বৃষ্টি হলে লক্ষ্মীপুরে ফসল ডোবার শঙ্কায় কৃষকেরা
প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এ অবস্থায় বৃষ্টির অপেক্ষা প্রায় সবার। কিন্তু বৃষ্টি হলেই লক্ষ্মীপুরে ফসল ডুবে যাবে, এমন আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। বৃষ্টি হলে অন্ততপক্ষে ক্ষেতের পাকা সয়াবিন ও ধানসহ রবি মৌসুমের ফসল নষ্ট হবে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে, যেকোনো সময় ধেয়ে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড় 'ফোনি'। মাঝে মাঝেই প্রবল দক্ষিণা বাতাস বইছে। এ অবস্থায় কৃষকদের দুশ্চিন্তা আরো বেড়েছে।
সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও গত কয়েকদিন ৩৬-৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। স্বস্তি পেতে সাধারণ মানুষ বৃষ্টি প্রার্থনা করলেও স্থানীয় কৃষকরা বলেছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্যমতে, এই গরমে তারাও বেশ অতিষ্ঠ। এর থেকে একটু স্বস্তি পেতে প্রয়োজন বৃষ্টির। তবে বৃষ্টি এলেই তাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে গরম সহ্য করলেও মাঠে থাকা পাকা স্বপ্নগুলো (ফসল) হারাতে চান না তারা। তারা চান, ফসলগুলো ভালোভাবে গোলায় তুলতে।
রবি মৌসুমে এ জেলায় সয়াবিন ও ধান বেশি আবাদ হয়েছে। জেলাব্যাপী আবাদি ফসলগুলো পাকতে শুরু করেছে। অনেক এলাকার চাষিরা ফসল কেটে ঘরেও তুলতে শুরু করেছেন। এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে ফসলগুলো পঁচেও যেতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, এবার রবি মৌসুমে জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগরে ৪৮ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়েছে। এবার প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলার পাঁচ উপজেলায় ২৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে নয় হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ১৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ধান আবাদ করা হয়। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৯৮ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন চাল। এছাড়াও জেলাব্যাপী মুগ, ফেলন, খেসারি, মরিচ ও বাদামসহ বিভিন্ন জাতের ফসল আবাদ করেছে চাষিরা।
সদর উপজেলার লাহারকান্দি, চরভূতা, চররমনী ও টুমচরের কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় ও শেষের দিকে লক্ষ্মীপুরে শিলাবৃষ্টি হওয়ার কারণে সয়াবিন গাছে ছড়া ও দানাগুলো ছোট হয়েছে। ক্ষেতে পানি জমে ফলনও ভালো হয়নি। ওই সময় শিলাবৃষ্টিতে ধানেও সমস্যা হয়েছে।
তারা বলেন, শিলাবৃষ্টির কারণে ধান ছিটায় পরিণত হয়েছে। বৃষ্টিতে শিলা না পড়লে এতো বেশি সমস্যা ছিল না। তবে এখন বৃষ্টি হলে আরো বেশি ক্ষতি হবে। এমনিতেও বিক্রি করতে গেলে ভালো দাম পাওয়া যায় না।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, সম্প্রতি শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষেতে আগাছা জমে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। একই কারণে সয়াবিন গাছে ছড়া কম ও ধানে ছিটা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন কৃষকও এসব বিষয় কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। তবে এখনো আবহাওয়া অনুকূলে আছে। এভাবে চললে কৃষক তাদের ফসলগুলো সুষ্ঠুভাবে ঘরে তুলতে পারবেন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘ফোনি’র প্রভাবে সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত