স্বাগতম-সুস্বাগতম এয়ারএ্যাস্ট্রা



মো. কামরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় নয় বছর পর নতুন একটি এয়ারলাইন্স পেখম তুলে বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনকে স্বস্থির আবহাওয়ায় ভরিয়ে দিচ্ছে। ১৭ জুলাই ২০১৪ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর পর বাংলার আকাশে বিচরণ করতে যাচ্ছে দেশের নবীনতম বিমানসংস্থা এয়ারএ্যাস্ট্রা। বাংলাদেশ এভিয়েশনে আসছে ২৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে এয়ারএ্যাস্ট্রা ঢাকা থেকে কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনার মধ্য দিয়ে দেশের আকাশপথকে রঙিন করে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশের আকাশ পরিবহন শিল্পের ইতিহাস অম্ল মধুর। নানারকম উচ্ছ্বাস আর আবহ নিয়ে দেশের আকাশথে বিচরণ করার জন্য বেসরকারি বিমান সংস্থা জিএমজি এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজসহ ৮/৯টি এয়ারলাইন্স এর শুভাগমণ ঘটেছিলো কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ সেসব এয়ারলাইন্স ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়েছে।

প্রায় ২৬ বছর যাবত বেসরকারি বিমানসংস্থাগুলো নানাভাবে বাংলাদেশ আকাশ পরিবহনকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। বারবার বন্ধুর পথে হোঁচট খেতে হয়েছে। বন্ধ হওয়ার মিছিলকে সমৃদ্ধ করেছে, যা কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে এই বন্ধ হওয়ার মিছিলের পরিবর্তে এগিয়ে যাওয়ার মিছিলে রূপান্তরিত হবে এই প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ এভিয়েশন।

একটি এয়ারলাইন্সের আবির্ভাবে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা বাংলাদেশের মতো অধিক জনবহুল দেশে বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখে। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। একটি দেশের আকাশ পথের গতিশীলতা থাকলেই অন্যান্য সকল শিল্পের গতিশীলতা বজায় থাকে। এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে প্রত্যাশা অনুযায়ী অন্যান্য সকল শিল্পের গতিশলীতা আরো বেশি বেগবান হবে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প মূলত দেশীয় পর্যটকদের উপরই নির্ভরশীল। দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও বেশি বিকশিত করার জন্য এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে যেন এই শিল্পে সুবাতাস বয়ে যাচ্ছে। শীতের প্রারম্ভে সারা বিশ্বের জনপ্রিয় নিউ জেনারেশন এয়ারক্রাফট এটিআর ৭২-৬০০ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে এয়ারএ্যাস্ট্রা।

কোভিড ১৯ এর কবলে পড়ে সারা বিশ্বের এভিয়েশন শিল্প চরম দোদুল্যমান অবস্থায় পড়েছিলো। অনেক সুখ্যাত সম্পন্ন এয়ারলাইন্স করোনা মহামারির করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে প্রি-কোভিড অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি। সেখানে এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমণ বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্পের অগ্রগতির পরিচায়ক বহন করছে, সঙ্গে দেশের অর্থনীতি পজিটিভ সূচককে নির্দেশিত করছে।

বাংলাদেশ এভিয়েশনে করোনা মহামারিতে বিপরীত চিত্রও দেখতে পাই, প্রায় দশ বছরের অধিক সময় ধরে সেবা দেয়া এয়ারলাইন্স রিজেন্ট এয়ারওয়েজ কোভিড ১৯ এর শুরুতে বন্ধ করে দিতে হয়েছিলো রিজেন্ট এয়ারওয়েজকে। যা আজ অবধি আর ব্যবসায় ফিরে আসতে পারেনি।

বর্তমানের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দিয়ে ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত রাখা প্রত্যেকটি ব্যবসায় সেই নীতি বহন করা উচিত। শুধুমাত্র বর্তমানকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভবিষ্যত ব্যবসাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে দেখা গেছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে। অনির্ধারিত মহামারি এভিয়েশন শিল্প কিংবা এর সাথে সংশ্লিষ্ট পর্যটন শিল্প কিংবা হোটেল ইন্ডাস্ট্রি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

করোনা মহামারির কারণে হাজার হাজার কর্মক্ষম লোক বেকার হয়ে গেছে। করোনা পরবর্তীতে এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে প্রায় তিন শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে যা বেকার সমস্যা দূরীকরণে ভূমিকা রাখছে। প্রাথমিকভাবে দু’টি এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে এয়ারএ্যাস্ট্রা। ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম রুটে ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন নতুন এয়ারক্রাফট, নতুন নতুন রুট, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্প পজিটিভিটি নিয়ে এগিয়ে যাবে।

