ধানের চেয়ে চারগুণ লাভ সুপারি চাষে
সুপারি একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। ঝালকাঠিতে পতিত জমিতে সুপারি চাষ করে ভাগ্য বদল করেছে কয়েক হাজার মানুষ। অল্প শ্রম ও কম পয়সা খরচে বেশি লাভ হওয়ায় সুপারি চাষে ঝুঁকছে তারা।
জেলার বিভিন্ন হাটগুলোতে সুপারি বেচাকেনা জমে উঠেছে। এখানকার সুপারি রফতানি হয় দেশের বাইরেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝালকাঠির বিভিন্ন হাটে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে এসে প্রতিদিন শত শত চাষি ও পাইকাররা ভিড় জমাচ্ছে। বেচাকেনা হচ্ছে লাখ লাখ টাকার সুপারি। নভেম্বর মাস থেকে সুপারি পাকা শুরু হয়, চলে পুরো জানুয়ারি মাস পর্যন্ত।
পান বিলাসীদের কাছে সুপারি একটি অতি প্রয়োজনীয় ফল। এক সময় ফিলিপাইন ও নিকোবর থেকে আমদানিকৃত এশীয় পামগাছ এরিকা কাটচু জাতের এ ফলটি বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় আবাদ হলেও বরিশাল বিভাগে বেশি জন্মে।
কৃষকরা জানায়, একবার এ গাছ লাগালে তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই ৩০-৩৫ বছর ফলন দেয়। আর আয় হয় ধানের চেয়ে চারগুণ বেশি। তাই এ অঞ্চলের কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে ।
তাছাড়া সুপারি বাগানে লেবু, হলুদসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা যায়। তাইতো ঝালকাঠির কয়েক হাজার পরিবার সুপারি চাষ করে তাদের ভাগ্য বদল করেছে। কৃষি বিভাগও তাদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। জেলার চার উপজেলার মধ্যে রাজাপুরে সুপারির বাগান রয়েছে বেশি। বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় সুপারির হাট এখানে।
রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া সুপারির হাটে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়। পাইকাররা এখান থেকে সুপারি কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানের মজুদদারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে। এমনকি ভারতেও রফতানি করা হয় এখানের সুপারি। প্রতি শতক (স্থানীয় ভাবে ১০০ ঘা বলে। এতে ১০০০টি সুপারি থাকে ) সুপারি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
সাতুরিয়া সুপারি হাটে আসা বিক্রেতা আলী হোসেন জানান, এই হাটটি দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট। এখানে প্রতি দিন কয়েক লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করা হয়। প্রায় তিন মাস চলে সুপারির মৌসুম।
কৃষক আলতাফ হোসেন জানান, ধান বা অন্য ফসলের চেয়ে সুপারি চাষ করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তাই এখন অনেকেই ঝুঁকছে সুপারি চাষে।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, ‘লাভজনক বিধায় এ ফসলটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ অন্যান্য সহযোগিতা করে আসছি। এ জেলায় সুপারি চাষ আরও বেশি সম্প্রসারিত হবে।’