হাওরে ফসল রক্ষার শপথে আসবে নতুন বছর
কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল থেকে: মৃত্যুশোক ও ফসলহানির আঘাতে বিস্তীর্ণ হাওর জনপদে বইছে হাহাকার। চৈত্রের শেষ দিনে (১৩ এপ্রিল) সমাগত নববর্ষের আনন্দ নেই কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনা, মিটামন ও অষ্টগ্রামে।
'শোক ও ফসলের ক্ষতির বিষয়গুলোকে বিবেচনা করে এবার হাওরের তিন উপজেলায় নববর্ষের আনন্দ উৎসব স্থগিত করা হয়েছে। তার বদলে মাঠে মাঠে ফসল রক্ষার শপথ নিয়ে নতুন বছরকে আবাহন করা হবে,' বললেন সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।
বার্তা২৪.কমকে এমপি তৌফিক বলেন, 'বনানীর এফআর টাওয়ারে হাওরের সন্তান অগ্নিনায়ক সোহেল রানার মৃত্যুতে আমরা শোকস্তব্ধ। ইটনা উপজেলার চৌগাঙ্গা গ্রামের কেরুয়ালা গ্রামের শোক ছড়িয়ে গেছে জলমগ্ন হাওর জনপদে। আমি বাংলা বছরের শেষ দিনটি কাটাচ্ছি শোকার্ত পরিবার ও গ্রামবাসীর সঙ্গে।'
অগ্নিবীর সোহেল রানার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ছাড়াও চাকরির ব্যবস্থা করার কথা জানিয়ে এমপি তৌফিক বলেন, 'সাম্প্রতিক ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে হাওরাঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নববর্ষের আনন্দ-উৎসব করার মতো পরিস্থিতিতে নেই মানুষ। ফসল রক্ষার কাজেই সবাই ব্যস্ত।'
সরেজমিন তথ্যে জানা যায়, উপর্যুপরি শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে হাওরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ-পালা ছাড়াও মাঠে মাঠে আগাম জাতের বোরো ব্রি-২৮ ধানের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কয়েক দিনের মধ্যে পুরোদমে এ ধান কাটতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে ফসল রক্ষায় চিন্তিত এখন হাওরের কৃষকরা।
হাওরের কিছু কিছু মাঠে ফসল কাটতেও দেখা যাচ্ছে কৃষকদের। অনেকেই সদ্য রোপিত পাট চারার পরিচর্যায় ব্যস্ত। শিলাবৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড বীজতলা ও সবজির বাগান সংস্কারের চাষীদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে।
চলমান আবহাওয়ায় প্রতিদিনই সকালে কিংবা বিকালে বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে উত্তাল বাতাস ও বড় বড় শিলাখণ্ড। বিনা নোটিশে আকাশ কালো করে বইছে ঝড় ও বৃষ্টি। ফলে হাওরের জনগোষ্ঠী, যারা মূলত কৃষিজীবী, তারা ফসলের চিন্তায় সন্ত্রস্ত।
বিরূপ পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নববর্ষ উদযাপন করা সম্ভব না হলেও বৈশাখের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শেষ হলে হাওরে শুরু হবে সাংস্কৃতিক জাগরণ। গানের দেশের প্রাণের মানুষগুলো জলে, ডাঙায়, নৌকায় একতারা, দোতারা হাতে মেতে উঠবেন লোকজ সঙ্গীতের হৃদয় ছোঁয়া আবেশে। চলবে যাত্রা, পালা গান, বাউল ও দেশজ সঙ্গীতের আসর।
ঐতিহ্য ও লোকাচার মেনে জমবে মেলা ও হাট। কিশোরগঞ্জের হাওর সংলগ্ন বৃহত্তর নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের শিল্পীরা দলবদ্ধভাবে নানা অনুষ্ঠানে আসা-যাওয়া করবেন। বৃহত্তর বাঙালি সংস্কৃতির এক অনবদ্য অংশ হয়ে জল ছলছল জনপদের মানুষগুলো প্রাণের উচ্ছ্বাসে মিলিত হবেন হাওর সংস্কৃতির বর্ণিল বিভা ও সৌরভে।