এয়ারএ্যাস্টার আগমনের কারণে দেশের জিডিপিতে অংশীদারিত্ব বাড়বে বাংলাদেশ এভিয়েশন ও পর্যটন শিল্পের। একটি নতুন এয়ারলাইন্স কিন্তু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফসহ অভিজ্ঞতায় ভরপুর একটি পরিচালনা পর্ষদ এয়ারএ্যাস্ট্রাকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা থাকছে একজন এভিয়েশন কর্মী হিসেবে।

এয়ারএ্যাস্ট্রা বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার সহ জাতীয় বিমানসংস্থার সাথে উন্নত সেবা আর সাশ্রয়ী ভাড়ায় দেশীয় যাত্রীদের আস্থা অর্জন করবে এই প্রত্যাশা সকলের। প্রত্যাশার পারদ ক্রমান্বয়ে উর্ধ্বগতির কারণে আশা করছি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে শেয়ার বৃদ্ধি করে দেশীয় এভিয়েশনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এয়ারএ্যাস্ট্রা।

এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে একজন এভিয়েশন কর্মী হিসেবে জানাই স্বাগতম, সুস্বাগতম।

লেখক: মোঃ কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবিত মামলায় অস্বস্তিতে সরকার



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রথম আলো পত্রিকার সাভারে কর্মরত প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস ও সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। কারাগারে আছেন পত্রিকাটির প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস। মামলা হলেও গ্রেপ্তার হননি সম্পাদক মতিউর রহমান। এ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেছে। দৃশ্যমান অনেক কিছুই, এরবাইরে অদৃশ্য অনেক কিছুই হয়তো চলছে। টক অব দ্য কান্ট্রি এই মুহূর্তে এটা। দেশেই কি কেবল সীমাবদ্ধ এই আলোচনা? না, এর রেশ দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিনের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি সামনে আসছে।

প্রথম আলো ও শামসুজ্জামান শামসের ‘অপরাধ’ তারা স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপপ্রচার’ চালিয়েছে। ‘ভাত ও মাংসের স্বাধীনতা’ চেয়ে তারা অপরাধ করেছে। পত্রিকাটি স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোয় “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব”—এমন এক উদ্ধৃতি দিয়ে একটি সংবাদ ও ফটোকার্ড প্রকাশ করায় অনেকে সংক্ষুব্ধ হন। মামলাও হয় তার নামে। তবে মামলার আগে সাভারের আমবাগান এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে শামসুজ্জামানকে সিআইডি আটক করে। গণমাধ্যমে বাদীর যে পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে তাতে দেখা যায় তার নাম সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া। তিনি ঢাকা উত্তর মহানগর যুবলীগের ১১নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। আর প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে যিনি মামলা করেছেন পেশায় তিনি আইনজীবী, নাম আবদুল মালেক ওরফে মশিউর মালেক।

প্রথম আলো পত্রিকা ফটোকার্ডে যে ভুল করেছিল তাতে দেখা যায় জাকির হোসেন নামের একজন দিনমজুরে উদ্ধৃতি দিয়েছে তারা, কিন্তু ছবি দিয়েছে একটা শিশুর। বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর এরপর এক প্রতিবেদনে জানায়, শিশুটি দিনমজুর নয়, এবং তাকে নাকি ওই প্রতিবেদক দশ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছবি তুলেছিলেন। প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে প্রকাশের ১৭ মিনিটের মাথায় তারা পোস্টটি সরিয়ে নেয়, এবং অনলাইন ভার্সনে এক সংশোধনীতে জানায় ছবিটি ভুল। এখানেই তাদের ভুল ছিল। সংশোধনী দিয়ে এরপর তারা তাদের মূল প্রতিবেদন অবিকৃত রাখে।

ব্যস, আর যায় কোথায়! মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে—এমন এক প্রচারণা জোরদার হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পত্রিকাটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অবমাননা করেছে প্রচার চালাতে শুরু করেন সরকার-সমর্থক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। যার জের ধরে হুট করে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে মামলা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এরপর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এখানেই থামেনি অনলাইন ঝড়! সরকার-সমর্থক ফেসবুকারদের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের। ২৯ মার্চ মধ্যরাতে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা হয় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে। এই মামলায় শামসুজ্জামান শামস, প্রথম আলোর সহযোগী ক্যামেরাপারসন ও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়। এই মামলায়ও প্রভাব রেখেছে অনলাইনের দাবি!

বলা হচ্ছে, স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাকে খাটো করার অপচেষ্টা করেছে প্রথম আলো। অভিযোগ যদি সত্য হয়, তবে এটা তো রাষ্ট্রদ্রোহিতা! এক্ষেত্রে কেন রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ না এনে মামলা হলো অতি-বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে? 'স্বাধীনতা সুরক্ষায়' কেন আশ্রয় নিতে হবে দেশের সবচেয়ে বিতর্কিত আইনের? স্বাধীনতার সুরক্ষার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কেন বাদী হয়নি রাষ্ট্র?

