মারা গেলেও নৌকা ছাড়বে না তারা

  • হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, লক্ষ্মীপুর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বেদে পরিবারগুলোর নৌকাতে জন্ম, বসবাস, বিয়ে ও মৃত্যু। তারা কখনো ডাঙায় থাকে না। তাদের একমাত্র সম্বল ওই নৌকা। তাই প্রচণ্ড রোদ-বৃষ্টি-ঝড়েও তারা নৌকা ছেড়ে কোথাও যায় না।

এদিকে প্রচণ্ড বেগে বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। এর তীব্রতা জেনেও নৌকা ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছে না লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট মেঘনা নদী এলাকায় বসবাসরত বেদে পরিবারগুলো। তাদের ভাষ্যমতে- ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেলেও তারা নৌকা ছেড়ে কোথাও যাবে না। অথচ ক্রমান্বয়ে মেঘনা নদীর পানির উচ্চতা বেড়েই চলেছে।

বিজ্ঞাপন

আশ্রয়ণ কেন্দ্রে গেলে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী দেওয়ার আশ্বাসের পরেও অজানা ভয়ে তারা নিজেদের নৌকা ছেড়ে যাবে না বলে জানিয়ে দেন। এজন্য উপজেলা প্রশাসন চেষ্টা করেও তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে পারেনি।

গোলাপ মাঝি নামে এক বেদে পরিবারের সদস্য বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন ও স্থানীয় চেয়ারম্যান আমাদেরকে নেওয়ার জন্য এসেছে। তারা আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু এই নৌকাই আমাদের একমাত্র সম্বল। ঘূর্ণিঝড়ে এটি চলে গেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো। জন্ম থেকেই আমরা নৌকাতে বসবাস করে আসছি। অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সহ্য করতে হয়েছে। তবুও নৌকা ছেড়ে যায়নি।’

বিজ্ঞাপন

বেদে পরিবারের সবার একই কথা। কেউই নৌকা ছেড়ে যাবে না। মৃত্যু হলেও তারা নৌকাতেই থাকবে।

স্থানীয় জেলে ইব্রাহিম ও শফিক মাঝি বলেন, ঝড়ে নৌকা ডুবে যাওয়ার ভয়ে কেউ যেতে চাইছে না। যেহেতু নৌকা তাদের একমাত্র সম্বল, তাই তারা নৌকাতেই থাকতে চায়। তারা চলে গেলে যদি নৌকা ডুবে কিংবা অন্য কোথাও ভেসে চলে যায়, তাহলে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবে। তবে ঝড় শুরু হলে হয়তো প্রাণ হারানোর ভয়ে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল জানান, নৌকায় বসবাসরত বেদে পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তারা যেতে রাজি হয়নি। নৌকা ছেড়ে তারা কোথাও যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

এর আগে দুপুরে ইউএনও শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাহমিদা মোস্তফা, নবনির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রহমত উল্যাহ বিপ্লব ও চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল মজুচৌধুরীর হাট মেঘনার উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন করেন।