ডাকাতিয়া নদীতে ১৫ ড্রেজারে অবৈধ বালু উত্তোলন
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বাংগড্ডা ইউপির হেসিয়ারা, নুরপুর, বেরী ও দাড়াচৌ গ্রামের ডাকাতিয়া নদীর অংশে প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে ১৫টি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন প্রভাবশালীরা।
গত এক মাস ধরে ডাকাতিয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আশেপাশের ফসলি জমি, পুকুর-ডোবা ভরাটসহ বিভিন্ন ইট ভাটায় এ বালু বিক্রি হরা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। এর মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে নদীর পাড়ের বসবাসরত মানুষের বসত বাড়ি, কবরস্থান, পুকুর ও গ্রামীণ সড়ক। ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত এক মাস ধরে ডাকাতিয়া নদীতে প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে ১৫টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন চলন কলেজের প্রভাষক আওয়ামী লীগ নেতা আশিকুর রহমান, নুরপুর গ্রামের ইউনুস, স্থানীয় মেম্বার জসিম ও হাজারীপাড়া গ্রামের রবিউল। এর মধ্যে আশিকুর রহমানের রয়েছে চারটি ড্রেজার।
বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ বিধি ৪ এর ‘খ’তে বলা হয়েছে, সেতু কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাধঁ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেল লাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও রেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটার হলে বা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কতৃক নির্ধারিত সীমানার মধ্যে হলে এবং ‘গ’তে বলা হয়েছে, বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিপণনের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের শিকার হতে পারে এ ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শাস্তির বিষয়ে বিধি ১৫ এক এর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই আইনের ধারা ৪-এ বর্ণিত কতিপয় ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোন বিধান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করলে বা এই আইন বা অন্য কোনো বিধান লংঘন করলে অথবা বালু বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কতৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করিলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সকিউটিভ বডি) বা তাহাদের সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদণ্ড সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা হতে ১০ (দশ) লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নদীর পাড়ে বসবাসরত একাধিক ব্যক্তি বার্তা২৪.কমকে বলেন, যেভাবে প্রভাবশালীরা নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলছেন আগামী কিছু দিনের ভেতর ওই নদীর পাড়ের বাড়ি ঘর নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। আমরা ভয়ে কোনো কথা বলছি না। বললে তারা হুমকি ধমকি দেয় তারা।
এ বিষয়ে চলন কলেজের প্রভাষক আওয়ামী লীগ নেতা আশিকুর রহমানের মোবাইল ফোনে বার বার কল করেও তার যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
তবে নুরপুর গ্রামের ইউনুস নামে এক ব্যক্তি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ডাকাতিয়া নদীর এ অংশে আমাদের জায়গা থেকে বালু তুলছি। কে কি বললো তা জানার দরকার নাই।’
এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. সোহেল রানা বার্তা২৪.কমকে জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।