প্রকৃতই এখানে স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে ধোঁয়া তোলা হয়েছে সেটা পত্রিকাটির বিরুদ্ধে দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্ষোভের প্রকাশ। আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি এই পত্রিকাটির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর ক্ষোভ। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দলটির অনেকেই প্রকাশ্যে বলে আসছেন। তাদের দৃষ্টিতে ‘যুক্তিসংগত’ কারণ হয়তো আছে, কিন্তু ক্ষোভ ও বিরোধিতা নতুন নয়। এবার যখন সামাজিক মাধ্যমে ফের সেই ক্ষোভ জাগল তখন সেই সুযোগটা নিতে চাইল সরকার। এতে লাভ হলো কার? এক-এগারোর ইতিহাস ও মুহাম্মদ ইউনুস নিয়ে সাম্প্রতিক অবস্থানের কারণে ভাবমূর্তি সংকটে থাকা পত্রিকাটি এতে কি লাভবান হলো না?

এই মুহূর্তে প্রথম আলো পত্রিকা সারাদেশে বিপুল সহানুভূতি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও তারা আলোচিত। জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক নানা সংস্থার প্রবল প্রশ্নের মুখে পড়েছে সরকার। বাধ্য হয়ে তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলতে হচ্ছে ‘শিশু নির্যাতন ও শিশুর অপব্যবহারের কারণে’ শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার হয়েছেন; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য নয়। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের অনেক সংবাদমাধ্যম নিয়মিত প্রতিবেদন করে আসছে। এ ধরনের খবরের জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ওই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শিশু নির্যাতন ও শিশুকে অপব্যবহারের জন্য, তিনি একটি নয় বছরের শিশুকে ১০ টাকা দিয়েছিলেন এবং নিজের বক্তব্যকে শিশুর বক্তব্য হিসেবে প্রকাশ করেছেন।

সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারজনিত অস্বস্তি এড়াতে সরকারকে এখন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের বিবৃতিতে মুখ ঢাকতে হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদকে বিবৃতির খেলায় নামতে হয়েছে, বিশিষ্ট ব্যক্তি বিশেষণে অনেকের নামে যৌথ বিবৃতি আসছে গণমাধ্যমে। এরই মধ্যে আবার সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের দুইদিনে দুইরকম বিবৃতিও দেখতে হয়েছে আমাদের। প্রথম আলোর ফটোকার্ড স্বাধীনতার অবমাননা, এমনটা প্রমাণে ব্যস্ত হতে দেখা যাচ্ছে মন্ত্রী-এমপিদের। আওয়ামী লীগের সহযোগী একটা সংগঠনকে রাজপথে কর্মসূচি পালন করতেও দেখা গেছে শনিবার। এগুলো দেখলেই বুঝা যায় কতটা অস্বস্তিতে রয়েছে সরকার।

সরকারের এই অস্বস্তি স্রেফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে মামলার কারণেই। ভুল ছবির একটা ফটোকার্ডের প্রত্যাহার ও সংশোধনী যখন এসেছিল তখন এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত হয়নি। এই বাড়াবাড়িতে দেশে-বিদেশে সমালোচনাই জুটল সরকারের, এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও দুর্বল করল।

আমাদের জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিন স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনচিত্তে নিজের অবস্থা, নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার জন্যেই বিশেষ এই দিন। এই অনুভূতি হাসির হতে পারে, কান্নার হতে পারে; এখানে বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বন্ধনমুক্ত বলেই তো আমরা স্বাধীন। স্বাধীনতা দিবসে কেউ যদি সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকার নিয়ে কথা বলতে না পারে, যদি বাধা আসে, দাবি ও আক্ষেপকে যদি অন্যায়ভাবে বিকৃত অর্থে প্রচার করা হয়, তবে এটাই মূলত স্বাধীনতাকে খাটো করা।

স্বাধীনতা মানে স্বাধীনতা, যেখানে আনন্দের সঙ্গে থাকতে পারে আক্ষেপের প্রকাশও! সামাজিক মাধ্যম আবেগে-ক্ষোভে কিংবা স্রোত দেখে পরিচালিত হয়, কিন্তু সরকার কেন হবে?

কবির য়াহমদ: কলাম লেখক, ইমেইল: [email protected]

;

ফুকুওকার ফ্লাইট থেকে ফরিদগঞ্জের মাইক



প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি টোকিওর হানেদা বিমানবন্দর থেকে একটি উড়োজাহাজ ৩৫০ জন যাত্রী নিয়ে দেশটির উত্তরের হোক্কাইডো দ্বীপের ফুকুওকা বিমানবন্দরে রওয়ানা দিয়েছিল। এক হাজারেরও বেশি কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে হাজির হলেও মাত্র ১০ মিনিটি দেরীতে পৌঁছানোর ফলে জাপান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট জেএল-৩৩১ বিমানটিকে ফুকুওকায় অবতরণ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। অবতরণ করতে না পেরে অগত্যা বিমানটি সাত ঘন্টা ঘুরে ঘুরে উড্ডয়ণ করে পুনরায় হানেদা বিমানবন্দরে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছিল। এজন্য যাত্রীদেরকে রাতে থাকাসহ ২০ হাজার ইয়েন করে নগদ ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছিল!

