মেয়ের পুড়ে যাওয়া পাঠ্যপুস্তকে স্মৃতি খুঁজছেন শাহনাজ

  • স্টাফ করেসপেন্ডন্ট, চট্টগ্রাম, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পুড়ে যাওয়া বইয়ের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: বার্তা২৪.কম

পুড়ে যাওয়া বইয়ের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: বার্তা২৪.কম

যত দূর চোখ যায়, চারদিকে কেবল আগুনে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ। সমস্ত এলাকা জুড়েই আগুনে পোড়া গন্ধ। এর মাঝেই শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে অসহায় ও উৎসুক মানুষজন।

চোখের সামনে শেষ আশ্রয়স্থলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব মানুষের চোখে-মুখে এখন শুধুই অন্ধকার। তিলে তিলে গড়ে তোলা সম্বলের অবশিষ্ট অংশের মাঝে কেউ খুঁজে ফিরছেন জ্বালানি, কেউবা খুঁজে ফিরছেন টুকরো স্মৃতি।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের চাক্তাই ভেড়ামারা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় তিন শতাধিক বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। একইসাথে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে এতগুলো পরিবারের লালিত স্বপ্ন।

নিজ বসতভিটায় পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া মেয়ের পাঠ্যপুস্তক বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছিলেন মা শাহনাজ বেগম। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই শাহনাজ জানান, চেয়ার-টেবিল, বইসহ কোনো আসবাবপত্রই আর অবশিষ্ট নেই। সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নগরীর পাথরঘাটা প্রাইমারি স্কুলের ষষ্ট শ্রেণির ছাত্রী শাহনাজের মেয়ে সালমা বেগম। রাতের অগ্নিকাণ্ডে তার বই-খাতা, জামা পুড়ে গেছে। রক্ষা করা পায়নি কিছুই। তবে আগুনে মেয়ের কোন ক্ষতি হয়নি বলে জানান শাহনাজ।

বিগত ২০ বছর ধরে ভেড়ামারা বস্তিতে স্বামী নীল মিয়ার সঙ্গে বস্তির একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন শাহনাজ বেগম। মুদি দোকানদার নীল মিয়া জানান, আগুনের তীব্রতা এতোটাই বেশি ছিল যে একটি কাপড় পর্যন্ত বের করতে পারেনি। কোনমতে ঘর ছেড়ে ব্রিজে গিয়ে রক্ষা পেয়েছে তারা।

শাহনাজের মতো এমন অনেকেই শেষ অবলম্বনটুকু হারিয়ে এখন নিঃস্ব। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে গভীর রাতের ভয়াল আগুনের ছাই হয়ে যায় তাদের স্বপ্ন।

এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক জসিম উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে জানান, এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় লোকেরা চোরের ভয়ে ঘর তালা মেরে রাখতো। রাতে আগুন লাগার পরে অনেকে চাবি খুঁজতে গিয়ে বের হতে দেরি করেছে। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা চুলা ও বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট ধারণা করছি। এর পাশাপাশি গঠিত তদন্ত কমিটিতে অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে’।