বাংলা নববর্ষ ও বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য

  • ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা নববর্ষ ও বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য

বাংলা নববর্ষ ও বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য

আজ পহেলা বৈশাখ। শুভ নববর্ষ। বৈশাখের উৎসব সার্বজনীন। এটা বাঙালির উৎসব। বর্ষ বরণের উৎসব প্রতিটি দেশেই আছে। ১৯৫২ সালের ১লা বৈশাখে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় কিশোর কিশোরীদের বাংলা নববর্ষ জানাতে লিখেছিল: “ আজ ১ লা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের সূচনা হল আজ। এই নূতন দিনটিতে প্রাণভরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি তোমাদের। বাংলা তারিখ গণনাকে আমরা অনেকেই প্রায় ভূলে যেতে বসেছিলাম। ইংরাজের অধীনে থেকে থেকে ইংরাজী আদব কায়দা রফত করার সাথে সাথে আরো অনেক কারণে বাধ্য হয়েই ইংরাজী সনকে আমরা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়েছিলাম। বাংলা সন মাস কালের অনুসন্ধান গ্রাম্য পন্ডিতদের পাঁজি পুথির ভেতরেই প্রায় সীমাবদ্ধ হতে চলেছিল। কিন্তু এই বাংলা মাস ও সালের পেছনে আমাদের যে অন্তরের যোগ, তা কিছুতেই মুছে যাবার নয়।… আমাদের মনের মাঝে উকি দেয় বাংলা মাসগুলোর আগমনবার্তা। কিন্তু নতুন বছর কেবল এই দিক দিয়েই নতুন নয়। বাংলা ইংরাজী যে কোনো মাসই হোক না কেন, তার প্রথম দিনটিতে আমাদের মনপ্রাণ ভরে দেয় নতুন উৎসাহ, নতুন উদ্দীপনা।” ( দৈনিক আজাদ ১৪ এপ্রিল ১৯৫২)

বাংলাদেশের মানুষ উৎসব প্রিয় । নানান রকমের উৎসব আমাদের জাতীয় জীবনে জড়িয়ে আছে। তেমনি বাংলা নববর্ষ আমাদের আর্থ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের দাবীদার । বাংলাদেশের কৃষি নির্ভর আর্থ সামাজিক কাঠামোর সাথে বাংলা দিনপঞ্জীর সম্পর্ক গভীর। এখনো এদেশের কৃষকরা বাংলা তারিখের হিসেবেই বীজ বোনে, ফসল কাটে। বাংলা সনের প্রবর্তন কবে হয়েছিল, কে তার প্রবর্তক তা নিয়ে নানান বিতর্ক রয়েছে। তবে বাংলা সন সৃষ্টির পেছনে দুইজন মুসলমান শাসকের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এদের একজন সুলতান হোসেন শাহ ও অন্যজন মোগল সম্রাট আকবর। তবে অধিকাংশের মতামত হলো মোগল সম্রাট আকবরই বাংলা সনের প্রধান প্রবর্তক।

বিজ্ঞাপন

প্রাচীনকাল থেকে ভারতে বহুলভাবে প্রচলিত ছিল শকাব্দ। যেটা গণনা শুরু হয়েছিল খ্রিষ্টিয় ৭৮ সাল থেকে এবং এটি ছিল সৌরমাস। এছাড়া আরো ছিল বিক্রমাদিত্য প্রবর্তিত সম্বৎ বা অব্দ। এটিও খ্রিষ্টিয় সন গণনার ৫৭ বছর আগে প্রবর্তিত ছিল। কিন্তু বাংলা প্রদেশে প্রচলিত ছিল মঘী সন, ত্রিপুরাব্দ, এবং লক্ষণাব্দ। মঘীসন: ৬৩৯ খ্রিষ্টাব্দে এ সনের শুরু। বাংলা সন থেকে ৪৫ বাদ দিলে মঘী সন পাওয়া যায়। ত্রিপুরাব্দ : খ্রিষ্টিয় সন থেকে ৫৯০ বাদ দিলে ত্রিপুরাব্দ মিলে। লক্ষণাব্দ : ১১৭৮ খ্রিষ্টিয় সন থেকে লক্ষনাব্দ শুরু। বাংলা প্রদেশের সনগুলি ছিল কৃষি রীতি ভিত্তিক। বিশেষ করে ফসল বোনা, বাৎসরিক ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগের দিনক্ষণ গণনা, খাজনা দেয়া ইত্যাদি কাজে ব্যবহার হতো।

