ঘূর্ণিঝড় ফণী

মধ্যরাতে সাতক্ষীরায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি, ঝুঁকিতে বেড়িবাঁধ

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সাতক্ষীরা, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভাঙা বেড়িবাঁধ নির্শাণ করছেন শ্রমিকরা / ছবি: বার্তা২৪

ভাঙা বেড়িবাঁধ নির্শাণ করছেন শ্রমিকরা / ছবি: বার্তা২৪

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে মধ্য রাতেও সাতক্ষীরার আকাশে জমে আছে কালো মেঘ। প্রকৃতিতে গুমোট ভাব। থেমে থেমে হচ্ছে হালকা বৃষ্টি, তবে বেড়েছে বাতাসের গতিবেগ। একই সঙ্গে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো রয়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে।

শুক্রবার (৩ মে) দুপুর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। তবে সাতক্ষীরায় ফণীর আঘাত হানার তীব্র আকারের কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যায়নি। জোয়ারের পানি স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে ২-৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান উপকূল এলাকার মানুষ।

বিজ্ঞাপন

এমন পরিস্থিতিতে উপকূলীয় মানুষ বারবার স্মরণ করছেন ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আইলা ও ২০০৭ সালের সিডরের ভয়াবহ আঘাতের কথা। সাতক্ষীরার উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালীনি, মুন্সিগঞ্জ, রমজাননগর ও কাশিমাড়িসহ আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা ও শ্রীউলা এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ সুপার সাইক্লোন ফণী আতঙ্কে রয়েছেন। তবে রাত ১১টার দিকে বাতাসের বেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ আতঙ্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান উপকূলবাসী।

ইতোমধ্যে শ্যামনগর উপজেলার ১০৯টি এবং আশাশুনি উপজেলার ১০৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০ হাজর মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আবার ভিটের মায়া ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসেননি।

বিজ্ঞাপন

সাতক্ষীরা আহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বার্তা২৪.কম বলেন, ‘ঘুর্ণিঝড় ফণীর কারণে সাতক্ষীরায় ৭ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ফণী’র প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসে গতি বেগ বড়েছে। আগামীকালও অব্যাহত থাকবে এই ঝড়।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/04/1556914055620.jpg

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের এখানকার বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক। যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হতে পারে। আমাদের ইউনিয়নের মানুষ আতঙ্কে আছে। কেউ এখন আর বাড়িতে নেই। স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান করছে। সাইক্লোন শেল্টারে জায়গা না হওয়ায় অনেকে মানুষ রাস্তায় অবস্থান করছে। বাথরুমের সমস্যা আছে। আর উপজেলা প্রশাসন থেকে যে খাদ্য দেওয়া হয়েছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পরে তাদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।’

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৩৫ হাজার মানুষ ঝুঁকিতে আছে। ১০৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪ হাজার মানুষকে আনা হয়েছে। অনেক আসতে চাচ্ছেন না।’

শ্যামনগর উপজেরা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সুজন সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শ্যামনগর উপজেলার ১০৯টি ৩৪ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য পর্যপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই এলাকার অনেক মানুষ আছে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে চায় না। প্রাণহানি কমাতে তাদের গ্রাম পুলিশ দিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সকল মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়েছে।’

আবহাওয়া অফিসের সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারে মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় ফণী কিছুটা দুর্বল হয়ে ভারতের উপকূলীয় ওড়িশায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সকালের মধ্যে খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারে মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।