ফণীর প্রভাবে উত্তাল মেঘনা
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। শুক্রবার (৩ মে) দুপুরের পর থেকে মেঘনার পানি বাড়ছে বলে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কমলনগর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকায় গিয়ে নদী তীর এলাকা প্লাবিত হতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ২ ফুট পানির উচ্চতা বেড়েছে। নদীর ঢেউ এসে কূলে থাকা গাছ-গাছালির সঙ্গে আছড়ে পড়ছে।
এদিকে দুপুর ১২ টার দিকে সদরের চররুহিতা এলাকায় বাতাসের কারণে কয়েকটি গাছ উপড়ে পড়েছে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
জেলা সদরের মজু চৌধুরীর হাট লঞ্চঘাট, কমলনগর, রামগতি ও রায়পুরের বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, নদীতে পানির উচ্চতা বেড়ে চলেছে। ঢেউগুলোও তীব্র হয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার (১ মে) থেকে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল রুটের সকল নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এছাড়া শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে হালকা বাতাসও ছিল। তবে পুরো জেলা জুড়েই গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। সাইক্লোন শেল্টারে এখনো কোনো মানুষজন আসেনি। নদীর ভাঙনে ভিটে মাটি হারানো মানুষগুলো এখন খুব সাহসী হয়ে উঠেছে। প্রশাসন তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য বললেও তারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে না।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে লক্ষ্মীপুরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানোর কথা বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। মেঘনা নদী বেষ্টিত এ জেলা মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে চলছে মাইকিং। নদী থেকে চলে আসার জন্য জেলেদের অবহিত করতে স্বজনদের বলা হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ১০০টি সাইক্লোন শেল্টার ও উপকূলীয় এলাকার সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পাকা ভবন প্রস্তুত রয়েছে।
অপরদিকে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে এবং কক্সবাজার সমূদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সমুদ্রবন্দরের সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার (৩ মে) ভোররাত ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯০ কিলোমিটার, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর অথবা উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ৩ মে বিকেল নাগাদ ভারতের ওড়িশায় উপকূলে অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। খুলনা ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী’র অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারে এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।