সৈয়দ শামসুল হক: তিনি আছেন পরানের গহীন ভিতরে



অসীম নন্দন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক

  • Font increase
  • Font Decrease

সব্যসাচী কথাটার অর্থ হচ্ছে যার দুই হাতই সমানভাবে কাজ করে। আর সব্যসাচী লেখক মানে যিনি সাহিত্যের সকল শাখায় সফলভাবে বিচরণ করেন। এমন প্রতিভা খুব কম মানুষেরই থাকে। সৈয়দ শামসুল হক সেই বিরল ভাগ্যবান লেখকদের মাঝে অন্যতম একজন। মাত্র এগারো বছর বয়সেই তিনি ছড়া লেখার চেষ্টা করেছিলেন। গদ্যকার হিসেবেই তিনি বাংলাসাহিত্যে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯৫১ সালে মাত্র ষোলো বছর বয়সে ‘অগত্যা’ নামে ম্যাগাজিনে তাঁর লেখা গল্প প্রথমবার প্রকাশিত হয়। ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্পের বই ‘তাস’। যদিও গদ্যকার হিসেবেই সাহিত্যে তিনি আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, পরবর্তীতে সাহিত্যের অন্যতম প্রধান শাখা কবিতাতেও তিনি বিশেষ স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি একাধারে ছিলেন কবি, গীতিকার, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, শিশুসাহিত্যিক। তবে এখানে আমরা তাঁর কাব্যভাবনা বিষয়েই বিশেষভাবে আলোচনা করবো।

সৈয়দ শামসুল হকের কবিতার বৈশিষ্ট্যে আমরা কখনো পেয়েছি অন্তর্মুখীস্বভাব আবার কখনো পেয়েছি বহির্মুখীস্বভাব। তিনি সকলরকম ছন্দেই কাব্যচর্চা করেছেন। কবিতায় তিনি বারবার নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়তে চেয়েছেন। এজন্যই হয়তো তাঁর প্রথম জীবনের কবিতায় আমরা তাকে তেমন আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারি না। কারণ তিনি সেই সময়কার সমসাময়িক কবিদের রচনাশৈলীকেই অনুসরণ করেছিলেন। পরবর্তী জীবনেও তিনি বারবার নিজের রচনাশৈলীর পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। কবিতায় তিনি কখনো গদ্যরীতি ব্যবহার করেছেন, আবার কখনো পয়ার, কখনো অক্ষরবৃত্তে অন্ত্যমিলের চর্চা করেছেন।

তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘একদা এক রাজ্যে’ প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে। তবে এতে তিনি নিজেকে তেমন উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ করতে পারেননি। দীর্ঘকবিতা, কাব্যনাট্যে এবং আঞ্চলিক ভাষার সফল প্রয়োগের ক্ষেত্রে সৈয়দ শামসুল হক নিজের প্রজ্ঞা'র বিশেষ পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম দীর্ঘকবিতার বই ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’। এই রচনাটিতে আমরা তাঁর অন্তর্মুখীস্বভাবকে বারবার পাই। এখানে কয়েকটা পঙক্তি থেকে পাঠ করলে আমরা অন্তর্মুখীস্বভাব বা আত্মকেন্দ্রিকতার ব্যাপারটা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবো।

“এমন বিশ্বাস ছিল শুধু কবিতায়,/ প্রথমে করব জয় সুরূপা, বিরূপা;
তারপর পরিবার, যারা রোজ বলে,/ ‘কবিতার সরোবরে ফোটে অনাহার,

ছেঁড়া চটি, শস্তা মদ, আসক্তি বেশ্যায়’;/ তারপর বাংলাদেশ এশিয়া আফ্রিকা;

ফর্মায় ফর্মায় ক্রমে বেড়ে উঠে হবে/ কবিতার সংকলন খদ্দরে বাঁধানো,

যে কোনো ঋতুতে যে কোনো উৎসবে/ পাটভাঙ্গা পাঞ্জাবীতে লম্বমান যুবা

পড়বে সে বই থেকে; বাংলার তারিখে/ আমার জন্মের দিন হবে লাল ছুটি।”

