বই হোক নিত্যসঙ্গী

  • সোহেল মিয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

অন্তহীন জ্ঞানের উৎস বই। আধুনিক সভ্যতায় মানব জীবনে বইয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের অনন্ত জিজ্ঞাসা, অসীম কৌতুহল তার এই সকল প্রশ্নের সমাধান আর অন্তহীন জ্ঞান ধরে রাখে বই। শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে মানুষের সকল জ্ঞান জমা হয়ে রয়েছে বইয়ের ভেতর। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার এই যুগে বই যেন রঙিন মোলাটে কাঠের চার দেওয়ালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

আমাদের প্রিয় স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য কি ছিল সেটা আমরা বেমালুল ভুলে যেতে বসেছি। জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় ছিল আমাদের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র। কিন্তু বাস্তবতা আজ ভিন্ন। স্বাধীনতার এতো বছর পরেও আজ জ্ঞান-বিজ্ঞান উৎকর্ষে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। প্রযুক্তির অপব্যবহার আজ আমাদের গ্রাস করেছে তরুণ প্রজন্মকে। যাদের হাতে নির্ভর করছে বঙ্গবন্ধুর আগামীর সোনার বাংলা। আমাদের প্রজন্মকে আমরা যদি জ্ঞান অর্জনের অন্যতম বাহন বইয়ের প্রতি মনোনিবেশ করাতে না পারি তাহলে আমাদের অদূর ভবিষ্যৎ খুব একটা সুখকর হবে না।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে জাতিকে উন্নত করার লক্ষ্যে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে আলোর মুখ দেখতে হলে অবশ্যই বইকেই প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্বের ইতিহাস, দেশের ইতিহাস, নিজ দেশের মক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সামাজিক, রাজনৈতিক, দর্শন, বিজ্ঞান, ভাষা, শিল্প, সাহিত্য সম্পর্কিত জ্ঞান যত বেশি অর্জিত হবে তত মনন জগত সমৃদ্ধ হবে। একটি ভালোমানের বই পারে সামাজিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটাতে। আর সামাজিক ও মানসিকভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারলেই মূল লক্ষ্য তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।

আমাদের মধ্যে এখনো ধারণা রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে- মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার আর ইন্টারনেট। বর্তমান সরকার ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। যা অত্যন্ত আনন্দদায়ক এবং খুবই প্রশংসনীয় উদ্যােগ। তবে শুধুমাত্র জাতীয় দিবস ঘোষণা করলেই হবে না। এক্ষেত্রে সবাইকে গ্রন্থাগারমুখী করে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে গ্রন্থাগারের সার্বিক উন্নয়ন তথা ডিজিটালাইজেশন এবং পেশাজীবী গ্রন্থাগারিক সৃষ্টি ও তাদের জীবন মানোন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রশিক্ষিত ও দক্ষ পেশাজীবী গ্রন্থাগারিক সৃষ্টি করতে পারলে তবেই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২৩ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। যা আশার আলো দেখায়।

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে বই পড়ার চর্চা বাড়াতে হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কালের পরিক্রমায় সভ্যতার সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে গ্রন্থাগার। তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষে বই সংরক্ষণ ও পড়ার অভ্যাস ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। সে- প্রেক্ষিতে মানুষকে বই পড়ায় উৎসাহিত করতে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ পালন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, গ্রন্থাগার হলো তথ্যের অফুরন্ত ভান্ডার। সরকার সর্বসাধারণের জন্য আধুনিক অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সুবিধাসম্পন্ন গ্রন্থাগার নির্মাণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ফলে পাঠক, গবেষক ও তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছে গ্রন্থাগারের ভূমিকা আরো আকর্ষণীয় ও কর্মপোযোগী হয়ে উঠবে। তিনি প্রত্যাশা করেন, গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার হয়ে উঠুক সকলের পথ চলার পাথেয়।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের গ্রন্থাগারগুলো তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আন্তর্জাতিকমানের গ্রন্থাগারের মতো উন্নত এবং সমৃদ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি গ্রন্থাগারগুলোকে ডিজিটালাইজেশন করার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গণগ্রন্থাগার অধিদফতরসহ সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-সম্বলিত এবং অত্যাধুনিক ও নান্দনিক গণগ্রন্থাগার ভবনে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সরকারপ্রধান বিশ্বাস করেন, ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ পালন গ্রন্থাগার ব্যবহারে দেশের মানুষকে আরো উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সহযোগী ভূমিকা রাখবে।

আমরাও বিশ্বাস রাখি- সমাজ পরিবর্তনে বই হবে হাতিয়ার। বই হবে সবার জীবনের নিত্য সঙ্গী। বইয়ে বইয়ে ভরে উঠবে আমাদের আগামি প্রজন্মের সম্ভাবনাময় কোমল হাত। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তৈরি হবে স্মাট গ্রন্থাগার ও স্মার্ট পাঠক।

লেখক: সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম ও সহকারি শিক্ষক, বালিয়াকান্দি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, রাজবাড়ী