নীলফামারী পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ
নীলফামারী জেলা পরিষদ ও পৌরসভার যৌথ অংশীদারি চুক্তির ভিত্তিতে ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয় পৌর সুপার মার্কেট। জেলা পরিষদের ৮২ শতক জমিতে এই মার্কেট নির্মাণ শেষে বেশ কয়েকটি শর্ত ভঙ্গ করেছেন বলে পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলা পরিষদের সাথে করা চুক্তি না মেনেই মার্কেটের নামকরণ করেছেন তিনি। এমনকি ইচ্ছে মতো দোকান বরাদ্দও করেছেন। শর্তনামা উপেক্ষা করে আদায় করা দোকানের ভাড়ার ২০ শতাংশ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে জেলা পরিষদকে।
দ্বিতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত মার্কেটটির চুক্তিতে বলা হয়েছিল, এর নামকরণ হবে ‘জেলা পরিষদ পৌরসভা মার্কেট'। কিন্তু চুক্তি ভঙ্গ করে তা করা হয়েছে ‘নীলফামারী পৌর সুপার মার্কেট'।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালের ১৫ জুন তৎকালীন রংপুর জেলা বোর্ডের সাধারণ অধিবেশনে, যে সমস্ত রাস্তা বা রাস্তার অংশ মিউনিসিপ্যাল বা টাউন কমিটির এলাকার মধ্যে অবস্থিত তা সংরক্ষণের জন্য মিউনিসিপ্যাল ও টাউন কমিটির কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেই সূত্রে নীলফামারী জেলা পরিষদের কাছে শহর মৌজার বেশ কিছু জমি পৌরসভায় হস্তান্তর করার দাবি জানান মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ।
এর প্রেক্ষিতে ‘নীলফামারী পৌরসভার অভ্যন্তরে জেলা পরিষদের রাস্তা জমি এবং জমিতে যা গাছপালা আছে তার মালিকানা জেলা পরিষদের অক্ষুণ্ন রয়েছে' মর্মে স্থানীয় সরকার বিভাগকে লিখিত প্রতিবেদন দেয় জেলা প্রশাসন।
জেলা পরিষদের বিভিন্ন দাগে ২০৯ শতাংশ জমি হস্তান্তরের অনুধোর জানিয়ে ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগকে আবারও পত্র দেন পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ। পরে ২০১২ সালে ২৯ জুলাই, উভয় কর্তৃপক্ষকে যৌথভাবে আলোচনা করে কোনো স্থাপনা তৈরি করে আয়ের উৎস সৃষ্টি করার পরামর্শ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ।
পরবর্তীতে জেলা পরিষদের কিছু জায়গা লিজ হিসেবে নিতে স্থানীয় সরকারের কাছে পত্র পাঠায় পৌরসভা। কিন্তু এ নিয়ে দুই পক্ষের দরদাম চললেও পরে তা ভেস্তে যায়। ২০১৪ সালের ১১ অগাষ্ট জেলা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়, চুক্তি না করে পৌরসভা বহুতল কোনো মার্কেট নির্মাণ করতে পারবে না।
এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদকে ২০ শতাংশ ও নীলফামারী পৌরসভাকে ৮০ শতাংশ হিস্যা বণ্টনের শর্ত রেখে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
কিন্তু মার্কেট নির্মাণের পর চুক্তি ভঙ্গ করলে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মেয়রের কাছে ব্যাখ্যা চান জেলা পরিষদের তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুল আলম। তার উত্তর দেওয়া তো দূরে থাক, মার্কেটের দোকানগুলো ভাড়া ও বরাদ্দের তালিকাও জেলা পরিষদে পাঠায়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। এমনকি, মার্কেট থেকে অর্জিত আয়ের ২০ শতাংশের কিছুই এ পর্যন্ত জেলা পরিষদকে দেওয়া হয়নি।
প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল উদ্বোধন হওয়া এই মার্কেটে এক বছর যেতে না যেতেই ফাটল ধরে। ছাদ দিয়ে পানিও পড়ে। ভারী কোনো যানবাহন রাস্তায় চলাচল করলেই দোকানের দেয়াল কেপে ওঠে!
এসব বিষয়ে জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রশাসক ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক জানান, নীলফামারী জেলা পরিষদ ও পৌরসভার আয় বর্ধনে দুইটি মার্কেট নির্মাণে যে যৌথ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, তার ৯৯ শতাংশ বরখেলাপ করেছেন পৌর মেয়র। বেআইনিভাবে জোরপূর্বক চুক্তি ভঙ্গ করেছেন তিনি। আমি প্রশাসক থাকাকালে কয়েক দফা নোটিশ পাঠিয়েও এর কোনো সদুত্তর পাইনি। চুক্তি অনুযায়ী কোনো অর্থও পরিশোধ করেনি পৌরসভা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, রংপুর জেলা বোর্ড এই জমিগুলো পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করেছিল। দীর্ঘদিন ধরে এই জমিগুলো নীলফামারী পৌরসভা সংরক্ষণ করে আসছে। যেহেতু গেজেট নেই, সেহেতু জেলা পরিষদ ওই সব জমি দাবি করছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে মামলা চলমান আছে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল কবীর বলেন, পৌরসভা যে জমিগুলো দাবি করছে, তাদের সঠিক কোনো কাগজ পত্র নেই। সিএস রেকর্ড, আরএস রেকর্ড জেলা পরিষদের নামে। তাছাড়া জমি দাবি করে যে পত্রটি দাখিল করেছে, তা তৈরি করা। হাইকোর্টে জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা উভয়ের সমস্ত কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত দেবেন।