অসম্ভব স্বপ্নগ্রস্তের মতন তিনি নিজের স্বপ্নের কথা বলে গেছেন কবিতার এই অংশটুকুতে। কবিতার যেই সময়টাতে দীর্ঘকবিতার দিন প্রায় ফুরিয়ে এসেছে, ঠিক সেই সময়েই তিনি এরকম ২৪ পৃষ্ঠা দীর্ঘ কবিতাচর্চা করেছিলেন। যদিও রচনাশৈলীর দিক থেকে এবং ভাষাশৈলীর দিক থেকে এরকম সংযোজন নতুন কিছু ছিল না। তবে দীর্ঘকবিতার কথা ভাবলে বলতে হয়, তিনি নিজেকে ঠিক এই জায়গাটাতেই ভেঙে গড়েছেন।

লেখক আনিসুল হক তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, “তিনি যদি অন্য সব বাদ দিয়ে দুটো বই লিখতেন ‘পরানের গহীন ভেতর’ এবং ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’ তাহলে এ দুটো বই তাকে অমর করে রাখত। তিনি যদি শুধু তার কাব্যনাট্যগুলো লিখতেন ‘নুরলদিনের সারাজীবন’ এবং ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ তাহলেও আমরা চিরদিনের জন্য তাকে বাংলা সাহিত্যে স্মরণ করতে বাধ্য থাকতাম। তাঁর কবিতা-নাটক-কলাম সবটা মিলিয়ে যে ব্যক্তিত্বটি দাঁড়ায় তা তুলনারহিত।”

আনিসুল হক সাহেব তাঁর সম্পর্কে এদিক থেকে খুব বেশি বাড়িয়ে বলেননি। প্রচুর সংখ্যক লেখার মধ্য দিয়ে এবং নিজেকে বারবার ভেঙে-গড়ার মধ্য দিয়েই হয়তো তিনি তাঁর এই অনন্য সৃষ্টিকর্মগুলো রচনা করতে পেরেছিলেন। ‘পরানের গহীন ভিতর’- সৈয়দ শামসুল হকের জনপ্রিয় বইগুলোর একটি। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮০ সালে। এই বইটি ৩৩টি সনেটগুচ্ছ নিয়ে সাজানো। মানভাষা এবং আঞ্চলিক ভাষার সংমিশ্রণে লেখা কবিতাগুলো ভাষা-শৈলীতে অনন্য। যদিও কবিতার বিষয়বস্তু গ্রাম্য-সংসারী জীবনের প্রেম, হিংসা, মান-অভিমান এবং বাস্তবতার বিষয়ে- বলা যায় প্রায় একরকম আত্মমগ্নতারই কথা। তবে এই কবিতার বইয়ের বিশেষ ভাষা-শৈলী এবং গ্রামবাংলার মানুষের অনুভূতির বিন্যাসে লেখা কবিতাগুলো পাঠকের মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল জায়গা করে নিয়েছে। একইসাথে বাংলাসাহিত্যে এই বইটি একটি অনুপম সৃষ্টিকর্ম। বইটি থেকে আমরা একগুচ্ছ পঙক্তির পাঠ নিতে পারি।

“মানুষ এমন ভাবে বদলায়া যায়, ক্যান যায়?
পুন্নিমার চান হয় অমাবস্যা কিভাবে আবার?
সাধের পিনিস ক্যান রঙচটা রোদ্দুরে শুকায়?
সিন্দুরমতির মেলা হয় ক্যান বিরান পাথার?
মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর
নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর।।”

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সাহেব বিবিসি বাংলায় তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, “আমাদের সাহিত্যিকদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হক ভাষার ব্যবহার নিয়ে যে লিখেছেন 'হৃৎকলমের টানে' বা 'কথা সামান্যই' এগুলো কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি একইসঙ্গে একজন সৃষ্টিশীল লেখক এবং ভাষার ব্যবহারে ছিলেন অত্যন্ত সচেতন।”