বিমানটিতে নারী, শিশুসহ ৩৫০ জন যাত্রী ছিল। অনেকের পরদিনই কর্মস্থলে যোগদানের কথা ছিল। বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে একটি শৃংখলা হিসেবে ধরা হলেও খুব কঠোর ও অমানবিক বলে মনে হয়েছে অনেকের কাছে। আবার অনেকে বলেছেন, এটা এমন আর কি? এটাই জাপানীজদের সময় জ্ঞানের নমুনা!

ফুকুওকার আশেপাশের বিমানবন্দরে যে অবতরণের চেষ্টা করা হয়নি এমনও নয়। ফুকুওকা বিমানবন্দরের পাশের বিমানবন্দরের নাম হলো কিতাকিউশু। পাইলট সেখানে বিমানটিকে অবতরণের চেষ্টা করলে টাওয়ার থেকে উত্তরে জানানো হয়- রাত্রি যাপনের জন্য তাদের আশেপাশে ৩৫০ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতার হোটেল খালি নেই। এমনকি বিমানবন্দর থেকে এতগুলো যাত্রীকে বহন করে ফুকুওকা নিয়ে যাবার মতো পরিবহন নেই। অর্থাৎ, হঠাৎ করে ৩৫০ জন যাত্রীকে সেবাদানের জন্য তাদের কোন ব্যবস্থা নেই। শেষমেশ, সবকিছু হিসেব করে বিমানটি পুনরায় উৎপত্তিস্থলে ফেরত আসতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

ফুকুওকা একটি পরিচ্ছন্ন শান্ত কেন্ বা জেলা। সেখানকার বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়েছিল একটি জনবসতি ও তাদের কৃষিজমিকে অধিগ্রহণের মাধ্যমে। জমি াধিগ্রহণ করার সময় স্থানীয় অধিবাসীরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাদের সাথে নানা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার পর বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর একটি বড় শর্ত হলো- যেহেতু জনবসতির অতি কাছে বিমানবন্দর তৈরী করা হবে সেহেতু রাত দশটার পর কোন বিমান উঠানামা করতে পারবে না।

অর্থাৎ, রাত দশটার পর বিমান ওঠানামার বিকট শব্দদূষণ এড়িয়ে ভালভাবে নিদ্্রাযাবার জন্য অধিবাসীরা খুব বেশী সচেতন। তারা মনে করেন, রাতের বিকট শব্দ তাদের নিদ্রা কেড়ে নেবে এবং সন্তানদের পড়াশুনায় বিঘন ঘটাবে, বয়স্ক ও রোগীদের অসুখ আরো বাড়িয়ে তুলবে। এত তাদের মানসিক অসুবিধা সৃষ্টি হবে, স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে এবং পরদিন কাজের প্রতি অনীহা তৈরী হবে। এ থেকে তাদের উৎপাদনশীলতা কমে যাবে। আরো অনেক কিছু তাদের দাবীনামার মধ্যে ছিল। যেগুলো মেনে নিয়ে ফুকুওকা বিমানবন্দরটি তৈরী করা হয়েছিল। সেজন্য রাত দশটার পর সেখানে কোন বিমান ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। তাই দশ মিনিট দেরীতে বিমান অবতরণের অনুমতি দিলে সেটা সেইসব শর্তের অপলাপ করা হয় মাত্র। এছাড়া পরবর্তীতে জনরোষের ভয় তো আছেই।

এতে প্রমাণিত হয়েছে যে ‘পাবলিক ন্যুইসেন্স’ বা জন বিরক্তির উদ্রেককারী কোন বিষয় সম্পর্কে জাপানীরা কতটুকু সজাগ। বোঝা যায় জন উপদ্রব, নাগরিক আপদ ও সময়জ্ঞানের ব্যাপারে ওদের কঠোরতা।

সময়জ্ঞান ও সময়ের কাজ ঠিক সময়ে সম্পন্ন করার অভ্যাস নিয়ে ওদের কঠোর চর্চ্চা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষদের থেকে আলাদা মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। আমাদের বাঙালী সময়জ্ঞান ওদের দেশে গিয়ে দু-একবার অনিয়মে পড়ে ধাক্কা খেলে ওদের মতো টনটনে হয়ে ওঠারও নজির রয়েছে। ছোটখাটো অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঝড়-বৃষ্টি বাদল হলে আমরা অনেকে অফিস-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে ফাঁকি দিই। ওদের সে বদভ্যাস নেই।

