রাজনৈতিক দলগুলোই বর্তমান অন্তবর্তী সরকারকে দুর্বল করে রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি, সমাজ চিন্তক ও মানবাধিকারকর্মী ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, ‘তারা (রাজনৈতিক দলগুলো) বলছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া এটা বা ওটা করা যাবে না। আমি তো বলি ড. ইউনূসের সরকার নির্বাচিত। আমাদের ছেলেরা শহীদ হয়ে তাঁকে নির্বাচিত করেছে।’
প্রথম আলো’কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ফরহাদ মজহার। সাক্ষাৎকারে সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গেও খোলামেলা কথা বলেছেন এই চিন্তাবিদ। বার্তা২৪.কম এর পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত কিছু অংশ প্রকাশিত হলো:
বাংলাদেশে তো কোনো সরকারই রাষ্ট্র নিয়ে জনগণের সঙ্গে চুক্তির তোয়াক্কা করেনি। রাষ্ট্রকে তারা দখল ও পদানত করেছে। আপনি ভালো একটা গঠনতন্ত্র বা সংবিধান করলেন। ভবিষ্যৎ সরকারগুলো যে সেটা লঙ্ঘন করবে না, সেই গ্যারান্টি আমরা কোথায় পাব?
ফরহাদ মজহার: আমি যাকে গঠনতন্ত্র বলি, সেটা কিন্তু ওপর থেকে চাপিয়ে দিলে হবে না। আমি যে সংবিধান চিন্তা করছি, সেটা মাত্র কয়েক পৃষ্ঠার। সংক্ষিপ্ত, সহজ, জনগণের বোধগম্য কিন্তু পরিসর ব্যাপক। এমন কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না, যা নির্বিশেষে কোনো ব্যক্তির স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকার হরণ করে কিংবা প্রাণ–প্রকৃতি–পরিবেশ ধ্বংস করে। এ ছাড়া রাষ্ট্রের ক্ষমতার বিভাজনটা কীভাবে হবে, প্রেসিডেন্ট না প্রধানমন্ত্রী পদ্ধতির সরকার চাই, আইনসভা দুই কক্ষ না এক কক্ষের হবে, এক কক্ষের হলে কি সেখানে বিকেন্দ্রীকৃত জেলাগুলোও থাকবে, যাদের অনুমতি ছাড়া কোনো অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করা যাবে না, স্থানীয় সরকারের চরিত্র কেমন হবে, সেটিকে বিকেন্দ্রিত করলে বিভাগগুলোকে কী বলব—সংবিধান এভাবেই করতে হবে। যাদের নদী, হাওর, জলমহাল বেদখল হয়ে গেছে, আপনাকে গ্রামে–গ্রামে ইউনিয়নে–ইউনিয়নে কাউন্সিল করে সেসব মানুষের কথা শুনতে হবে। এসব সম্পদ জনগণের অধীনে রেখে তার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত স্থানীয় সরকারব্যবস্থা লাগবে। অথচ সরকার তো আবারও ওপর থেকেই সংবিধান চাপিয়ে দিচ্ছে। আলী রীয়াজের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই, তিনি তো অন্তত সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলেছেন। বদিউল আলম মজুমদারেরও হয়তো কিছু ভালো আইডিয়া আছে। কিন্তু সব তো ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতির একটা শ্বেতপত্র তৈরি করা হয়েছে। খুব ভালো একটা কাজ। কিন্তু পড়লে মনে হয়, এটি করা হয়েছে দুদকের জন্য। তাঁরা এখনো পুরোনো নয়া–ধ্রুপদি অর্থনীতির বাজার ও চাহিদার মধ্যে আছেন। এটাই তো আমার সমস্যা।রাষ্ট্রের ওপর আন্তর্জাতিক বাজারের বহুজাতিক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণের কারণে আমাদের অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে পারছি না, আমাদের সম্পদ বাড়াতে পারছি না। ট্যাক্স তুলতে পারছি না। আমাদের ভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হাজির করতে হবে। এই শ্বেতপত্র খুবই সুন্দর, কিন্তু রাষ্ট্র গঠনে কোনো কাজে আসবে না। অথচ দরকার গণসার্বভৌমত্বের ধারণার ওপর দাঁড়িয়ে, অবাধ বাজারব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক বিকাশের নীতি ও কৌশলের প্রস্তাব করা।
প্রশ্নটা অন্যভাবে করি। পুনর্গঠন বা সংস্কারের মাধ্যমে যে রাষ্ট্রব্যবস্থাই আমরা গড়ে তুলি না কেন, সেটা তো চালাবে রাজনৈতিক দলগুলোই। তাদের স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠা আমরা ঠেকাব কী করে? তারা রাষ্ট্রের সংস্কারের কথা বলছে, কিন্তু নিজেদের সংস্কারের কথা তো বলছে না।