ভাষার ব্যবহারে সৈয়দ শামসুল হক যে ভীষণ সচেতন ছিলেন তা আমরা তাঁর সৃষ্টিকর্মের দিকে নজর দিলেই বুঝতে পারি। কেননা প্রথম জীবনে তিনি অন্যান্য সমসাময়িক লেখকদের মতন কলকাতার মানভাষা ব্যবহার করলেও, পরবর্তীতে তিনি ভাষার ব্যবহারে আরো সচেতন হয়ে উঠেছিলেন। যে কারণে আমরা ‘পরানের গহীন ভিতর’ কিংবা ‘নুরুলদীনের সারাজীবন’ এর মতন সৃষ্টিকর্ম তাঁর কাছ থেকে পেয়েছি।

যদিও কবিতা নিয়েই আমাদের আলোচনা তবুও কাব্যনাট্য নিয়ে কথা না বললে আসলে কথা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। আধুনিক যুগে যেখানে কবিতাও গদ্যের দিকেই প্রবাহিত হচ্ছে, সেখানে সৈয়দ শামসুল হক কাব্যনাট্যে মনোযোগী হয়েছিলেন। আর কাব্যনাট্য নাটক হলেও তো তা কাব্যেই লেখা। তাঁর প্রথম কাব্যনাট্য ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা এই কাব্যনাট্য'কে আমরা বৈচিত্র্য এবং বিন্যাসের দিক থেকে বাংলাসাহিত্যে অন্যতম সংযোজন বলতে পারি। আঞ্চলিক ভাষা-শৈলীতে এবং মৈমনসিংহ-গীতিকা'র ঢঙে লেখা এই কাব্যনাট্য মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস ও মানব-মনের অন্তর্গত অনুভূতিকে স্পর্শ করেছে। পাঁচ অঙ্কে লেখা এই কাব্যনাট্যে গ্রামীণ ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকাকে ফুটিয়ে তুলতে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন গ্রামীণ-মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা এবং মাতবর চরিত্রে। গ্রামের মাতবর যে-কিনা পাকিস্তানিদের সাথেই হাত মিলিয়েছিল। যে মাতবর দেশের জন্য কালসাপ। যে মাতবর দেশের শত্রু। দেশের মানুষের শত্রু। এই কাব্যনাট্যের মধ্য দিয়ে আমরা সৈয়দ শামসুল হকের ইতিহাস-সচেতনতার দিকটি জানতে পারি। এই রচনাটিতে রাজাকারই কেন্দ্রীয় চরিত্র কিংবা অন্য অর্থে নায়কও বলতে পারি,যে মানুষ কিনা নিজের মেয়েকে নিজেই পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিতে চায়। এই দিক থেকে আমরা দেখতে পাই, একজন লোভী-সুবিধাবাদী-অসৎ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন। আর একইসাথে জানতে পারি যুদ্ধ বিজয়ের পর গ্রামের মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনস্তত্ব।

কাব্যনাট্য বিষয়ে আলোচনা করলে কোনোভাবেই আমরা ‘নুরলদীনের সারাজীবন’ কাব্যনাট্যকে বাদ রেখে আলোচনার সমাপ্তি ঘটাতে পারি না। ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন ফকির-বিদ্রোহের পটভূমিতে রচিত এই কাব্যনাট্য আমাদেরকে প্রায় ভুলতে যাওয়া ইতিহাসকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়। এই বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮২ সালে। এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র নুরুলদীন ফকির-আন্দোলনের একজন নেতা। আসলে নুরুলদীনকে আমরা অসাম্প্রদায়িক বিপ্লবের চেতনাও বলতে পারি। যে কিনা নতুন দিনের আশায় অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছে।