বহু বছর আগে কোন এক স্নো-ফলের কঠিন ঠান্ডা দিনে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছোট্ট ঘটনা মনে পড়লো। এক প্রফেসরের চেম্বারের সামনে রাখা বাক্সের মধ্যে এ্যসাইনমেন্ট জমা দেবার শেষ সময় উল্লেখ ছিল দুপুর দুটা। কিন্তু তার আগে প্রায় দুদিন ধরে তুষারপাতের ফলে ক্যাম্পাসের রাস্তা বরফে জমে পিচ্ছিল হওয়ায় গাড়ি বাদ দিয়ে হেঁটে রওয়ানা দিয়েছিলাম। একা একা হেঁটে যেতে আমার ভয় ও কষ্ট দুটোই হচ্ছিল। কারণ, চারদিকে সাদা চাদরে ঢাকা। জনমানব নেই। ভেবেছিলাম আমার বাইরে বের হওয়াটাই বোধহয় ভুল হলো। কিন্তু যখন চেম্বারের সামনে পৌঁছুলাম তখন ঘড়ির কাঁটায় আড়াইটা বেজে গেছে।

প্রফেসরের চেম্বারের সামনে রাখা বাক্স দেখতে না পেয়ে দরজায় টোকা দিতেই একজন সেক্রেটারী বেরিয়ে এলেন। তাঁকে বাক্সের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন, তুমি কোন দিশে থেকে এসেছ? নানা কথার পর জানালাম ঠান্ডার মধ্যে হেঁটে আসতে একটু বেশী সময় লেগেছে। কিন্তু সেক্রেটারী জানালেন, প্রফেসর দুটোর সময় এসে বাক্স খুলে সব এ্যসাইনমেন্ট নিয়ে গেছেন। এখন আর জমা নেয়ার উপায় নেই! সেদিন আমার এ্যসাইনমেন্ট আর জমা দেয়া হয়নি। কারণ, ওদেশে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে বা দেরী হলে কোন ওজর-আপত্তি চলে না। আর আমাদের দেশে সময়মতো এ্যসাইনমেন্ট জমাদান দূরে থাক, রাজনৈতিক কারণে এবং নানা উছিলায় নির্ধারিত পরীক্ষা পেছানোর জন্য আন্দোলন শুরু করার ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে।

আমরা সময়জ্ঞানের দিক থেকে এখনও অনেক অসভ্য, আনস্মার্ট রয়ে গেছি। সকাল দশটায় কোন সেমিনার শুরু হবার কথা থাকলেও আমাদের অফিসের সেক্রেটারী ও টেক্নিশিয়ানরা সময়মতো এসে পৌঁছান না। এমনকি প্রধান বক্তা ও অতিথিরাও দেরীতে আসেন। দেরী করে হলেও সবাই যখন হাজির তখন হঠাৎ বিদ্যুৎ উধাও হয়ে যায়। কখনও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেসময় বিদ্যুৎ-এর লাইনে মেরামতের কাজ চলছে। অর্থ্যাৎ, যখন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সেবাদান ব্যবস্থা মনিটরিং করে আগেভাগেই সবকিছু সচল করে রাখার কথা- তখন তারা তাদের নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করে রাখেন না। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও সেবাগ্রহণকারী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও পক্ষগুলোর মধ্যে কোন ধরণের কো-অর্ডিনেশন থাকে না। ফলে বহুক্ষেত্রে আমাদের মূল্যবান কর্মঘন্টা অহেতুক নষ্ট হয়ে যায়।

আরেকটি বড় বিষয় হলো অনুষ্ঠানের নামে রাত-দিন, যখন-তখন মাইক, লাউড স্পিকারের মাধ্যমে শব্দদূষণ ছড়ানো আমাদের জাতিগত চরিত্র হয়ে উঠেছে। রাস্তায় গাড়ির হর্ণ একটি মারাত্মক নাগরিক যন্ত্রণা। তার ওপর বিয়েবাড়ি, পিকনিক, কনসার্ট, হকার ইত্যাদির মাইক ও লাউডস্পীকারের কোন নির্ধারিত সময়জ্ঞান ও নিয়মনীতি না থাকায় জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফোনের রিংটোন ও জনসমাগমে বা বাসে-ট্রেনে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় অনেকের হুঁশজ্ঞান থাকে না। এ নিয়ে কারো কোন বিরক্তি ও ক্ষতি হলে সেটা নিয়ে কারো মধ্যে আক্ষেপ বা বিকার লক্ষ্য করা যায় না। এজন্য কোনদিন ভদ্র আচরণের মাধ্যমে কাউকে সরি বলতে শোনা যায় না। এসব সামাজিক শিক্ষাগুলো আমাদের পরিবার বা স্কুল-কলেজে নেই বললে চলে। তাই বচ্চারা বড় হয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে।