ফরহাদ মজহার: রাজনৈতিক দলগুলো গণ–অভ্যুত্থানকেই পূর্ণ স্বীকৃতি দিক না। গণ–অভ্যুত্থানের অধীনে অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ ক্ষমতা দিক না। তাহলেই দেখবেন রাজনৈতিক দলগুলোকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলো সরকারটা দুর্বল করে রেখেছে। তারা বলছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া এটা বা ওটা করা যাবে না। আমি তো বলি ড. ইউনূসের সরকার নির্বাচিত। আমাদের ছেলেরা শহীদ হয়ে তাঁকে নির্বাচিত করেছে। আমরা অবশ্যই এই সরকারের সমালোচনা করব। তিনি সরকার চালাচ্ছেন, গ্রামীণের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। হয়তো সেখানে দুর্বলতা আছে কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যে বলছে, তিনি নির্বাচিত নন—তা শুনতে আমরা রাজি নই। তিনি রক্ত দিয়ে নির্বাচিত। আমরা বরং তাঁকে পূর্ণ ক্ষমতা দিইনি। পূর্ণ ক্ষমতা দিলে তিনি সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে পারতেন। জলমহাল, নদী, খাল উদ্ধার করা যেত। এলাকায় এলাকায় বিএনপির দখলবাজির শায়েস্তা করতে কম সময় লাগত। একটি পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করাই এখন প্রধান কাজ। সেটি করতে পারলে বাকি সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে যাবে। আপনি যে রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলছেন, তারা আসলে রাজনৈতিক দল কি না, তা আমরা ঠিক করব নতুন গঠনতন্ত্রের মধ্য দিয়ে। এই যে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে আইন করা হয়েছে, সেই আইনই তো বলে দেয় কে রাজনৈতিক দল আর কে নয়? তাহলে নতুন গঠনতন্ত্রই সাব্যস্ত করবে কারা রাজনৈতিক দল আর কারা নয়। তারপর কথা। তা ছাড়া ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে কি রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত? কিংবা যে দল ১৯৭১ সালে পুরো জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তাকে কি এই নামে রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত? ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি আমার ইতিহাসের অংশ। কিন্তু সেটি কীভাবে থাকবে, তা তো আলাপ-আলোচনার বিষয়। ইসলামি রাষ্ট্র বানালে তো ইসলাম কায়েম হবে না। ইসলাম আমার দৈনন্দিন বাস্তবতা, নৈতিকতা, সংস্কৃতি এসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। সেটিকে আমার আত্মস্থ করতে হবে। এ জন্য আমি গঠনতন্ত্র শব্দটা বলি।
গণ–অভ্যুত্থানের সময়কার বাস্তবতা এখন আর নেই। আপনি যে প্রস্তাবগুলো দিচ্ছেন, সেগুলো এখন কতটা বাস্তবায়নযোগ্য? আপনাকে কি আমি কল্পনাবাদী বলব?
ফরহাদ মজহার: গণ–অভ্যুত্থান ও গঠন: বাংলাদেশে গণরাজনৈতিক ধারার বিকাশ প্রসঙ্গে বইটি কিন্তু আমি ২০২৩ সালে লিখেছিলাম। তখনই গণ–অভ্যুত্থানের ইঙ্গিত দিয়েছি। সব রাজনৈতিক দলকে বোঝানোর জন্য মানবাধিকার মঞ্চ তৈরি করে বলেছিলাম, গণ–অভ্যুত্থানই করতে হবে। গণ–অভ্যুত্থান তো হয়ে গেল। এটি করে ফেলার পর তো আমার মধ্যে প্রচুর আত্মবিশ্বাস। বাংলাদেশ হবে পুরো উপমহাদেশকে পুনর্গঠন করার কেন্দ্র। নেতৃত্ব আমাদের তরুণদেরই নিতে হবে। আমি নিশ্চিত, আমি যে কথাগুলো বলছি তা বাস্তবায়িত হবে।
অন্য একটা প্রসঙ্গে যাই। শেখ হাসিনার সরকার তাদের সব অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতির ন্যায্যতা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের একটা সংকীর্ণ বয়ান হাজির রেখে। ফলে তাদের পতনের পরে অনেকে আশঙ্কা করছেন, মুক্তিযুদ্ধই প্রশ্নের মধ্যে পড়ে গেল কি না...