১৭৭১ সালের ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ হচ্ছে বাংলার মাটিতে প্রথম সংগঠিত বিপ্লবের নাম। যে বিপ্লবীদের ব্রিটিশরা দস্যু নামে অবিহিত করেছিল। ব্রিটিশরা ও জোতদারেরা যখন তীর্থে যাবার সময়েও সন্ন্যাসীদের কাছ থেকে কর আদায় করতে চেয়েছিল, জমিদারেরা যখন ঋণ দেবার নাম করে চড়া সুদে সাধারণ গ্রামীণ-চাষীদের জমি কেড়ে নিচ্ছিল, নীল-চাষে বাধ্য করছিল, ঠিক তখন ফকির-সন্ন্যাসীরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।

এই কাব্যনাট্যে নুরুলদীনের প্রথম সংলাপই হচ্ছে, ‘জাগো বাহে-এ, কোনঠে সবা-য়’। মানে নুরুলদীন আপামর জনগণকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে বলছে। বিপ্লবের চেতনায় জেগে উঠতে বলছে। সংগ্রামী হবার স্বপ্নের কথা বলছে। অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার কথা বলছে। যে নুরুলদীন নবাব হতে চায় না, দেবতাও হতে চায় না। কেবল এবং কেবলমাত্র বিপ্লবীই হতে চায়। সে কেবল তার চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে চায় সবার মাঝে।

নুরুলদীন ছাড়া এই কাব্যনাট্যে আছে লালকোরাস, নীলকোরাস, আম্বিয়া, আব্বাস এবং কয়েকটি ব্রিটিশচরিত্র। এখানে লালকোরাস আদতে বাঙলার আপামর শোষিত শ্রেণীর কণ্ঠস্বর। যারা বিপ্লবের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে চায়। নীলকোরাস হচ্ছে শোষকের কণ্ঠস্বর। যারা বিপ্লবকে দুমড়েমুচড়ে নিঃশেষ করে দিতে চায়। আব্বাস হচ্ছে নুরুলদীনের বন্ধু এবং একইসাথে সমাজের পিছুটানের রূপক প্রকাশ। এবং আম্বিয়া হচ্ছে নুরুলদীনের ভালোবাসার নাম। তাঁর স্ত্রী। তাঁর সংসার। যে সংসার সবসময় মানুষকে মায়ার বাঁধনে বেঁধে পিছুটানের সৃষ্টি করে। যাকে নুরুলদীন বিপ্লবের জন্য ত্যাগ করেছে। আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে এবং পটভূমির গুরুত্বে এই রচনা বাংলাসাহিত্য একটা বিশেষ সংযোজন।

অনেকেই তো অনেক রকম কথা বলে থাকেন। অনেকে বলেন, সৈয়দ হক বারবার নানানভাবে প্রভাবিত ছিলেন। কখনো তিনি তাঁর সমসাময়িক লেখকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন আবার কখনো বিশ্বসাহিত্যে প্রভাবিত হয়েছেন। কিন্তু প্রভাব ছাড়া তো কোনো লেখকই নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন না। নিজেকে যে যতভাবে যতবার ভেঙে নতুন করে গড়ে তুলতে পারেন তিনিই তো হয়ে উঠেন শক্তিশালী লেখক। আর সৈয়দ শামসুল হক সেই কাজটাই করতে পেরেছেন। এবং বাংলাসাহিত্যে বাঙালির মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত মনস্তত্বে তাঁর যা সংযোজন; সেজন্যই তিনি হয়তো বহুযুগ ধরে পাঠকের পরানের গহীন ভিতরে থেকে যাবেন।

এক নজরে জীবনপঞ্জি:

জন্ম: ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ সাল
জন্মস্থান: কুড়িগ্রাম, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত।
মৃত্যু: ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সাল
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি: নিষিদ্ধ লোবান, খেলারাম খেলে যা, পরানের গহীন ভিতর, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নুরুলদীনের সারাজীবন।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমি(১৯৬৬), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৮২), একুশে পদক(১৯৮৪)।

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;