সবাইকে কেন ধান কাটতে হবে?

  • মো. আকরাম হোসেন
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে ধানের মৌসুম এলেই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের কর্মীরা স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকের ধান কাটছেন। এই ধান কাটা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ যেমন এই ধান কাটাকে বাহবা দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ একে অতি-উৎসাহী ও লোক দেখানো বলেই মনে করছেন।

যারা ধান কেটে দিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই জানাচ্ছেন, দলীয় নেতাদের আহ্বানে তারা কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন। যে সব কর্মীরা কৃষি কাজ জানেন বা অতীতে কোনো এক সময় কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারা অবশ্যই কৃষকের ধান কাটতে সহযোগিতা করতে পারেন। কৃষকের খারাপ সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। দেশকে বাঁচাতে হলে কৃষিকে বাঁচাতে হবে। কৃষি উৎপাদন হচ্ছে আদি ও মৌলিক উৎপাদন। পৃথিবী যতই আধুনিক হোক না কেন, কৃষিকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। কৃষিকে আধুনিকায়ন করেই আধুনিক বিশ্ব সম্ভব। কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হলে আপনাআপনি সব কিছুই ব্যাহত হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের কৃষিকে বাঁচানোর জন্য অতীতে স্বেচ্ছাশ্রমে অনেক মহতী কাজ হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৪ সালের বন্যায় কৃষকের আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমন ধানের বীজতলা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। জমি পানির নিচে চলে যাওয়ার কারণে নতুন করে চারা উৎপাদনও সম্ভব ছিল না। কৃষকের কাছে বীজও ছিল না। দেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। মহাবিপর্যয়ের মধ্যে কৃষক। বন্যার কারণে জনজীবন ছিল বিপদাপন্ন। তখন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন স্বেচ্ছাশ্রমে ও নিজেদের খরচে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধানের চারা উৎপাদন করেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই সেই চারা কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়। যা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে এই মহতী উদ্যোগের ধরণ পাল্টে গেছে। প্রচারমুখী রাজনীতিতে প্রাধান্য পাচ্ছে এখন শো-অফ। সবাই ধান কাটাকেই মনে করছে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর একমাত্র উপায়।

স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কেটে কৃষকের উপকার করতে চাইলে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। তা না হলে এ মহতী উদ্যোগ চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে যাবে। দলীয় কমান্ড মানতে গিয়ে সবার ধান কাটতে যাওয়ার দরকার নেই। দলীয় কমান্ড মানার অনেক জায়গা আছে। সব জায়গায় দলীয় কমান্ড মানার প্রয়োজন নেই। যদি আপনি কৃষিকাজ না জানেন বা কৃষিকাজ করতে না পারেন তাহলে দলীয় কমান্ড মানার জন্য কাচি হাতে ধান ক্ষেতে যেতে হবে না। এতে দলেরও ক্ষতি, কৃষকেরও ক্ষতি। কৃষিকাজ না পারা কোনো অন্যায় না। সবাইকে কৃষিকাজ পারতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কৃষিকাজ না জানা সত্ত্বেও যদি আপনি ধান কাটতে যান, তাহলে কৃষকের উপকারের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। বিভিন্ন জায়গাতে কৃষকদের অভিযোগও করতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, নেতারা ধান কাটতে এসে উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন। পাশাপাশি নেতাদের ধান কাটা দেখতে ভিড় করছেন অসংখ্য কর্মী। পাকা ধানের ক্ষেতে কর্মীদের অতিরিক্ত উপস্থিতিতে ফসলের ক্ষতিও হচ্ছে। কোথাও কোথাও কাঁচা ধান কাটতেও দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

হয়ত আপনি বলতে পারেন যে আমি কৃষিকাজ পারি না, তা ঠিক আছে তবে শিখতে তো পারব। হ্যাঁ আপনি শিখতে পারেন, তবে কৃষকের ক্ষতি করে আপনার শেখার দরকার নেই। তাছাড়া কৃষিকে আপনি পেশা হিসেবে নেবেন না। নেওয়ারও পরিকল্পনা নেই। তারপরও আপনি শিখতে পারেন, তাতে কারো আপত্তি নেই। কিন্তু আপনি কৃষকের কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে আপনাকে কেউ কৃষিকাজ শিখতে বলেনি। সম্মুখ যুদ্ধ চলাকালে কোনো যোদ্ধাকে যুদ্ধ থামিয়ে দিয়ে তাকে আপনি বলতে পারবেন না যে বন্দুকের গুলি ভরা শিখিয়ে দেন। যুদ্ধ শেখার অন্য জায়গা রয়েছে। আপনাকে গুলি ভরা শেখাতে শেখাতে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে।

কৃষককে সহযোগিতা করতে চাইলে আরো অনেক উপায় আছে। তাদের সন্তানদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করতে পারেন। আমাদের দেশের কৃষকরা আগাগোড়াই নানাভাবে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পান না। কৃষকের ভালো চাইলে এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন। তাদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার দাবি তুলতে পারেন। যার যে কাজ তার সেই কাজই করা উচিত। বিশ্ব এখন করোনাভাইরাসের আক্রমণে দিশেহারা। কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে পারেন। তারা যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হন, সে বিষয়ে সচেতন করতে পারেন।

করোনা পরবর্তী সংকট মোকাবিলা করতে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য সরকার কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷ জমি পতিত না রাখতে অনুরোধ করেছে। এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করতে পারেন। কোনো জমি পতিত রাখা যাবে না, তা কৃষককে বোঝান। লকডাউনের সময় ও পরবর্তী সময়েও কৃষি শ্রমিক পর্যাপ্ত পাওয়া যাবে। এখন কৃষকের প্রয়োজন কী সেটা জানার চেষ্টা করেন। কৃষকের প্রয়োজন ও আপনার সমর্থন অনুযায়ী তাদের সহোযোগিতা করেন।

মো. আকরাম হোসেন: স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম