর্ভিক্ষে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে। গোরস্থানেই সে বসবাস করে। মুর্দা ফকির হচ্ছে এই নাটকে রূপক-অর্থে সমাজের বিবেকের ছবি। রূপকধর্মী সংলাপের মধ্য দিয়ে ফকির আমাদেরকে বাস্তবতার সাথে পরিচিত করে।

“গন্ধ! তোমাদের গায়ে মরা মানুষের গন্ধ! তোমরা এখানে কী করছ? যাও, তাড়াতাড়ি কবরে যাও। ফাঁকি দিয়ে ওদের পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরা বাইরে থেকে মজা লুটতে চাও, না? না, না আমার রাজ্যে এসব চলবে না।” মাতাল নেতা এবং পুলিশের উদ্দেশ্যে মুর্দা ফকিরের এই সংলাপটির মধ্য দিয়েই আমরা এই চরিত্রের হিউমার ও মুনীর চৌধুরীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা পরিলক্ষিত হয়।

মুনীর চৌধুরী রচিত ‘কবর’ নাটকের একটি দৃশ্য

ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে ওরা ছাত্রদের হত্যা করে যখন রাতের অন্ধকারে কবর দিতে নিয়ে গেল। তখন নাটকের শেষদিকে আমরা দেখি, ভাষাশহীদেরা জেগে উঠে প্রতিবাদ করছে। তাঁরা কবরে যেতে চায় না। হাফিজের কথার প্রতিবাদে ওরা বলে, “মিথ্যে কথা। আমরা মরিনি। আমরা মরতে চাইনি। আমরা মরব না।...কবরে যাব না।” এই নাটকের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের দেশের ইতিহাসে মহান ভাষা-আন্দোলনের তাৎপর্য খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি। জর্জ বার্নাড'শর ব্যঙ্গাত্মক রচনায় তিনি প্রভাবিত হয়ে ‘কবর’ নাটক সৃষ্টি করলেও, ‘কবর’ বাংলাসাহিত্যের প্রতিবাদী নাটক হিসেবে এক অনন্য সৃষ্টি।

এছাড়া তাঁর রচিত নাটক ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ বাংলাসাহিত্যের আরেকটি অনবদ্য রচনা। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধকে আবহ করে রচিত হয় ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’। যদিও যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রচিত, তবে যুদ্ধ এই রচনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নয়। যুদ্ধের থেকেও যুদ্ধের সময়ে মানুষের হৃদয়ের ক্ষত-বিক্ষত অনুভূতিই এই নাটকের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। ১৭৬১ সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে ভারতবর্ষের মানুষের মাঝে হিন্দু-মুসলিম বিভেদের সেই বিভৎস সাম্প্রদায়িক ছবি এবং লেখকের লেখনী এই নাটককে নিয়ে গেছে অন্যন্য উচ্চতায়। এই নাটকের প্রধান চরিত্রগুলো হলো সুজাউদ্দৌলা, নজীবদ্দৌলা, জোহরা, ইব্রাহিম কার্দি এবং আহমদ শাহ আবদালি। এটি একটি সফল ট্র্যাজিক কাহিনি। যুদ্ধের ময়দানে নায়কের করুণ মৃত্যু ঘটে। আর নায়কের মৃত্যুতে নায়িকার হৃদয়ের বেদনা এই নাটককে সার্থক ট্র্যাজেডিতে পরিণত করেছে।

এছাড়াও মুনীর চৌধুরী ছিলেন একজন অনবদ্য অনুবাদক। জর্জ বার্নার্ড'শ-সহ আরো অনেক বিশ্বমানের লেখকের লেখা তিনি অনুবাদ করেছিলেন। আগেই বলেছিলাম তিনি রাজনীতি ছাড়তে চেয়েছিলেন। সক্রিয় রাজনীতি থেকে বেরিয়েও এসেছিলেন।কিন্তু রাজনীতি তাঁকে ছাড়েনি। তাঁর লেখায় সবসময় পাওয়া গেছে বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। সবসময় তিনি ছিলেন মননশীলতা, উদারতা এবং প্রগতিশীলতার পক্ষে। আর এজন্যই তিনি পাকবাহিনীর হিট-লিস্টে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের সেই কালো দিনটিতে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানিদের সহযোগী আলবদর বাহিনী। আর আমরা হারিয়েছি বাংলাসাহিত্যের এক অসামান্য প্রতিভাবান মানুষকে।

আজ ২৭ নভেম্বর। এই অসামান্য প্রতিভাধর মানুষটার ৯৬ তম জন্মদিন। তিনি তাঁর ভিন্নধর্মী ক্ষুরধার নাটক আর সমালোচনা-সাহিত্যের জন্য বাংলাসাহিত্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন। তাঁর প্রজ্ঞা, তীক্ষ্ণধী, প্রগতিশীলতায় তিনি অনন্য। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সাহেবের লেখা থেকে আমরা জানতে পাই, প্রেমে ব্যর্থ এক ছাত্র একবার মুনীর চৌধুরীর কাছে গিয়ে মনের আবেগের কথা জানায়। সেই বয়সের আবেগ থেকে ছাত্রটি তাকে আত্মহত্যার ইচ্ছার কথা জানায়। মুনীর চৌধুরী তাঁকে বলেছিলেন, “দেখো, তোমার মতো অবস্থায় আমারও একাধিকবার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয়েছে। কিন্তু পরে দেখেছি, আত্মহত্যা না করে ভালোই করেছি—পৃথিবীটা বসবাসের যোগ্য।” তাঁর সেই যাপনযোগ্য জীবনের অবসান হলো অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে; কমেডি যাঁর প্রিয় শিল্পমাধ্যম, তাঁর জীবনে নেমে এল মহৎ ট্র্যাজেডি—তাঁর পক্ষে শহীদের মর্যাদালাভও আমাদের এ দুঃখ ঘোচাতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচয়পত্রে মুনীর চৌধুরীর ছবি

এক নজরে জীবনপঞ্জি:
পুরো নাম: আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী
জন্ম: ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর
জন্মস্থান: মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ
মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২), স্বাধীনতা পুরস্কার(১৯৮০)
উল্লেখযোগ্য রচনা: কবর, রক্তাক্ত প্রান্তর, চিঠি, কেউ কিছু বলতে পারে না (অনুবাদ-সাহিত্য), রূপার কৌটা(অনুবাদ-সাহিত্য)