ফরহাদ মজহার: দেখুন, ১৯৪৭ সালে আমাদের লড়াইটা কী ছিল? জমিদার আর মহাজন শ্রেণি আমাদের শোষণ করছে। আমাদের জমিহারাদের রক্ত ও ঘামের ওপর কলকাতা শহর গড়ে উঠেছে। এটাই ইতিহাস। আমরা তো সাতচল্লিশে দেশভাগ চাইনি; চেয়েছি একটি ইউনাইটেড বেঙ্গল নেশন। ইউনাইটেড স্টেটস অব ইন্ডিয়া হতে পারলে ইউনাইটেড বেঙ্গল হতে পারবে না কেন? সোহরাওয়ার্দী, শরৎ বোস প্রমুখ তাই চেয়েছিলেন, জিন্নাহরও সম্মতি ছিল। আমরা তো দেশভাগ করতে চাইনি। আমাদের শেখানো হয়েছে মুসলমানরা নাকি দেশভাগ চেয়েছে। এখন ঐতিহাসিকদের গবেষণায় প্রমাণিত এই কাজ উচ্চবর্ণের বাবুরা করেছেন। দেশভাগের পর কী হলো? আমরা একটা ধর্মবাদী রাষ্ট্র গঠন করলাম। ভারতও ধর্মবাদী ছিল, যেটা এখন হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র আকারে পরিগঠিত হয়েছে। আমাদের জমির সমস্যা যখন মিটে গেছে, তখন বায়ান্নতে আমরা সংস্কৃতি ও ভাষা দিয়ে লড়েছি। আমরা রক্ত দিয়ে বাঙালি হয়েছি। আমরা নিছক ভারতীয় নই, পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয়ও নই। বাঙালি হওয়ার জন্য আমাদের শহীদ হতে হয়েছে। বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য, রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়ার জন্য আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ যেকোনো প্রশ্নের একেবারে ঊর্ধ্বে। তাই কেউ যদি বলে চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান দিয়ে একাত্তরকে বাদ দিচ্ছি, সেটা একেবারে বাজে কথা। তাহলে ঘটনাটা কী ঘটল? একাত্তরে আমরা একটা স্বাধীন ভূখণ্ড আদায় করেছি। কিন্তু এর পরে অনেকগুলো ভাবাদর্শগত প্রশ্নের মীমাংসা আমরা করতে পারিনি। এ কারণে শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্ট সরকার পেয়েছি। সেসব ভাবাদর্শগত প্রশ্নের মীমাংসার জন্যই চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে। এবার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন করবার পালা।
এর মধ্য দিয়ে সাতচল্লিশ থেকে পরবর্তী ইতিহাসের ধারাবাহিকতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করলাম, এই দেশ শুধু বাঙালির নয়, সকলের, ছোট–বড় সকল জাতিসত্তার, সকল ধর্মের সকল বিশ্বাসের, আস্তিক কি নাস্তিক সকলের ইত্যাদি। এই বাংলাদেশ পুরো উপমহাদেশ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে। প্রাক্-ঔপনিবেশিক অভ্যস্ত চিন্তা থেকে এ জন্য সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলা এখন বিভিন্নভাবে আসবে। বখতিয়ারের ঘোড়া আকারে নয়, কিন্তু ইসলাম উপমহাদেশের ইতিহাসের অঙ্গাঙ্গি অংশ। উপমহাদেশের ইতিহাস ইসলামেরও ইতিহাস। অর্থাৎ আমরা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক-সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। জুলাই গণ–অভ্যুত্থান তার প্রমাণ। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের সেদিকে নিয়ে যাবে। এটা করতে গিয়ে আমাদের অনেক দুর্বলতা বের হবে। অনেক ব্যর্থতা থাকবে। কিন্তু আমরা তা কাটিয়ে উঠব। আমরা ইতিহাসের আরেকটা স্তরে উপনীত হতে পারব।
আমাদের নদীবিধৌত বাংলার তো নিজেরই একান্ত বহু ধর্মীয় ভাব আছে—নাথ, বৈষ্ণব, শাক্ত, বাউল, মারেফতপন্থা। এদেরও তো বিরাট দাবি আছে
ফরহাদ মজহার: অবশ্যই। আমাদের মধ্যে এসব ভাব তো একাকার হয়ে আছে। ফকির লালন সাঁই, জালালউদ্দীন খাঁ, রাধা বল্লভ, খালেক দেওয়ান, আবদুল হালিম বা ফকির–দরবেশ–বয়াতিদের হাতে এটা হয়েছে। সুফিরা করেছেন। তারও আগে বৌদ্ধ সহজিয়ারা করেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে পূর্ব বাংলাতেই এটা হয়েছে। বাংলা সব সময় সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ধর্মের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। নামাজ হচ্ছে; আবার তার পাশেই গান হচ্ছে, ‘মানুষ থুইয়া খোদা ভজ, এ মন্ত্রণা কে দিয়েছে?’
