ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন হতে দেয়া হবে না: ভিপি নুর

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, 'স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারিদের নির্বাচন হয়, শিক্ষকদের নির্বাচন হয় তাহলে ছাত্রদের নির্বাচন কেন হবেনা? ছাত্র সংসদ নির্বাচন কেন হবে না? আমরা নতুন-তরুণদেরকে রাজনীতিতে এগিয়ে আসার কথা বলছি। নতুন নেতৃত্বে তরুণদেরকে সুযোগ তৈরি করে দেয়ার কথা বলছি। এক্ষেত্রে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই।'

সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকাল ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে ছাত্র অধিকার পরিষদের জাবি শাখার আয়োজনে ‘ছাত্র রাজনীতির সংস্কারঃ প্রসঙ্গ ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসু’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

ছাত্র অধিকার পরিষদের জাবি শাখার সদস্য সচিব ইকবাল হোসেনের সঞ্চালনায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, সব সংস্কারের আগে রাজনীতি সংস্কার দরকার ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা বললেও দলগুলোর অভ্যন্তরণে কতটুকু গণতান্ত্রিক অবস্থা তাও দেখতে হবে। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদগুলো চালু করলে সামনের দিনে জাতীয় রাজনীতিতে তারা ভূমিকা পালন করতে পারবে৷ ছাত্রদের রাজনীতিতে 'আই হেট পলিটিক্স' প্রবণতা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে৷ কেননা রাষ্ট্র আগামীদিনে চালাবে ছাত্ররা।

লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি নিয়ে ভিপি নুর বলেন, ছাত্রশিবির বা বামপন্থি দলগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে আঙুল তোলার অপশন কম। যারা ক্ষমতাসীন ছাত্ররাজনীতি বা ক্ষমতার আশেপাশে থেকেছেন তাদের ক্ষেত্রে এ লেজুড়বৃত্তিক প্রবণতা এবং লাঠিয়াল বাহিনি তৈরির প্রবণতা বেশি। তাই ছাত্র সংসদভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি হওয়া উচিত৷ তাই বলতে চাই, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় রাজনীতি নয়।

বিজ্ঞাপন

জাকসুতে সহাবস্থান নিয়ে তিনি আরও বলেন, ৮০ এর দশকে ছাত্ররাজনীতির নৈতিক অধঃপতন শুরু হয়৷ ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্র রাজনীতি বিপথে নিয়েছে। বিগত সরকারের আমলে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল অথবা অন্য দলগুলো যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছে তাদের সবার একই উদ্দেশ্যে ছিল স্বৈরাচারের পতন। তখন তো বিভেদ ছিলনা। তাহলে এখন কেন এমন হচ্ছে, এটা ভাবতে হবে৷ এই ভুলগুলো নিয়ে আলেচনা হবে। কোনো দল কোনো ভুল করলে তা আলোচনা হতে পারে। এতে করে সকলকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জাকসু হবে বলে আশা রাখি।

রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে ছাত্রসংসদের বিকল্প নেই উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, এখন আবার কেউ কেউ বলছেন ৫ আগস্টের মতো প্রয়োজনে আবার গণতন্ত্রের জন্য ভোটের দাবিতে আবার রাজপথে নামতে হবে। তাহলে এই বিপ্লব আমরা কেন করলাম? হাসিনার মত দৈত্য দানব ফ্যাসিস্টকে কেন সরালাম? কেন আমরা গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের জন্য আন্দোলন করলাম? আমরা আশা করি সেটি আমাদের করতে হবে না।

সংলাপ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ছিল। আমরা দেখেছি ১৯৯৩ সালে শিক্ষকদের সঙ্গে জাকসুর নেতৃবৃন্দের সংঘর্ষের ফলে জাকসু বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে জাকসু বন্ধ রয়েছে। জাকসু করে লাভ কি যদি মানবিক মূল্যবোধ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের জায়গা না বুঝি? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জাকসু থাকতে হবে। তাহলে জাকসুর সভাপতি হিসেবে আমি কেন জাকসু দেব না?

শহীদদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন রেখে উপাচার্য বলেন, যখন আমরা হাসিনার ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছি তখনই সফলতা এসেছে। ভিসি প্রশ্ন রাখেন, যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের অঙ্গীকারের পালনে কী আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি? নাকি বৈচিত্র্যের কারণে বিভাজনের সৃষ্টি করছি। জয়ী হবার জন্য পরস্পরকে যুক্তি দিয়ে আক্রমন করেছি? ২৪ এর অঙ্গীকার রক্ষায় বিষয় কি এটা ছিল?

মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে এই জাবি ভিসি বলেন, রাজনীতি সংস্কারের আগে মানবিক সংস্কারের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে৷ জাকসু করে লাভ কি যদি মানবিক মূল্যবোধ এবং পারস্পারিক সহাবস্থান না থাকে৷ দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ডিবেট এবং ডায়লগের মধ্যকার পার্থক্য আমরা বুঝিনা। সকল সংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যকার সংকট এবং বিভেদ নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত৷

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, জাতীয় রাজনীতি সংস্কার করা যদি না হয় তাহলে ছাত্ররাজনীতি সংস্কার হবেনা, শিক্ষার্থীদের কল্যাণ হবেনা। অনেকে বলছে এতদিন হাসিনা ক্ষমতায় ছিলো ভালো হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে তার আসল চেহারা দেখা হতো না, সে কতো বড়ো দানব ছিলো জানা হতো না। যদি ছাত্র সংসদগুলো চালু থাকতো দেশের মানুষ আরও সচেতন থাকতো। মোস্ট প্রভাবলি ১৪ সালের পর দেশে আর ফ্যাসিবাদ কায়েম হতো না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ছাত্রসংসদগুলোর সংবিধানের সংস্কারের দরকার। জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হওয়ার দরকার আছে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে নেতৃত্ব উঠে আসবে তারা হবে বাংলাদেশের গনতন্ত্রের সামনের দিকের সেফ গার্ড। এ সেফগার্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য তানাহলে এক এগারো হতোনা। আমরা ছাত্রসংসদ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে চাই এবং এটি করতে যা যা সংস্কার দরকার সেসব দ্রুত সময়ে করতে হবে। এটি করতে কোন গড়িমসি করলে আমরা বুঝে নিবো এটি সামনের দিনে গণতন্ত্রকে দূর্বল করে রাখার পায়তারা।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ছাত্ররাজনীতি ছিল, আছে এবং থাকবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বেও ছাত্ররাজনীতি ছিল। যে ছাত্রনেতারা মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছিল। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশের সংকটের সময়ে দেশের মানুষ যখন প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর উপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলেছিল, তখন ছাত্রদের ডাকে সাধারণ মানুষ আন্দোলনে অংশ নিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়েছে। নব্বইয়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে চব্বিশের আন্দোলন ছিল ছাত্রদের আন্দোলন। এজন্য ছাত্রদের রাজনৈতিক সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ বাংলাদেশে যখনই বড় ধরনের সংকট তৈরি হয় তখনই ছাত্রদের ডাকে জনতা মাঠে নেমে আসে। তাহলে সেই ছাত্ররা কি রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে? রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে দূরে থাকবে? থাকবে না। থাকলে দেশের ক্ষতি হবে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষতি হবে। সুতরাং ছাত্র রাজনীতি করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ বলেন, ছাত্ররাজনীতির যৌক্তিক সংস্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ছাত্ররাজনীতি হবে ছাত্র সংসদ ভিত্তিক। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো আদায় করতে সক্ষম হবে৷

এছাড়াও আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি খায়রুল আহসান মারজান, জাবিসাসের সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিক, ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়া জিসান।

এদিকে সংলাপ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান ক্যাম্পাস আসলেও তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করেই চলে যান। অনুষ্ঠানের আয়োজক ও ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়া জিসান গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠানে থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু দলীয়ভাবে তাকে চাপ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে আমানুল্লাহ আমানকে কল দেওয়া হলে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন বলে কেটে দেন৷