সেদিন একটি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক এলাকায় পাশে গভীর রাত পর্যন্ত কনসার্ট হচ্ছিল। ওই রাতেই ফরিদগঞ্জ বাজারে একটি রাজনৈতিক দলের বক্তৃতা শেষে রাতভর মাইকে বিদেশী গান বাজানো হচ্ছিল। আর একই দিনে মাত্র দশ মিনিট দেরীতে রাত দশটার পর একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে অবতরণের অনুমতি দেয়া হয়নি- যা উড্ডয়নের সাত ঘন্টা পর পুনরায় যাত্রার উৎপত্তিস্থলে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছে বলে টিভিতে সংবাদ হয়েছিল।
কারণ, রাত দশটার পর বিমানের ওঠানামা বিমানবন্দরের পাশ^বর্তী নাগরিকদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে! নাগরিক চেতনায় ফুকুওকাবাসীরা কোথায় আর আমরা কোথায়? ফুকুওকার ফ্লাইটের শব্দ ও থেকে ফরিদগঞ্জের কনসার্টের মাইকের শব্দের মধ্যে কি শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আলাদা মাহাত্ম্য বহন করে? ওদের সময়সীমা নীতি ও ‘পাবলিক ন্যুইসেন্স’-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কি আমাদের নাগরিক বিরক্তি বা উপদ্রবের থেকে ভিন্ন বা নতুন কিছ শেখায়ু?

*লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন। E-mail: [email protected]

 

;

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের নতুন উদ্যোগ – প্রত্যাশা টেকসই সমাধান



ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে অবস্থান করছে। দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকে ও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নেওয়া প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালে আবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলশ্রুতিতে গত প্রায় ছয় বছরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে ছিল। ২০২০ সাল থেকে স্বল্প পরিসরে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু না হওয়ায় চীন মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে আসছিল। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আসিয়ান দেশগুলোও ছোট পরিসরে প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল।

সম্প্রতি মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আওতায় এক হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত ৮ মার্চ মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও আসিয়ানের কয়েকটি দেশসহ আট দেশের কূটনীতিকদেরকে রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮ দেশের ১১ কূটনীতিককে মিয়ানমারের মংডু ও সিটওয়ে শহরে অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকা দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নেওয়া প্রস্তুতির অগ্রগতি দেখাতে এই কূটনীতিকদের সেখানে পরিদর্শনে নেওয়া হয়েছে।মিয়ানমার দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় বলে তাদেরকে জানানো হয়েছে।কূটনৈতিক সূত্রগুলোর থেকে জানা যায়, চীনের চাপে মিয়ানমার এ উদ্যোগ নিয়েছে।

কূটনীতিকরা রাখাইন থেকে ফিরে এসে রাখাইনের চলমান পরিস্থিতি ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের তুলনায় এখন কিছুটা ভালো বলে জানিয়েছে। মিয়ানমারের সিটওয়ের কাছে অভ্যন্তরীণ ভাবে বাস্তুচ্যুত (আইডিপি) ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা এখন সিটওয়ে শহরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, আগে রোহিঙ্গাদেরকে ক্যাম্প থেকে বের হতে দেওয়া হত না।

প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, রোহিঙ্গারা সেখানে স্বল্পপরিসরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে যা এতদিন ছিল না। রাষ্ট্রদূতরা নাফ নদীর পাড়ের নকুইয়া গ্রামে পাঁচ বছর আগে বানানো অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পের সংস্কার কাজ দেখেন। নাফ নদীপথে যে সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে তাদেরকে প্রথম কিছুদিন এই ক্যাম্পে রাখা হবে। এরপর তারা মংডুর লাপুখা ক্যাম্পে স্থানান্তরিত হবে। সেখানে তারা মাসখানেক থাকবে এবং সবশেষে তাদেরকে মংডু এবং সিটওয়ের কাছে নির্মাণাধীন ক্যাম্পগুলোতে স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হবে।কূটনীতিকদের চকপিউ এলাকায় ২০১২ সাল থেকে বসবাসরত আই ডি পি’দের ক্যাম্প ও দেখানো হয়। এই ক্যাম্পগুলো বন্ধ করে পাশের গ্রামে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হবে বলে তাদেরকে জানানো হয়। চকপিউ একটা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এখানে চীনের বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত তেল কোম্পানি এবং গভীর সমুদ্রবন্দর রয়েছে।

