হারিয়ে যাচ্ছে আভিজাত্যের প্রতীক গোলাঘর
সাতক্ষীরার গ্রাম থেকে ধানের গোলাঘর হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধির প্রতীক গোলাঘর এখন আর চোখে পড়ে না। ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, সাগর পাড়ের জেলা সাতক্ষীরা বলে একটি সুনাম রয়েছে। ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এ জেলার ৭৮টি ইউনিয়নের ১৪২১টি গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়িতে দেখা যেত ধানের গোলা। তবে কালের বিবর্তনে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না ধানের গোলাঘর।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মেল্লেকপাড়া গ্রামের নজরউদ্দিন সরদার (৭০) বলেন, ‘আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সাতক্ষীরায় ইরি-বোরো চাষ শুরু হয়। এর আগে জেলার বিলগুলো ছিল এক ফসলি। আমন ছাড়া আর কোনো ধান হতো না। তবে উঁচু জমিতে আউশ ধান হতো। তখন মানুষের পুকুরভরা মাছ, গোলাভরা ধান আর গোয়ালভরা গরু ছিল। এখন সেই বিলগুলোতে তিন ফসল ফলে। আমনের পর ইরি-বোরো। বোরো ধান কাটার পর আমন রোপণের আগে আরও একবার ফসল ফলায় অনেকে। কিন্তু সেই গোলাঘর আর নেই।
ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের বড়খামার গ্রামের ৯৩ বছর বয়সী গিয়াস উদ্দিন সানাও বলেন একই কথা। তিনি জানান, আগে গোলাঘরের সংখ্যা দেখে মানুষ ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিতেন। যার বাড়িতে যত বেশি গোলাঘর ছিল তিনি ততবেশি অভিজাত ছিলেন। গোলাঘর ছিল আভিজাত্য আর সমৃদ্ধির প্রতীক। একেকটি গোলায় ৬০ থেকে ১৫০ বস্তা (১ বস্তায় ৬০ কেজি) ধান রাখা যেত।
তিনি আরও জানান, গোলাঘরে শুধু ধান নয়, ডাল, গম, সুপারিসহ বিভিন্ন ফসল রাখা হতো। জমিদার বাড়িতে সারি সারি ভাবে সাজানো ছিল গোলাঘর। সেই জমিদারি আর নেই। তবে কালের সাক্ষী হয়ে আজও আভিজাত্যের প্রতীক গোলাঘর দেখা যায় দু'একজনের বাড়িতে। বাঁশের চটা, বেত আর কাতা (নারিকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি সুতা) দিয়ে তৈরি গোলাকৃতির এ ঘর গোলপাতা, নাড়া (ধানগাছ) ও টিন দিয়ে ছাওয়া হতো।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আশরাফুজ্জামান জানান, এখন মধ্যসত্ত্বভোগী ফড়িয়াদের কারণে মানুষ ধানের গোলায় ধান রাখে না। ইট পাথরের তৈরি গুদামে রাখে ধান-চালসহ অন্যান্য পণ্য। যে কারণে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার সমৃদ্ধির প্রতীক গোলাঘর। এগুলো সংরক্ষণ করা না গেলে আগামী প্রজন্ম গোলাঘর দেখতে জাদুঘরে ছুটবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।