ফণীর প্রভাবে সাতক্ষীরায় আম চাষীদের সর্বনাশ!

  • এসএম শহীদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সাতক্ষীরা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফণীর প্রভাবে ঝরে যাওয়া আম, ছবি: বার্তা২৪.কম

ফণীর প্রভাবে ঝরে যাওয়া আম, ছবি: বার্তা২৪.কম

বাগানের গাছে গাছে ঝুলছিলো থোকায় থোকায় আম। ডালে বসে শীষ দিতো দোয়েল। বাগান মালিক শাহাজান আলী গাছের আম দেখে বুনতেন স্বপ্নের জাল। কিন্তু তার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ফণী।

শুক্রবার (৩ মে) রাতে ফণীর আঘাতে তার ২৫টি বাগানের ২০ শতাংশ আম ঝরে গেছে। আম চাষী শাহাজান আলী জানান, প্রায় ৩০ লাখ টাকায় তিনি কিনেছিলেন ২৫টি ছোট-বড় আম বাগান। বছরের শুরুতেই ঝড়ের আতঙ্কে ছিলেন। আমের মুকুল বের হওয়ার পর থেকে কয়েকটি ঝড় বয়ে গেছে। তারপরও আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তার সে আশা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ফণী।

বিজ্ঞাপন

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের ফয়জুল্যাপুর গ্রামে শাহাজান আলীর বাড়ি। এ অবস্থা শুধু আম চাষী শাহাজান আলীর একার নয়, জেলার আম প্রায় অধিকাংশ আম চাষীর কপাল পুড়েছে ঘূর্ণিঝড় ফণী।

একই ইউনিয়নের দক্ষিণ ফিংড়ী গ্রামের মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে আম বাগান করেছেন। তার বাগানেও ফণীর আঘাতে ঝরেছে প্রায় ২০ শতাংশ আম। একই কথা বলেন, পুরাতন সাতক্ষীরার নূরুল ইসলাম, ধুলিহরের আইয়ূব আলীসহ অনেকেই। তারা প্রত্যেক্যেই বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে আগাম বাগান কিনে পরিচর্যা করেছিলেন। এসব ব্যবসায়ী ও মালিকরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আমের ব্যবসা করেন। বিদেশেও তাদের পাঠানো আমের বেশ সুনাম আছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে সাতক্ষীরার আম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে আম গাছের ডাল ভেঙেছে এবং অনেক আম ঝরে গেছে। এতে করে জেলার আম চাষীদের মাথায় হাত উঠেছে।অনেক চাষী জানিয়েছেন তাদের খরচ উঠবে না।

বিজ্ঞাপন

কৃষি বিভাগের দাবি, ফণীর কারণে যে আমগুলো থাকার কথা কিন্তু সেগুলো পড়ে গেছে। সে কারণে আম রফতানিতে কিছুটা প্রভাব ফেলবে। তারপরও এ বছর আম রফতানি হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যে জেলার প্রায় ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৯৮৯টি বাগানে আম গাছ পরিচর্যা করা হচ্ছে।’

আম চাষী শাহাজান আলী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে আমার ২৫টি বাগানের প্রায় ৩৫০ মণ ঝরে গেছে।’ তিনি বলেন, একদিন আগে যে আম ১২০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি সেই আম আজ ২০০ টাকায় মণ বিক্রি করতে হয়েছে। ঝড়ে পড়া অধিকাংশ আম ফেটে যাওয়ায় কেউ কিনতে চায় না। আচার ও চাটনি তৈরি করার জন্য এ আম কেনেন সৌখিন ক্রেতারা।

সাতক্ষীরা বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রওশন আলম জানান, কাঁচা আমে ভরে গেছে জেলার শহরের সবচেয়ে বড় মোকাম সুলতানপুর বড় বাজার। দৈনিক এ বাজার থেকে ৩ থেকে ৪ ট্রাক আম রাজধানী ঢাকার বাজারে সরবরাহ করা হয়। ঝড়ে পড়া আমের দাম মণপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০টাকা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমজাদ হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝর ফণীর আঘাতে জেলের অনেক গাছের আম ঝরে পড়েছে। যে আমগুলো থাকার কথা ছিলো সেই আমগুলো পড়ে গেছে। তারপরও খুব একটা সমস্যা হবে না।

জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৬শ’ কাঁচা ঘর-বাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া জেলায় ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমির এবং শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের কাছে আমের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানতে চেয়েছি। সেটা জানার পর সরকারের কৃষি ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জানিয়ে দেব। গত কয়েক বছর সাতক্ষীরার আম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। আশা করছি এবারও রফতানি হবে।