দুদকের অভিযান

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসে ১৮ কোটি টাকার দুর্নীতি

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সাতক্ষীরা, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সিভিল সার্জন অফিসে দুদকের হামলা, ছবি: বার্তা২৪

সিভিল সার্জন অফিসে দুদকের হামলা, ছবি: বার্তা২৪

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসে ১৮ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জানা গেছে, সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন সামগ্রী বাজার মূল্য থেকে পাঁচ-ছয় গুণ বেশি দামে ক্রয় করেন সিভিল সার্জনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুদুকের সহকারী পরিচালক মোঃ শাওন মিয়ার নেতৃত্বে দুদকের একটি টিম সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন। ওই টিমে ছিলেন, সহকারী পরিচালক তরুণ কান্তি, উপ-পরিচালক নীল কুমার ও এস আই শ্যামল চন্দ্র সেন। অভিযানের খবর জানতে পেরে স্টোর রুমের চাবি নিয়ে পালিয়ে গেছে স্টোরকিপার একেএম ফজলুল হক ওরফে ফজলু।

বিজ্ঞাপন

দুদক সূত্র জানায়, সাতক্ষীরায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হওয়া প্রায় ১৮ কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ওই বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে প্রাথমিকভাবে লুটপাটের সত্যতা পাওয়া গেছে।

অভিযানের ঘন্টাখানেকের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও করে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ। সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক এড. ফাহিমুল হক কিসলু এ সময় বলেন, ‘১৮ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ ক্রয়ে সরকারি বরাদ্দ নয়-ছয় করে পুরো টাকাই গায়েব করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্রয়কৃত যন্ত্রাংশের মধ্যে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন (৫০০এমএ) কোরিয়ান যার মূল্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্রয় মূল্য দেখানো হয়েছে, কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আড়াই কোটি টাকার এই মেশিনটির মূল্য সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা। এক্স-রে মেশিন (৩০০এমএ) ৭১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ক্রয় করা হয়েছে অথচ এই মেশিনটির বাজার দর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা, সিআর উইথ প্রিন্টার- মূল্য ৪৫ লক্ষ টাকা তালিকায় লিপিবদ্ধ। কিন্তু এর সর্বোচ্চ বাজার দর ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা।

এক্স-রে ফ্লিম অটো প্রোসেসর মূল্য ১৯ লাখ ১৮ হাজার টাকায় ক্রয় করা হয়েছে যার বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা, সি আর ক্যাসেট (১৪১৭) ক্রয় মূল্য ৪৮ লাখ টাকা, অথচ এর বাজার মূল্য মাত্র ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সিআর ক্যাসেট (১৪১৪) ক্রয় মূল্য ৪৮ লাখ ৩ হাজার টাকা, অথচ এর বাজার মূল্য ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা।

পোর্ট এ্যাবল এক্স-রে মেশিন ক্রয় মূল্য ৩২ লাখ ৯০ হাজার টাকা, যার বাজার মূল্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। সি-আরএম এক্স-রে মেশিন ক্রয় মূল্য ৯১ লাখ টাকা কিন্তু এই মেশিনটির বাজার মূল্য ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। আল্ট্রাসনো গ্রাফি মেশিন (২/৩) ক্রয় মূল্য ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এই মেশিনটির বাজার দর ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। কালার ডপলার আল্ট্রা সাউন্ড (ফোর ডি) ক্রয় মূল্য ১ কোটি ১২ লাখ টাকা, এই মেশিনটির বাজার দর ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকা।

ইসিজি মেশিন (১২ চ্যানেল) ক্রয় মূল্য ৪ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা। এই মেশিনটির বাজার মূল্য বর্তমানে এক লাখ টাকার উপরে বিক্রি করা হচ্ছে। বেড সাইড মনিটর ক্রয় মূল্য ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা। এই মেশিনটির বাজার মূল্য ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। আইসিইউ ভেনটিলেটর মেশিন ক্রয় মূল্য ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই মেশিনটির বাজার মূল্য ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘মজাদার বিষয়, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় এই মেশিন ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই।’

গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বরাদ্দের ১৮ কোটি টাকার পুরোটাই লুটপাটের চেষ্টা করা হয়। ইতোমধ্যে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে বিগত বছরের ২৮ জুন ৭ কোটি ৮১ লাখ ৭১ হাজার ৮৭৮ টাকা ও ৩০ অক্টোবর ২০১৮ সালে ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা দুটি চেকের বিপরীতে বিল প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক এড. ফাহিমুল হক।