পাপন ভাই, ইউ আর গ্রেট!

  • সৈয়দ ইফতেখার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

পাপন ভাই। তার পুরো নাম, নাজমুল হাসান পাপন। ক্রিকেট পাগল মানুষ। দারুণ সংগঠক। সফল ব্যবসায়ী, কর্মদক্ষ ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও তিনি রাজনীতিবিদ। মানুষের জন্য কাজ করেন। সেই সুবাদে সংসদ সদস্যও বটে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও সমাজকর্মী-রাজনীতিবিদ আইভি রহমানের সন্তান পরিচয় তো রয়েছেই। পাপন ভাইকে ধন্যবাদ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল বিশ্বকাপ আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ায়। অবশেষে তিনি সফল। কারণ ইয়াং টাইগাররা যে অর্জন করেছে তার পেছনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাজমুল হাসান পাপনেরও অবদান কম নয়। তাই ধন্যবাদ তার প্রাপ্য। অভিনন্দনও। তার হাত ধরেই এলো বিশ্বমঞ্চের প্রথম কোনো শিরোপা।

যদিও ক্রিকেট বোর্ড এবং জাতীয় দল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধিক মতামত কিংবা অযাচিত মত দেয়ার কারণে তার সমালোচনাও ঢের। অন্যদিকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ক্যাসিনোর কেলেঙ্কারি (লোকমান টাকা পাঠাতেন আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদের কাছে), লোকমানকে জেলে নেয়ার পরও, সুস্পষ্ট অভিযোগের পরও নাজমুল হাসান পাপন তার বিরুদ্ধে জোর গলায় কিছু বলেননি। এগুলো নিয়েও গণমাধ্যমসহ সচেতন মহলে নিন্দা কম হয়নি। আশা করবো, নাজমুল হাসান পাপন এসব বিষয়ে নজর দেবেন। আশপাশের দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবেন না। এতে সার্বিক মঙ্গল ক্রিকেটেরই। কারণ তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান অভিভাবক।

বিজ্ঞাপন

অভিভাবক পদে থেকে কেন তিনি গ্রেট হলেন এবার সে কথার ব্যাখ্যা আসি। সাবের হোসেন চৌধুরীর হাত ধরে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর পাপনের সময়ে আরেকটি বড় পালক যোগ হলো বাংলার ক্রিকেট ইতিহাসে। যতদিন ক্রিকেট বাংলার ময়দানে আছে, ততদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন পাপন। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে কয়েকদিনের মধ্যে দেয়া হবে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা।

বৃহস্পতিবার (১২ই ফেব্রুয়ারি) দেশে ফিরেই বিমানবন্দর থেকে মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যায় দল। সেখানে বোর্ড সভাপতি ঘোষণা দেন শিরোপা জেতা যুব দলের প্রত্যেক ক্রিকেটারের জন্য দুই বছরের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে বিসিবি। এই দুই বছর প্রতি মাসে এক লাখ করে টাকা পাবেন ক্রিকেটাররা।

বিজ্ঞাপন

সভাপতি জানান, আকবর আলী-রাকিবুল হাসানদের দক্ষতা ও স্কিল আরও বাড়াতে যত রকমের সুযোগ-সুবিধা দেয়া দরকার, সব কিছুরই ব্যবস্থা করবেন তারা। যুবাদের পরিচর্যার জন্য নতুন একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের কথা বলেন তিনি। তার কথাটা হুবহু তুলে ধরছি, ‘আমরা ঠিক করেছি, অনূর্ধ্ব-২১ একটি ইউনিট আমরা গঠন করবো। এই অনূর্ধ্ব-১৯ দলটার জন্য আগামী দুই বছর বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। স্পেশালাইজড ট্রেনিং, তাদের স্কিল বাড়ানোর কাজ করা হবে। আর এই দুই বছর প্রতি মাসে প্রত্যেকে এক লাখ টাকা করে পাবে। এটা দুই বছরের চুক্তি। দুই বছর পর যদি আমরা দেখি যে তাদের উন্নতি হয়েছে, তারা ভালো খেলছে, তাহলে অবশ্যই চুক্তি নবায়ন করা হবে। আর যদি দেখি কারো পারফরম্যান্সের বিচ্যুতি ঘটেছে, সেভাবে উন্নতি হচ্ছে না, তাহলে সে চুক্তি থেকে বাদ পড়বে। বোর্ড থেকে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের জন্য যত রকমের সুযোগ-সুবিধা দরকার, আমরা সব ব্যবস্থা করবো।’

গেলো ১০ই ফেব্রুয়ারি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪-এ ‘এবার ঘরে চাই বড়দের বিশ্বকাপ’ শিরোনামে কলামে তুলে ধরেছিলাম এই জুনিয়র টাইগারদের উন্নত প্রশিক্ষণের কথা। এখনই তাদের জাতীয় দলে না নেয়ার কথা। ভালো লাগছে এই ভেবে যে, বিসিবি সেই পথেই হেঁটেছে। নাজমুল হাসান পাপন সুন্দর কথা বলেছেন। তার কথায় ইঙ্গিত মিলেছে যে, হুট করে জাতীয় দলে যুবাদের ডেকে নেয়া হবে না। দেয়া হবে উন্নত প্রশিক্ষণ। মানসিক ও শারীরিকভাবে তাদের আরও শক্তপোক্ত করে গোড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বিসিবি। এটা আধুনিক ক্রিকেটে আসলেই দরকার।