১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট আকবর সিংহাসন আরোহনের পর ভারতের বিভিন্ন সুবা বা প্রদেশের খাজনা আদায়ের দিন তারিখের একটি অভিন্ন সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেন। তিনি লক্ষ করলেন চান্দ্র বৎসরের গণনানুযায়ী সৌর বছরের সাথে দিনের পার্থক্য অনেক। ফলে চান্দ্র বৎসরের রীতি অনুযায়ী বছরেররাজস্ব আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট দিন ধার্য করা সম্ভব ছিল না। সেকালে ফসলে রাজস্ব আদায় করা হতো। কোনো কোনো বছর ফসল তোলার আগেই খাজনা দেবার দিনটি এসে যেত। এতে করে প্রজারা খাজনা দিতে অসুবিধার সম্মুখীন হত। সম্রাট আকবর প্রজা সাধারণের এই অসুবিধা দূর করার জন্য নতুন সন প্রবর্তনের চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবেরর শাসন ক্ষমতা গ্রহণের সময় হিজরী সন ছিল ৯৬৩। আর এ বছর থেকেই তিনি হিজরী সনকেই সৌর সনে পরিবর্তিত করে বাংলা সন চালু করেন। বাংলা প্রদেশ ছাড়াও অন্যান্য প্রদেশে নতুন সন প্রবর্তন করা হয় যেমন উড়িষ্যাতে আমলি সন, বিলায়েতি সন, সুরাসানি সন ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো এতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। ব্যতিক্রম শুধুমাত্র বাংলা সন, যা প্রচলিত হয় বাংলাদেশ ও জাতির নামে এবং নতুন এই সন ‘বঙ্গাব্দ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

বিজ্ঞাপন

পহেলা বৈশাখ কিংবা বাংলা বৈশাখ মাস এদেশবাসীর নিকট ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায় নবাবী শাসনামলে, বিশেষ করে নবাব মুর্শিদ কুলী খানের সময়। তিনি বাংলার কৃষকের নিকট বৈশাখ মাসকে খাজনা দেয়ার নির্দিষ্ট মাস শুরু করায় এতে নতুন মাত্রা যোগ হয় । নবাব মুর্শিদ কুলী খানের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত হবার সময় তিনি লক্ষ করলেন বাংলার ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাতে অনেক ত্রুটি রয়ে গেছে। সুবা বাংলা বা বাংলা প্রদেশের তিনি ভূমি রাজস্ব বিভাগের আমূল সংস্কার করলেন। তাঁর ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার লক্ষ্য ছিল একদিকে ভূমি থেকে যতবেশী সম্ভব রাজস্ব আদায় অন্যদিকে কৃষকদের সন্তুষ্ট রাখা। এছাড়াও আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং কৃষি উৎপাদরে উন্নতি বিধানের চেষ্টা করলেন। মুর্শিদকুলি খান বাংলার সকল আবাদী ও অনাবাদী জমি জরিপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি ব্যক্তি বিশেষে হিসেব না করে জমির উৎপাদন ক্ষমতা অনুসারে রাজস্ব ধার্য করেন। এক একটি জমির বিবরণের লিপিবদ্ধকরণেরপাশাপাশি কৃষকদের নাম ঠিকানাও লিখে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তখন। পাশাপাশি কৃষকরা কি পরিমাণ কর দিয়েছে
সেটাও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন।

সম্রাট আকবরের সূত্র ধরেই বাংলার নবাব মুর্শিদ কুলি খান খাজনা আদায়ে প্রজাদের অনুরোধে বৈশাখের প্রথমদিনে পুন্যাহ রীতি চালু করেন। প্রজারা এ দিনে খাজনা দিতে আসতেন এবং পরবর্তী নতুন বছরের জন্য জমি পত্তন নিতেন। এই উপলক্ষে জমিদারগণ প্রজাদের খাজনা আদায়সহ নানা ধরণের সুস্বাদু মহাভোজের আয়োজনের ব্যবস্থা করতেন। নবাব মুর্শিদ কুলি খানের এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল। ১৭০২ সাল থেকে তিনি প্রতি বছর নিয়মিতভাবে বাংলা প্রদেশ থেকে রাজস্ব হিসাবে মোগল বাদশাহকে ১ কোটি টাকা করে পাঠাতে থাকেন।

উপনিবেশিক শাসনামলে বাংলায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ঘটে পহেলা বৈশাখের। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সংযোজন হয় হালখাতা নামের এক অনুষ্ঠানের। এই অনুষ্ঠানটি ছিল মূলত ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও লাভজনক পদ্ধতির একটি নতুন কৌশল। সারা বছর ক্রেতারা বাকিতে কেনাকাটা করে বছরের নতুন দিনে অর্থ্যাৎ পহেলা বৈশাখে পাওনা পরিশোধ করবে। বিনিময়ে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সুস্বাদু মিষ্টি এবং খাবারের ব্যবস্থা করতেন। হালখাতার মাধ্যমে ছোটখাট অনুষ্ঠান বাঙালি সাংস্কৃতিক জীবনকে আকর্ষণীয় করে তোলে। হালখাতার প্রসঙ্গটি সবার জীবনেই নানাভাবে দোলা দেয়। ঠিক যেভাবে কবি সিকানদার আবু জাফরের স্মৃতিতে ধরা দিয়েছে। পহেলা বৈশাখ এবং হালখাতাকে তিনি চিত্রিত করেছেন এভাবে-
“ ছেলেবেলায় কিন্তু পয়লা বৈশাখের ওপরে আমার একটা বিশেষ মোহ ছিলো। কারণটা এমন কিছু জটিল নয়। স্কুল যেখানে বসত, তার পাশেই ছিল বাজার। পয়লা বৈশাখে বাজারের দোকানে হত ‘ হালখাতা’। হালখাতা জিনিষটা বুঝতাম না, বুঝবার কোনো আগ্রহও ছিলো না। তবে হালখাতা উপলক্ষে দোকানদাররা যে মিষ্টি খাওয়াত গ্রাহক অনুগ্রাহকদের, সেটাই ছিল পয়লা বৈশাখ সম্বন্ধে আমার মোহ এবং হালখাতা সম্বন্ধে আমার জ্ঞানের শেষ সীমানা। হাড় কৃপণ সাধু ময়রা পর্য্যন্ত সেদিন দাম না নিয়ে দু’একটা কদমা অথবা দু’চারখানা গজা অম্লান বদনে খাইয়ে দিত। তখন এইটুকু সৌভাগ্যের জন্যেই পয়লা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে দ্বিধা হয় নি।” ( সিকানদার আবু জাফর, হালখাতা, দৈনিক আজাদ ,১৫ এপ্রিল ১৯৫৫)

কালক্রমে এভাবে পহেলা বৈশাখ আর নববর্ষ আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনধারার সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। বৈশাখের এ ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে জমে উঠে বৈশাখী মেলা ও উৎসব। নতুন উৎসবের আনন্দে মুখর হয়ে উঠে সমগ্র বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক সময়ে পহেলা বৈশাখ, বর্ষবরণ এগুলো আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনের অনুষঙ্গে আরও আনন্দময় হয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কারণে। প্রথমত এটি সরকারি ছুটির দিন এবং উৎসব পালনের জন্য ভাতা পাওয়া। পহেলা বৈশাখকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণার দাবি আসে সেই পাকিস্তান আমলেই। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হলে শেরে বাংলা ফজলুল হক পহেলা বৈশাখ দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয়, বাঙালি হিসেবে বাংলা নববর্ষ বরণে তাঁর দেয়া বাণীও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
১৯৫৪ সালের পহেলা বৈশাখে পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক তিনি সেদিন যে বাণী দিয়েছিলেন তাতে একজন বাঙালি হিসেবেই সমগ্র বিশ্ববাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। তাঁর বাণীতে উল্লেখ করেছিলেন:
“ আজ (বুধবার) বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। এই উপলক্ষে আমি আমার একান্ত প্রিয় পূর্ব্ববঙ্গবাসীদিগকে জানাইতেছি আন্তরিক অভিনন্দন। আর তাহাদের পক্ষ হইতে পশ্চিম পাকিস্তানের ভ্রাতৃবৃন্দকে জানাইতেছি প্রীতি ও ভালোবাসা এবং বহির্ব্বিশ্বের জনসাধারণকে শুভেচ্ছা। নূতন পরিবেশে আমাদের যাত্রা হইল শুরু। পুরাতনকে পশ্চাতে ফেলিয়া নবযুগ প্রবর্ত্তনের সঙ্কল্প লইয়া আমরা নববর্ষে পদার্পণ করিলাম।” ( দৈনিক আজাদ, ১৪ এপ্রিল ১৯৫৪)

বাংলা নববর্ষ বাঙালির আত্মঅহংকার এবং গর্বের বিষয়। তবে বাংলা সন হিসেবে ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বাংলা সনেই বাঙালি ঝাপিয়ে পড়েছিল মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য। রুখে দিয়েছিল পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীকে। ১৩৭৯ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে গিয়ে ১লা বৈশাখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাণী দিয়েছিলেন সেখানে উল্লেখ করেছিলেন- “ আজ ‘ পয়লা বৈশাখ’। বাংলা ১৩৭৮ সালের অতীত দু:খ যাতনা এবং ত্যাগের লয়প্রাপ্ত অধ্যায় শেষ করে আজ ১৩৭৯ সালের শুভ যাত্রা শুরু। অনন্ত নীল সীমায় পাড়ি জমিয়েছে আরেকটি বছর, তবে বহুবিধ কারণে এ বছরটি মানব ইতিহাসে চিরভাস্বর ও অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ এ বছরটিতেই সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর প্রিয় মাতৃভূমি আমাদের বাংলাদেশ ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে নিজস্ব আসন প্রতিষ্ঠিত করেছে।”

আমাদের বাংলা নববর্ষকে আরও আনন্দময় করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো চালু হয় পয়লা বৈশাখের উৎসব ভাতা।১৪২৩ বঙ্গাব্দ হতে ‘ বাংলা নববর্ষ ভাতা’ প্রবর্তিত হয়েছে। যা বাংলা নববর্ষ পালনে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে।
বাংলা নববর্ষের আরেকটি আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা শহরের শাহবাগ রমনা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের আয়োজন এখন দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আনন্দ শোভাযাত্রায় চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম বহন করা হয়। এছাড়াও বাংলা সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা প্রতীকী উপকরণ, বিভিন্ন রঙ-এর মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়। এটি এখন বাংলাদেশের নববর্ষ পালনে নতুন সর্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০১৬ ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ সংস্থা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করেছে।

মানুষের জীবনে যেমন সুখ দু:খ একে অপরের সাথী। জাতীয় জীবনেও তাই। সুখ দু:খ চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে আসে যায়। পহেলা বৈশাখের উৎসব কে নিয়েও আমাদের জাতীয় জীবনেও আজ এক অচিন্তনীয় সন্দেহের বীজ অঙ্কুরিত হচ্ছে। পরস্পর পরস্পরে অবিশ্বাস ও অহেতুক ঘৃণা ও হিংসার যে মনোভাবের অভিব্যক্তি তা সুস্থ জাতীয় জীবনের অপমৃত্যু। বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করেই এই জনপদে গড়ে উঠেছে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি এবং কালক্রমে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ভূখণ্ড। বাঙালির সমৃদ্ধযাত্রায় কালক্রমে এটি আরো বিকশিত হবে, নানান বাধা উপেক্ষা করেও।

বাঙালি সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আরো পরিস্কার হওয়া উচিত। কেননা এটা বাঙালি সংস্কৃতির একটি গৌরবোজ্জ্বল দিক। আজকের এই পহেলা বৈশাখে, আধুনিক প্রযুক্তিময় বিশ্বের প্রেক্ষাপটে আমাদের সংস্কৃতিকে আরও উর্ধ্বে তোলা ধরার চেষ্টা করা উচিত। দেশজ সংস্কৃতি যদি প্রাণ ফিরে পায় তাহলেই প্রকৃত বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বে তুলে ধরতে পারবো।

লেখক: অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়