বিভিন্ন মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো। কয়েক মাস আগে রাখাইনে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। পরবর্তীতে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাসাকাওয়ার মধ্যস্থতায় সেখানে সাময়িক অস্ত্র বিরতি চলছে এবং আপাত শান্তি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু করা যেতে পারে। প্রত্যাবাসন শুরু হলে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কিছুটা কমবে এবং সামরিক সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা বাড়বে বলে চীন মনে করে। আগামী ২৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারকে তাদের যুক্তি পেশ করতে হবে, প্রত্যাবাসনের এই উদ্যোগের সাথে আইসিজে’র সম্পর্ক থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার আইসিজেকে জানাবে যে তারা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পদক্ষেপ নিচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের দেওয়া এই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ওই তালিকা থেকে পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৪০ জনকে বাছাই করা হয়। এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সম্মতি দেয়। বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে তাদের আপত্তি থাকায় তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে ১৫ মার্চ মিয়ানমারের মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ’র নেতৃত্বে ১৭ সদস্যর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। প্রতিনিধি দলটি সাত দিনে ৪২৯ রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য যাচাই শেষে ২২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগ করে।

মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তারা যে আন্তরিক এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা সেটা বোঝানোর চেষ্টা করবে। পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের আওতায় প্রথমে এক হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। মিয়ানমারের তথ্য উপমন্ত্রী মেজর জেনারেল জাও মিন তুন এপ্রিলের মাঝামাঝি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক পাইলট কর্মসূচি শুরু হতে পারে বলে জানায়। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য ৭৫০টি প্লটের ওপর ১৫টি নতুন গ্রাম তৈরি করতে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেওয়া রোহিঙ্গাদেরকে প্রথমে দুই মাসের জন্য হ্লা ফো খাউং অন্তর্বর্তী ক্যাম্পে রাখা হবে। সেখান থেকে মংডু শহরের তাউং পিয়ো লেটওয়ে ও নাগার খু ইয়া ক্যাম্পে তাদের যাচাই করার পর তাদেরকে নতুন এই গ্রামগুলোতে পাঠানো হবে। ২৩ মার্চ মিয়ানমার জানিয়েছে যে, এই পাইলট প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের নিজ গ্রামে ফিরতে ইচ্ছুক। তবে নিজ গ্রামে ফেরত না যেতে পারলে তারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী নয়। নাগরিক অধিকার, ভ্রমণ স্বাধীনতা কিংবা অন্যান্য জাতিসত্তার সমান অধিকারের নিশ্চয়তা পেলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে।

ইউএনএইচসিআর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর সেখানকার পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল নয় বলে জানায়।বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় পাইলট প্রকল্পের আওতায় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে ইউএনএইচসিআর জানায় যে, রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এই আলোচনায় তারা জড়িত নয়। ইউএনএইচসিআর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে অংশ নেয় সেজন্য তারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে। ইউএনএইচসিআর, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ইউএনএইচসিআর।

যেসব রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই বাছাই করা হয়েছে তাদের অনেকে এখনই মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয় বলে জানা যায়। তারা মিয়ানমার ফেরার ব্যাপারে যথেষ্ট ভরসা পাচ্ছেন না। মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গারা সেখানে ভালো আছে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার বন্ধ হওয়ার বিষয়ে সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা তাদেরকে আশ্বস্ত করলে তারা নিজেরাই মিয়ানমারে ফিরে যাবে জানায়। মিয়ানমারে ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। চলমান সহিংসতায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলো মিয়ানমারে ত্রাণ কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে না পারার কারণে রোহিঙ্গারা সেখানে শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সে সব ক্যাম্পে ত্রাণ কার্যক্রম অবিলম্বে চালু করার ব্যবস্থা করতে হবে।

এই পাইলট প্রকল্পে মিয়ানমার জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সাথে রাখেনি। গত ছয় বছর ধরে এই সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসছে। জাতিসংঘ রাখাইনের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের সহায়ক নয় বলে জানিয়েছে। ত্রাণ সহায়তা ছাড়া রোহিঙ্গারা আবার মানবিক বিপর্যয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই উদ্যোগে তাই তাদেরকে সাথে রাখার দরকার ছিল বলে অনেকে মনে করে।

বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে আসছে যে, নাগরিকত্ব না পেলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে কিছু জানায়নি এবং রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তাদের মনোভাবের পরিবর্তনের বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে অগ্রগতির কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদেরকে তাদের জনগণ মনে করে বলে জানিয়েছে। তবে এই প্রকল্পে তাদেরও কোন সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়নি। একই সাথে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মনোভাবের পরিবর্তন সম্পর্কে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়েও কিছু জানা যায়নি এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিবর্তনের ইঙ্গিতও স্পষ্ট নয়।

