সময় গেলে সাধন হবে না

  • আহসান ইমাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

পুরো পৃথিবী আজ গভীর সংকটে। তবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যেভাবে করোনার(কভিড-১৯ ভাইরাস) প্রস্তুতি নিয়েও হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের অবস্থা কেমন হতে পারে তা বলা বাহুল্য।

গত তিন মাস আগেই ব্যবস্থা নেয়া যেত, যেন একটি মানুষও এদেশে করোনায় আক্রান্ত না হয়। সেটি যেহেতু হয়নি এখনই দেশ লকডাউন করা জরুরি। কারণ করোনা জ্যামিতিক হারে অন্যান্য দেশে সংক্রমিত হয়েছে। এখানেও তাই হতে যাচ্ছে। এখনই যদি দেশ লকডাউন না করা হয় তবে কী হতে পারে—
১. স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে তাতে করে পুরো চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাধারণ রোগীসহ করোনা আক্রান্তরা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। কারণ ডাক্তার আক্রান্ত হলে অন্যদেরকেও আক্রান্ত করবেন। যেহেতু রোগের লক্ষণ প্রকাশ হতে ১৪ দিন সময় লাগে। ভাইরাস তার আগেই ছড়াতে থাকে।

বিজ্ঞাপন

২. জানা মতে এর প্রশিক্ষণের আয়োজন খুব অল্প পরিসরে এক সপ্তাহ আগে হয়েছে। এখনও সব ডাক্তার, নার্সরা জানেন না কীভাবে চিকিৎসা চলবে।

৩. আরও জানা মতে, কিট থানা পর্যায়ে পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে। এতে স্পেসিমেন হ্যান্ডল করতে না পারলে রোগ আরও ছড়াবে। থানা পর্যায়ে ল্যাব নেই।

বিজ্ঞাপন

লকডাউনের পর করণীয়:

১. স্বাস্থ্যখাতে আরও মনোযোগী হওয়া। আন্তমন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স করে ও সিটিজেনস অ্যাকশন ফোরাম করে, তাদের মধ্যে সমন্বয় করা।

২. দেশের সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

৩. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কঠোর নিয়ম করা। মিটিং, মিছিল সব বন্ধ করা। খোলা জায়গায় জমায়েত বন্ধ করা।

৪. গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে পিপিই সরবরাহ করা।

৫. সকল উপজেলায় র‍্যাপিড রেসপন্স টিম সংগঠন করা।

৬. দ্রুত থানায় থানায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা (স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত করা।

৭. সব স্থল, জল সীমান্ত এবং এয়ারপোর্ট বন্ধ করা।

৮. ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া। অন্তত জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় খাবার।

৯. আগামী এক মাসের বেতন যার যার একাউন্টে দিয়ে দেওয়া

১০. প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার মজুদ রাখা।

দেশের প্রত্যেকটা মানুষ করোনা হুমকিতে। এমনকি যারা ঘর থেকে বের হননি বা হচ্ছেন না তারাও। কারণ পরিবারের কাউকে না কাউকে বের হতে হচ্ছে। বাহির থেকে প্রতিদিন গৃহপরিচারিকা আসা বন্ধ করে দিলেও ময়লা নিতে আসা লোকটি বা সংবাদপত্র দিতে আসা লোকটি এবং সেই সংবাদপত্র থেকেও হতে পারে। আর সেটি বন্ধ করলেও ঘরে আবর্জনার স্তূপ নিরাপদ নয়। এ থেকে অন্যান্য রোগ হলে তার চিকিত্সা করাতে গিয়েও করোনার শিকার অস্বাভাবিক নয়। অর্থাৎ করোনা জ্যামিতিক হারে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বৃদ্ধি পেতে পারে।

সবার আগে মানুষ। মানুষ বাঁচাতে হবে। মানুষ করোনাতে যাতে না মরে, নিঃস্ব, অনাহারে যেন না মরে এই সময়ে এটাই সরকারের প্রধান এবং প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত। যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে রাস্তায় রাস্তায়, ঘরে ঘরে লাশ পড়ে থাকবে। রাজনীতিবিদ হিসেবে না, সেলিব্রিটি হিসেবে না, সমাজকর্মী হিসেবে নিজেদেরকে ভাবতে হবে এবং সেভাবে কাজ করতে হবে।

আহসান ইমাম: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়