'করোনা'য় করণীয়

  • এরশাদুল আলম প্রিন্স
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চীনে বর্তমানে এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। আক্রান্ত শহরগুলো আজ একেকটি ভুতুড়ে নগরী। ঘটনার ভয়াবহতায় চীনের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগও সীমিত হয়ে পড়েছে। সেখানে বিরাজ করছে এক মানবিক বিপর্যয়। চীনের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে যেটুকু খবর আসে তাতেই ভয়াবহতার এ চিত্র পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা কতটা ভয়াবহ তা হয়তো আমরা এখান থেকে অনুমান করতে পারবো না। তবে অবস্থা যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

নিজ দেশে যেন এ ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য অন্যান্য দেশ পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চীনের সঙ্গে তারা বহির্গমন ও বহিরাগমন সীমিত করেছে। নিবিড় স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমেই চীন থেকে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে চীনের রয়েছে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। নানা ক্ষেত্রেই চীন-বাংলাদেশ পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। ব্যবসা, চাকরি ও শিক্ষার জন্য প্রচুর বাংলাদেশি চীনে যাওয়া আসা করে ও সেখানে অবস্থান করে। দুই দেশের নাগরিকদেরই দুই দেশে রয়েছে যাতায়াত। ফলে বাংলাদেশ ভাইরাস সংক্রামণের সম্ভাবনা থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়।

বিজ্ঞাপন

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চীন থেকে আসা নাগরিকদের বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষান্তেই বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এখনও কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাস যাতে চীন থেকে কোনোভাবে না আসতে পারে তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। এটিই হচ্ছে আমাদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। প্রতিরোধের সর্বোচ্চ চেষ্টাই বাংলাদেশে জন্য প্রধান করণীয়। কারণ, এ ভাইরাস আমাদের দেশে সংক্রমিত হলে তা প্রতিকারের সুযোগ খুব ও সক্ষমতা আমাদের কতটুকু আছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। অন্তত চীনের ভয়াবহতার দিকে তাকালে সহজেই তা অনুমান করা যায়।

বাংলাদেশ একটি জনবহুল ও ঘনবসিতপূর্ণ দেশ। এখানে কোনোভাবে রোগ সংক্রামিত হলে তা খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়বে। এছাড়া আমারা জাতি হিসেবে খুব স্বাস্থ্য সচেতন নই, ফলে যেকোনো ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও বেশি। সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও যে আমাদের খুব বেশি তাও নয়। এসব কারণে সর্বোচ্চ প্রতিরোধেই আমাদের জোড় দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু তারপরও যদি কোনোভাবে ভাইরাস সংক্রমিত হয় তবে আমাদের করণীয় কী? এসব বিষয় নিয়ও আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের তেমন কোনো আগাম প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী এসব নিয়ে আগে থেকেই আমাদের আলোচনা হওয়া দরকার। সরকার ও দেশের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করে এবিষয়ে এখনই করণীয় ঠিক করে রাখা প্রয়োজন। অন্তত একটা সফট প্লান করা থাকলে সে অনুযায়ী কাজ করতে সুবিধা হবে। এমন আগাম প্রস্তুতি আগে থেকে এজন্যই নিতে হবে, কারণ এ বিষয়ে আমাদের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে, চীনই যেখানে পরিস্থিতি সামলে নিতে পারেনি, সেখানে আমাদের আর কীইবা করার থাকবে। চীন প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পায়নি, কিন্তু আমরা তো সুযোগ পেয়েছি। একবার ভাবুন, বাংলাদেশেই যদি প্রথম এ ভাইরাস বা এমন কোনো ভাইরাস কোনোভাবে আক্রমণ করতো তবে আমাদের কী হতো! ফলে, চীনের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। ভীতি ও গুজব না ছড়িয়ে আগাম আলাপ-আলোচনা ও প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলতে হবে, কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশে এমনিতেই স্বাস্থ্যসেবা তলানিতে। সংক্রামক রোগের চিকিৎসা সেবা আরও তলানিতে। এ সংক্রামক রোগের চিকিৎসা, সেবা, শিক্ষা ও গবেষণা-সব ক্ষেত্রেই বিরাজ করছে এক কঠিন দুরবস্থা। করোনাভাইরাস আক্রমণ করলে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। সামান্য ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা আর সর্দি-জ্বর সারাতেই আমাদের অবস্থা তথৈবচ! সীমিত, চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক।

দেশে সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল আছে একটি- মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। এখানে ধনুষ্টঙ্কার, ডিপথেরিয়া, জলবসন্ত, হাম, এইচআইভি/এইডস, পোলিওর চিকিৎসা হয়। সরকার বলছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরও চিকিৎসা হবে এখানে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু এই একটি হাসপাতাল দিয়ে কি এই মহাযজ্ঞ সাধন হবে? এমনিতেই এ হাসপাতালের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাস নিরাময়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে এই হাসপাতাল কতটা সক্ষম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তারপরও সীমিত সক্ষমতা দিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। সেই সঙ্গে দেশের অন্যান্য সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোকেও প্রস্তুত করতে হবে। এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়েও ব্যবস্থা নিতে হবে।

দেশবাসীর জন্য একটি সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করতে হবে যাতে এই ভাইরাস না ছড়ায়। পূর্ব সতর্কতামূলক ও আপদকালীন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। এবং দুক্ষেত্রেই একটি সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি এখনই প্রণয়ন করতে হবে। গণমাধ্যমকেও আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কোনো রকম ভীতি ও গুজবের বিরুদ্ধেও সরকার ও গণমাধ্যমকে সজাগ থাকতে হবে। তবে এই মুহূর্তে সরকারকে চীন থেকে আসা দেশি বিদেশি নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। চীনে অবস্থানরত দেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে। সেখানে তাদের নিরাপদে রাখার ব্যবস্থাও করতে হবে।

জানা মতে, মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সরকারি হাসপাতালকেও প্রস্তুত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, 'সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত। প্রথমত, এই রোগ যেন দেশে ঢুকতে না পারে, তার প্রস্তুতি আছে। ঢুকলে দ্রুত শনাক্ত করার প্রস্তুতি আছে। যদি শনাক্ত হয়ও, চিকিৎসার জন্যও প্রস্তুতি আছে। সংক্রমণ প্রতিরোধের উদ্যোগও আছে।’ এটি খুবই আশার কথা। তার এ আত্মবিশ্বাসী অবস্থান বাস্তবায়িত হোক সেটাই কাম্য। এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে দেশ মুক্ত থাকুক এটা একান্ত কাম্য। করোনাভাইরাস আক্রমণের পূর্বাপর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এরশাদুল আলম প্রিন্স: কলামিস্ট