রোহিঙ্গা অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে যে, নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছাড়া প্রত্যাবাসন হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি তৈরি হবে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পর নতুন বানানো গ্রামে স্থানান্তরিত করবে বলে জানিয়েছে কিন্তু রোহিঙ্গারা তাদের নিজ গ্রামে ফিরতে চায়। মিয়ানমারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের তাদের আগের বাড়িঘর ও গ্রামগুলোতে পুনর্বাসন করা শুরু হলে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে ও রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যাবে এবং এর ফলে সার্বিক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া টেকসই হবে বলে আশা করা যায়।

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের ওপর বোঝার মত চেপে আছে। বিরাজমান বৈশ্বিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ রোহিঙ্গা সংকট থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য বাজেট কমানো হয়েছে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। চলমান এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চাইছে, সংখ্যায় কম হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। বাংলাদেশ সরকার টেকসই প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিয়ে তা চলমান রাখার ব্যাপারে আগ্রহী। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সক্রিয় সহযোগিতা আশা করে।রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নেওয়া মিয়ানমারের এই উদ্যোগ ইতিবাচক। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের বিষয়ে আশ্বস্ত করে টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কার্যক্রম চলমান রাখবে এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এম ফিল, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক।

;

বিমানবন্দর দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে



মো. কামরুল ইসলাম
বিমানবন্দর দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে

বিমানবন্দর দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে

  • Font increase
  • Font Decrease

আকাশপথে ভ্রমণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম আকর্ষণ। সারাবিশ্বে শতশত বিমানসংস্থা হাজার হাজার বিমানবন্দরকে সংযুক্ত করে আছে। এই সংযুক্তি শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করছে তা কিন্তু নয়। আকাশ পথের যোগাযোগ বিশ্বের সার্বিক অর্থনীতির চিত্রকে বদলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অষ্টম বৃহত্তর জনগোষ্ঠির দেশ আমাদের বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়া আছে আরো পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর।

মাত্র ৮টি বিমানবন্দর দিয়ে দেশে আকাশপথে সংযোগ স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫১ বছর এর অধিক সময়। দেশের আকাশ পরিবহন সংস্থাও গঠিত হয়েছে প্রায় একই সময় ধরে। স্বাধীনতার পূর্বে দেশে ১২টি বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উঠা-নামা করতো। কিন্তু বর্তমানে ৮ টি বিমানবন্দর চালু আছে।

ব্যবসায়িকভাবে বর্তমানে চালুকৃত অনেকগুলো বিমানবন্দরে আয়ের সাথে ব্যয়ের একটা সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজ করছে। বরিশাল, রাজশাহী কিংবা যশোর বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ খুব একটা লাভবান হচ্ছে না। কিন্তু সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকছে বিমানবন্দরগুলো সচল থাকার কারনে।

সারাদেশের প্রায় ৫০টির মতো জেলা ৮টি বিমানবন্দর দিয়ে আকাশপথের সংযোগ স্থাপন করেছে। অব্যবহৃত বিমানবন্দরগুলো চালু হলে দেশের আকাশ পরিবহনে সার্বিক চিত্র আমুল পরিবর্তন সাধিত হবে। বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, ঈশ্বরদী, শমশেরনগর, বগুড়া, বাগেরহাট, কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতি তথা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে।

সারাদেশে ৩১টি এয়ারস্ট্রিপ রয়েছে যেগুলোতে কখনই বিমান চলাচল করেনি। সেইসব এয়ারস্ট্রিপগুলো পুনরুদ্ধার করে স্টল এয়ারপোর্ট কিংবা হেলিপোর্ট নির্মাণ করলে আকাশপথে যোগাযোগ আরো সুসংহত হবে। উল্লেখযোগ্য এয়ারস্ট্রিপগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, বাজিতপুর, আড়াইহাজার, ফেনীসহ আরো অনেক।

দেশে ১০ টি হেলিকপ্টার কোম্পানীর প্রায় ৩০টির অধিক হেলিকপ্টার রয়েছে যা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ক্ষুদ্র পরিসরে আকাশ পরিবহন ব্যবসায় ভূমিকা রাখছে। দেশে অধিকসংখ্যক হেলিপোর্ট নির্মান করলে হেলিকপ্টার ব্যবসায় সফলতা আসতে পারে।

বন্ধ হওয়া বা অব্যবহৃত বিমানবন্দরগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে চালু করার পরিকল্পনা করছে সরকার। ফলে দেশের বেশী সংখ্যক জনগণের আকাশ পরিবহন থেকে সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরী হবে। 

প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি বিমানবন্দর চালু হলে বিমানবন্দরকেন্দ্রিক শহর সৃষ্টি হয়। বেকার সমস্যা দূরীকরণে ভূমিকা রাখে। শিল্প কারখানা গড়ে উঠে। গ্রামীণ অর্থনীতি তথা সার্বিক আর্থ সামাজিক উন্নতি দেখা যায়। বিমানবন্দর কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধিত হয়। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির উপর পজিটিভ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

লেখক: মোঃ কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

;