দরকার কারণ, ইতোপূর্বে আমরা ঠিক ততটা ভালো করতে পারিনি যতটা আশা করেছি। বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব-১৯-এর পর পার্থক্যটা গড়ে ওঠে আরেকটু বড় হলে। অন্তত বছর তিনেক পর। অস্ট্রেলিয়া, ভারতের ব্যাটসম্যানরা হয়ে ওঠেন এক একটা ‘রান মেশিন’। বোলাররা 'আনপ্লেয়েবল'। আর বাংলাদেশ পায় ‘ব্যাটের কানায় টোকা লাগিয়ে’ আউট হওয়া ব্যাটসম্যান আর বৈচিত্র্যহীন বোলার! যারা নিজের ছায়ায় নিজেকে খুঁজে ফেরেন! এবার এমন যেন না হয়- সে জন্য বিসিবি আগে থেকেই সচেতন। ফলে আশার আলো দেখছি। হুট করে দলে ডেকে নিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে তাদের না ফেলে সময় দেয়ার সময় এখন। তাই বলে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মামুলি পারফরম্যান্সে বসে থাকার জো নেই। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সর্তক হওয়ার সময় হয়েছে। এই যুবারাই তাদের সচেতন করেছে- বিশ্বাস করি। হয় খেলুন এবং জিতুন, নয় দল ছেড়ে দিন এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। তাছাড়া সিনিয়রদের জন্য বিসিবির উচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনার প্রয়োজন। অভিজ্ঞতা একদিনে জন্মে না, এর মূল্যায়ন করতে হবে বোর্ডকে।

পাশাপাশি ব্যাঘ্র শাবকদের সঠিক পরিচর্যা করে গেলে ২০২৩ সালের মূল আইসিসি বিশ্বকাপে অন্তত চার-পাঁচজনকে আমরা এখান থেকে পাবো। সে কথা মাথায় রেখেই কাজ জোরদার করা প্রয়োজন। আর হ্যাঁ, আরেকটা বড় কথা- সেটা হলো- ২০২৭ কিংবা ২০৩১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে এমন লক্ষ্য ধরে বোর্ডকে এগোতে হবে। যেন আমরা কোনো দিক দিয়েই পিছিয়ে না পড়ি। সব দ্বন্দ্ব ভুলে সাবের হোসেন চৌধুরীদের মতো ক্রিকেটের নিবেদিত প্রাণদেরও পরামর্শ নিতে হবে। এই যুবাদের কাঁধেই আমাদের ভবিষ্যৎ- তা ভুলে গেলে চলবে না। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এক হতে হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ০৯ই ফেব্রুয়ারি (রোববার) ভারতের বিপক্ষে খাদের কিনার থেকে আমরা জয় পেয়েছি। আরেকটু হলে হেরেও যেতে পারতাম। তাই উন্নতির শেষ নেই। স্রোতে গা না ভাসিয়ে কাজটাকে আরও জোরদার করা আবশ্যক। গড়তে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ক্রিকেটারদেরও সচেতন থাকতে হবে। তাদের সবসময় ইতিহাস ও আগামী সচেতন রাখতে হবে। যেন ভালো মানুষ হিসেবে তারা বেড়ে ওঠেন, খেলার প্রতি শতভাগ সৎ থাকেন। পাশাপাশি দিতে হবে স্বাধীনতাও। মানসিক কোনো চাপ তাদের দেয়া যাবে না। আর ইনজুরি থেকে মুক্ত থাকতে পরিপূর্ণ পরিচর্যা করে যেতে হবে।

মোদ্দাকথা নাজমুল হাসান পাপন যা যা বলেছেন তার বাস্তবায়ন ঠিক মতো হতে হবে। স্বচ্ছভাবে সেটা করা জরুরি। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেন এই দল ভালো ক্রিকেট খেলে সেই ব্যবস্থা আগামী দুই বছরে করতে হবে। এক্ষেত্রে বোর্ড সভাপতি সফল হলে সফল হবে পুরো বাংলাদেশ। তখন যুব বিশ্বকাপ জয়ীদের হাত ধরে আইসিসি মূল বিশ্বকাপও পাবে লাল সবুজের বাংলা।

বিশ্বজয়ী যুবাদের জন্য তো সিদ্ধান্ত এলোই, এবার বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের স্তর- ১৩, ১৫, ১৭ ও ১৯-এর দিকে গুরুত্ব আরও বাড়ানো প্রয়োজন। যেন ২০২০ সালের যুব বিশ্বকাপের সাফল্য ২০২২ সালে উইন্ডিজেও ধরে রাখতে পারি। সেবারও শিরোপাই চাই। এমনই যেন হয়, এই প্রত্যাশা করছি। কারণ, ‘পাপন ভাই, ইউ আর গ্রেট’- এ কথা বারেবারে বলতে চায় জনগণ। সুযোগ করে দিন।

সৈয়দ ইফতেখার: লেখক, সাংবাদিক