ধর্মকে দর্শন আর আইন আকারে হাজির করা পাশ্চাত্যের অবদান। ইসলামে আল্লাহ সব সময় কোনো না কোনো রুহানির পথ আপনাকে দেখাচ্ছে। কোনো ব্যক্তি সত্যের দাবি করতে পারে না। কারণ, মানুষ মৃত্যুর দ্বারা সীমিত। স্থানকালে আবদ্ধ। আপনি নশ্বর। মহানবী (সা.) মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করলেন যে মানুষের মধ্যে রক্ত, গোত্র, জাতিকেন্দ্রিক কোনো পরিচয়বাদ থাকতে পারে না। মানুষের একটাই পরিচয়, সে আদম ও হাওয়ার সন্তান। মূলে সে একটাই জাতি। নৃতাত্ত্বিক অর্থে বিভিন্ন জাতি ও ভাষা তৈরি করে আল্লাহ বলছেন, তারা যেন পরস্পরকে চেনার চেষ্টা করে। তাদের সবাইকে নিয়ে বিশ্বসমাজ গড়তে হবে। এর সঙ্গে কমিউনিজমের কী তফাত? মার্ক্স তো কমিউনিজমকে কোনো ইডিওলজি বা ধর্ম বলেননি, বিশ্বসমাজ গঠনের দিক থেকে মানবেতিহাসের অভিযাত্রা বুঝিয়েছেন। তাই না?
আমাদের লড়াইয়ের এই যে দীর্ঘ পথ, এখানে দাঁড়িয়ে আপনি বাংলাদেশের কী ভবিষ্যৎ দেখেন?
ফরহাদ মজহার: আমি মনে করি, বাংলাদেশ হিসেবে আমরা সাংঘাতিক ভালো করেছি। পশ্চিমকে কত শতাব্দী পার করে এখানে পৌঁছাতে হয়েছে ভেবে দেখুন! আমরা তো মাত্র ৫০ বছরে এত দূর চলে এলাম। আমরা এখন ঢাকায় বসে সাহস করছি পশ্চিমকে মোকাবিলা করার। বায়ান্নতে রফিক, জব্বাররা শহীদ হলেন। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি,’ এর মধ্য দিয়ে নতুন চেতনার যে বীজ পোঁতা হলো, সেটি দিয়েই তো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। চব্বিশে আমরা আরেকটা বড় বীজ বুনেছি। এটি মহিরুহ হবেই। তার কাছে আগামী আরও ৫০ বছরও কিছু না। এখনকার তরুণ প্রজন্ম অদ্ভুত সব চিন্তা করছে, স্বপ্ন দেখছে। এই বাংলাদেশ তো পরাজিত হতে পারে না। আপনি মারপিট করতে পারেন, গৃহযুদ্ধ বাধাতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশ কখনোই সিরিয়া হবে না। মধ্যপ্রাচ্যে তো আমাদের তরুণদের মতো এমন চিন্তা বিকশিত হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যে কী ঘটনা ঘটছে, তার তো কিছু খোঁজখবর রাখি আমি। আর ইসলাম মধ্যপ্রাচ্যে এসেছে দেড় হাজার বছর আগে। আমরা এখানে তারও বেশি সময়ের দীর্ঘ ইতিহাস বহন করে চলেছি। বিভিন্ন ধর্মভাব, ভাবান্দোলন, কাব্য, সাহিত্য—নানাভাবে আমাদের সমৃদ্ধ করেছে।
এই পুরো মন নিয়েই আমাদের দাঁড়াতে হবে। এ জন্য যে রাজনৈতিক পরিসর দরকার, সেটা আমরা বাংলাদেশে তৈরি করতে চাই। ভারত এখানে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। হিন্দুত্ববাদের কারণে দৌড়ে সে আমাদের সঙ্গে পারবে না। বাংলা ভাষার মধ্যেই এখানে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবটা ঘটবে। আমাদের চেতনার মূল বীজটা রোপিত হয়ে গেছে। পাটাতন তৈরি হয়ে গেছে। আমি এক ফোঁটাও হতাশ নই।